নায়ক আসিফ ও তাঁর স্ত্রীর পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

স্ত্রী শামীমা আক্তারের সঙ্গে আপসের শর্তে ‘ঘাসফুল’ ছবির নায়ক আসিফকে ২৭ মে পর্যন্ত জামিন দিয়েছেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৬-এর বিচারক শহীদুল ইসলাম। আজ রোববার সকালে হাজির হওয়ার পর এই নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

আজ দুপুরে মডেল ও অভিনয়শিল্পী কাজী আসিফ রহমান জানান, তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। তাঁর স্ত্রী শামীমা আক্তার এর আগে আরও দুবার বিয়ে করেছেন। তিনি কানাডায় নাগরিকত্ব দেওয়ার শর্তে এই বিয়েগুলো করেছিলেন। আর তা আসিফের কাছে গোপন করেন। পরে কানাডার দূতাবাস থেকে এসব তথ্য জানতে পেরেছেন আসিফ। আর আসিফের সঙ্গে বিয়ের কাবিননামায় শামীমা আক্তার ‘কুমারী’ লিখেছেন। যেহেতু তাঁদের সন্তান আছে, তাই তিনি স্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেননি।

আসিফের এসব অভিযোগের ব্যাপারে শামীমা আক্তার জানান, এর আগে দুবার তাঁর বিয়ে হয়েছিল। তিনি বলেছেন, ‘আসিফের কাছে মোটেও কিছু গোপন করিনি। আমি তাঁকে বিয়ের আগেই সব জানিয়েছি। আমার কাবিননামায় তালাকপ্রাপ্তা লেখা আছে। এই কাগজ এরই মধ্যে আদালতে জমা দিয়েছি। আর আমি কানাডায় নাগরিকত্ব পাইয়ে দেওয়ার জন্য কাউকে বিয়ে করিনি। বিয়ে করেছিলাম সংসার করার জন্য। কেউ যদি কানাডার নাগরিক হওয়ার জন্য আমাকে বিয়ে করেন, সেখানে আমার কী করার আছে? আসিফের সঙ্গেও সংসার করার জন্যই আমি বিয়ে করেছি।’

আসিফ আরও জানান, এরই মধ্যে তিনি স্ত্রী শামীমা আক্তারকে তালাকের নোটিশ দিয়েছেন। আর সিটি করপোরেশন থেকে তালাকের এই নোটিশের ব্যাপারে আলোচনা করার জন্য শামীমা আক্তারের ঢাকার ঠিকানায় নোটিশ পাঠিয়েছে। কিন্তু কেউ সেই নোটিশ গ্রহণ করেনি।

আর আদালত যে আপসের শর্তে তাঁকে জামিন দিয়েছেন, এ ব্যাপারে আসিফ বলেন, ‘আমার আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করছি, ২৭ মে হয়তো চূড়ান্ত কিছু জানাতে পারব।’

আদালত আপসের শর্তে আসিফকে জামিন দিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু আসিফ কিংবা তাঁর পরিবারের কেউ এ ব্যাপারে শামীমা আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। এ অভিযোগের ব্যাপারে আসিফ বলেন, ‘যে স্ত্রী আমাকে জেলে ঢুকিয়েছেন, আমি তাঁর কাছে আপস করার জন্য ছুটে যাব, এটা কি বাস্তব, কেউ তা পারবে? এই আপসের ব্যাপারে আমার আইনজীবী তাঁর আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছেন।’

আপনি কি শামীমা আক্তারের সঙ্গে সংসার করতে চান? তালাকের নোটিশ প্রত্যাহার করতে চান? এ ব্যাপারে আসিফ কিছু বলেননি।

শামীমা আক্তার আগেই জানিয়েছেন, আসিফের কাছ থেকে তিনি যে তালাকের নোটিশ পেয়েছেন, তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, আসিফ গত ২ এপ্রিল স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন। কিন্তু তা পোস্ট করা হয়েছে ২৩ এপ্রিল।

গত ২৩ এপ্রিল রাত ১২টার দিকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন থেকে আসিফকে গ্রেপ্তার করা হয়। মালয়েশিয়া থেকে নাটকের শুটিং শেষে দেশে ফিরছিলেন তিনি। পরদিন সকালে আদালত দুই পক্ষের শুনানি শেষে আসিফকে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। ২৫ এপ্রিল স্ত্রীকে আর নির্যাতন করবেন না এবং সন্তানের ভরণপোষণ করবেন—এই শর্তে তাঁকে জামিন দেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক শফিউল আজম। তিনি আরও আদেশ দেন, যদি আসিফ আগের মতো স্ত্রী ও সন্তানের সঙ্গে অন্যায় করেন, তবে আবারও তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরপর আবারও আসিফকে ২০ মে পর্যন্ত জামিন দেওয়া হয়।

কাজী আসিফ রহমানের বিরুদ্ধে তাঁর স্ত্রী শামীমা আক্তার নারী নির্যাতন ও যৌতুকের মামলা করেন। শামীমা আক্তার তখন বলেন, ‘আমি কানাডাপ্রবাসী। ১৭ বছর যাবৎ কানাডার টরন্টোতে আছি। ২০১৪ সালে ফেসবুকে আসিফের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। এরপর যখন আমরা বিয়ের সিদ্ধান্ত নিই, তখন পরিবারকে জানাই। পারিবারিকভাবে আমাদের বিয়ে হয়েছে। ২০১৫ সালে ৭ আগস্ট আমাদের বিয়ে হয়। আমি সেখানে নার্সিংয়ের ওপর পড়াশোনা করেছি। সেখানে হাসপাতাল আর এজেন্সির সঙ্গে যুক্ত আছি।’

বিয়ের পর কানাডায় ফিরে যান শামীমা আক্তার। তিনি দাবি করেন, বিয়ের পর বিভিন্ন সময় আসিফ তাঁর কাছে টাকা দাবি করেন। মাঝেমধ্যেই স্বামীর দাবি পূরণ করেছেন তিনি। ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে তিনি দেশে ফিরে আসেন। ওই সময় তিনি অন্তঃসত্ত্বা হন। তখন টাকা দাবি করে আসিফ তাঁকে মারধর করেছেন। পরের বছর ৯ জানুয়ারি তিনি আবার কানাডায় ফিরে যান। সেখানে আট মাস আগে তাঁদের প্রথম সন্তান আজওয়া রহমানের জন্ম হয়। এবার গত ৩ জানুয়ারি মেয়েকে নিয়ে দেশে এসেছেন শামীমা আক্তার। তখন বড় অঙ্কের টাকা চাওয়া নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তিক্ততা বাড়তে থাকে। দুই পরিবারের মুরব্বিদের ব্যাপারটি জানানো হয়। এ সময় স্ত্রীকে আবারও মারধর করেন আসিফ। একপর্যায়ে বাসা ছেড়ে চলে যান। শেষে গত ৬ মার্চ স্বামীর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন ও যৌতুকের মামলা করেন শামীমা আক্তার। তিনি আসিফের বিরুদ্ধে অন্য মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক রাখারও অভিযোগ করেন।

আসিফ এরই মধ্যে কয়েকটি বিজ্ঞাপনের মডেল হয়েছেন। নিয়মিত ছোট পর্দায় কাজ করছেন। ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ‘ঘাসফুল’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে আলোচিত হন তিনি।