ভুল আছে আর্জেন্টিনার দল নির্বাচনে?

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

সিরি ‘আ’তে ৩৩ ম্যাচে ২৯ গোল করা স্ট্রাইকার মাউরো ইকার্দিকে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ দল রাখেন নি কোচ হোর্হে সাম্পাওলি। দল নির্বাচনে কি ভুল করলেন তিনি?

বিশ্বকাপের দল ঘোষণা হবে আর তা নিয়ে হইচই হবে না, সে কি হয়! ব্রাজিলের বিশ্বকাপ দল নিয়ে বিতর্ক একবার তো দেশের প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত চলে গিয়েছিল। তাতেও লাভ হয়নি। জায়গা পাননি রোমারিও। এবার যেমন আর্জেন্টিনায় শোরগোল শুরু হয়ে গেছে মাউরো ইকার্দিকে দলে না নেওয়ায়। যদিও রোমারিও মতো এই আলোচনা তর্কে-বিতর্কেই সার। বিশ্বকাপ দল বেছে নেওয়ার এখতিয়ার কেবল কোচের। আর্জেন্টিনা কোচ মনে করেছেন, এই দলে ইকার্দির জায়গা নেই। ব্যস, খেল খতম!

কিন্তু ইকার্দিকে না নিয়ে কি সত্যিই কোনো ভুল করলেন হোর্হে সাম্পাওলি? আর্জেন্টিনা কোচ আস্থা রেখেছেন সার্জিও আগুয়েরো আর গঞ্জালো হিগুয়েইনের ওপরে। আগুয়েরো আধা ফিট থেকে বিশ্বকাপে যাচ্ছেন কি না, এই প্রশ্ন থাকছে। আর হিগুয়েইনকে তো আর্জেন্টিনা সমর্থকেরাই চান না। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে এই স্ট্রাইকারের একের পর এক ব্যর্থতায় সমর্থকেরা ত্যক্ত বিরক্ত।

এই অবস্থায় ইতালিয়ান লিগ সিরি ‘আ’তে ৩৩ ম্যাচে ২৯ গোল একজন স্ট্রাইকারকে কোন হিসাবে বাদ রাখলেন সাম্পাওলি? আগুয়েরো আর হিগুয়েইনের ওপর বাজি রাখাটা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে না কি?

গত মার্চ থেকে আগুয়েরো হাঁটুর চোট নিয়ে প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলের বাইরে। ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে এবার দুর্দান্ত খেলেছেন বটে, কিন্তু টানা এতগুলো মাস ফুটবলের বাইরে থাকা, হাঁটুতে অস্ত্রোপচার করা; প্রশ্নটা তুলে দেয়, আগুয়েরো বিশ্বকাপে নিজের সেরা ছন্দে কি থাকবেন? আগুয়েরো নিজে অবশ্য মনে করেন, বিশ্বকাপের আগেই নিজের সেরা ফিটনেস ফিরে পাবেন। তবে এতগুলো দিন মাঠের বাইরে থাকলে যেকোনো খেলোয়াড়ের ছন্দে ফিরতে সময় তো লাগবেই।

গত বিশ্বকাপের আগেও এমন চোটে ভুগছিলেন আগুয়েরো। এর পুরো প্রভাব দেখা গেছে ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে। ৫ ম্যাচ খেলে একটিও গোল করতে পারেননি। এবারের আগুয়েরো চার বছর আগুয়েরোর তুলনায় অনেক বেশি পরিণত, পরিপূর্ণ। তবে চার বছর আগের দুঃস্মৃতি মুছে ফেলতে এবার আগুয়েরোকে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জ কাঁধে তুলে নিতে হবে।

সাম্পাওলি খোলাসা করে না বললেও এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে, বিশ্বকাপে আগুয়েরো হবেন তাঁর প্রথম পছন্দের স্ট্রাইকার। হিগুয়েইন দ্বিতীয় পছন্দ। একমাত্র আউট অ্যান্ড আউট স্ট্রাইকার নিয়ে একাদশ সাজালে হিগুয়েইনকে বেঞ্চে বসে থাকতে হবে। হয়তো সুযোগ পাবেন বদলি হিসেবে। সমস্যা হলো, আর্জেন্টিনা পুরোদস্তুর স্ট্রাইকার স্কোয়াডে রেখেছেই দুজনকে। আগুয়েরো কোনো কারণে জ্বলে উঠতে না পারলে হিগুয়েইন হবেন শেষ ভরসা। কিন্তু হিগুয়েইন কি ভরসা রাখার মতো?

বড় ম্যাচে হিগুয়েইনের সামর্থ্য নিয়ে এমনিতেই প্রশ্ন আছে। চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচ নকআউট পর্বে গড়ালেই হিগুয়েইন ফ্যাকাসে হতে শুরু করেন। বড় ম্যাচের চাপ যে তিনি নিতে পারেন না, এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ হয়ে আছে গত বিশ্বকাপ ফাইনালটিই। শীতল-স্নায়ুর জার্মানরা ভুল এমনিতেই করে খুব কম। আর সেবার হিগুয়েইন জার্মান-রক্ষণের ভুলে গোলরক্ষককে সামনে একা পেয়ে গিয়েছিলেন। সেখান থেকেও গোল করতে পারেননি।

শুধু তা-ই নয়, পরের দুটি কোপা আমেরিকাতেও হিগুয়েইন ছিলেন যাচ্ছেতাই। আর সেই চাপেই হিগুয়েইন আরও যেন ফ্যাকাসে হয়ে গেছেন। জাতীয় দলের হয়ে তাঁর সর্বশেষ গোল ২০১৬ সালের অক্টোবরে। জাতীয় দলের হয়ে সর্বশেষ টানা সাত ম্যাচে কোনো গোল নেই। হিগুয়েইন এবার জুভেন্টাসের হয়েও ছিলেন অধারাবাহিক।

এই বিবেচনায় ইন্টার মিলান অধিনায়ক ইকার্দিকে দলে না রাখা মস্ত বড় ভুল তো অবশ্যই। বিশেষ করে ইকার্দি যেখানে হাওয়ায় খেলতেও দক্ষ। আর্জেন্টিনার বেশির ভাগ কর্নার যে বৃথা যায়, এর কারণ একজন দুর্দান্ত হেডারে দক্ষ খেলোয়াড়ের অভাব। সেটিও ইকার্দি পূরণ করে দিতে পারতেন। সাম্পাওলি অবশ্য ইকার্দিকে রাখবেন না, এই আভাস আগেই দিয়ে রেখেছিলেন। আর্জেন্টিনার সর্ব সাম্প্রতিক সব কোচের মতো তিনিও মনে করেন, আর্জেন্টিনার খেলার ধরনে সঙ্গে কিছুতেই মেলে না ইকার্দির ধরন। তবে ইকার্দি দাবি করতেই পারেন, যথেষ্ট সুযোগ জাতীয় দলেই কি তিনি পেয়েছেন? ৪ বছরে খেলেছেন মোটে ৫টি ম্যাচ!

সাম্পাওলির আরেকটি ঢাল হতে পারে, আর্জেন্টিনার একাদশ তিনি এমনভাবে সাজাতে চান, যেখানে গোলের জন্য একমাত্র স্ট্রাইকারের ওপর নির্ভর করতে হবে না। পেছনে লিওনেল মেসি আছেন, পাওলো দিবালা আছেন। বোকা জুনিয়র্সের উঠতি তারকা ক্রিস্তিয়ান পাভোন আছেন। স্পেনের বিপক্ষে ৬-১ গোলের লজ্জার সেই রাতেও আলো ছড়ানো ম্যাক্সি মেজা আছেন। এবার সবাই জাল খুঁজে নিতে দক্ষ। সবচেয়ে বড় কথা, দ্বিতীয় স্ট্রাইকারের ভ’মিকায় থাকা মেসির ওপরেই নির্ভর করবে আর্জেন্টিনা।

এখন এই নির্ভরতা গতবারের মতো এবারও ভোগাবে কি না, তা-ই দেখার। মেসিকে যে মেসির মতো খেলতে দিতে আগুয়েরো-হিগুয়েইনকেও ঝলসে ওঠা দরকার। গোল না করুন, অন্তত পায়ে বল গেলে হিগুয়েন-আগুয়েরোকে সামলে যেন দু-তিনজন ডিফেন্ডার ছুটে আসে, আর মেসির সামনে ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়, এটি তৈরি করার দায়িত্ব থাকবে দুজনের ওপর।

কিন্তু এই দুজনের একজন আধা ফিট, অন্যজন বারবার আর্জেন্টিনাকে করেছেন হতাশ! ইকার্দিকে দলে না রাখা আর্জেন্টিনার জন্য কত বড় ভুল, সেটি হয়তো বোঝা যাবে শিগগিরই।