বসুন্ধরায় অভিযানকালে বিক্ষোভের মুখে শুল্ক গোয়েন্দারা

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বিদেশ থেকে আনা মোবাইল ফোন বিক্রির অভিযোগে শনিবার রাজধানীর অভিজাত বিপণিবিতান বসুন্ধরা সিটি শপিংমলে অভিযান চালায় শুল্ক্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।

দুপুরে অভিযান শেষে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শতাধিক মোবাইল ফোন নিয়ে যাওয়ার সময় গোয়েন্দাদের গাড়ি আটকে বিক্ষোভ করেন ব্যবসায়ীরা।

পরে তারা দুই ঘণ্টা পান্থপথ ক্রসিং থেকে সার্ক ফোয়ারা ক্রসিং পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে রাখেন। এতে ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে ভোগান্তিতে পড়েন পথচারীরা।

আলোচনার আশ্বাসে বিকেল ৩টার দিকে অবরোধ তুলে নেন ব্যবসায়ীরা। পরে পৌনে ৪টার দিকে শুল্ক গোয়েন্দারা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেন বৈধ কাগজপত্র থাকলে জব্দ সেট ফেরত দেওয়া হবে।

শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, সকাল ১১টা থেকে তাদের পৃথক দল বসুন্ধরা সিটি শপিংমল ছাড়াও উত্তরা, গুলশান ও মহাখালী এলাকায় শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা মোবাইল ফোন জব্দ করতে অভিযান চালায়। এ সময় বিভিন্ন দোকান ও শোরুম থেকে অবৈধ ১২১টি আইফোন, এইচটিসি ব্র্যান্ডের ১২৫টি, এলজি ব্র্যান্ডের ১৫টি এবং অ্যাপল ওয়াচ ব্র্যান্ডের একটিসহ মোট ২৬২টি ফোন জব্দ করা হয়, যার বাজারমূল্য প্রায় দুই কোটি ৯ লাখ টাকা। এ ছাড়া এ অভিযানে মহাখালীতে টিজে গ্রুপের শোরুমে নকল আইফোন তৈরির সময় সাতজন এবং উত্তরা নর্থ টাওয়ার থেকে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়।

শুল্ক গোয়েন্দারা বলেন, সব অভিযান শান্তিপূর্ণ হলেও বসুন্ধরা সিটির প্রথম, দ্বিতীয়, পঞ্চম ও ষষ্ঠতলায় মোবাইল ফোন বিক্রির জোনে অভিযানে ঝামেলা সৃষ্টি হয়। আমদানির বৈধ কাগজপত্র দেখাতে না পারায় শ’খানেক মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। দুপুর ১টার দিকে অভিযান শেষ করে চলে যাওয়ার সময় ব্যবসায়ীরা শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের পথরোধ করেন। এক পর্যায়ে তাদের কয়েকজন গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা অভিযান শেষে চলে যাওয়ার সময় মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী ও কয়েকশ’ দোকান কর্মচারী বসুন্ধরা শপিংমলের সামনের রাস্তায় নেমে আসেন। তারা ফুটপাতে পড়ে থাকা কাঠের টুকরো জোগাড় করে তাতে আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। ওই সময় অভিযানে থাকা র্যাোব সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের সড়ক থেকে তুলে দিতে গেলে তাদের সঙ্গেও ব্যবসায়ীদের বাকবিতণ্ডা হয়। ব্যবসায়ীদের এমন অবরোধের ফলে গাড়ির ভেতর অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন শুল্ক গোয়েন্দারা।

বিক্ষোভে থাকা বসুন্ধরা সিটির আরএম ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ী মোফাজ্জেল হোসেন দাবি করেন, কোনো নোটিশ ছাড়াই অভিযান চালিয়ে কোটি টাকার মোবাইল সেট নিয়ে গেছে শুল্ক গোয়েন্দারা। বাধ্য হয়েই তারা রাস্তায় নেমে মোবাইলগুলো ফেরত চাইছেন।

ওই শপিংমলের ‘অ্যাপল জোন’ নামের একটি মোবাইলের দোকানের কর্মচারী ফাহাদ বলেন, এর আগেও একইভাবে অভিযান চালিয়ে মোবাইল ফোন নিয়ে যাওয়া হয়। তারা কাগজপত্র দেখানোরও সময় দেয় না। পরে কাগজ নিয়ে গেলেও মোবাইলগুলো ফেরত দেয় না। এ জন্যই ব্যবসায়ীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন।

অন্য একজন ব্যবসায়ী বলেন, বিদেশ থেকে দেশে ফেরা বিভিন্ন যাত্রীর কাছ থেকে তারা মোবাইল ফোনসেটগুলো কেনেন। পরে তা বিক্রি করেন। যদি দেশে অবৈধ মোবাইল ফোন আনা হয় শুল্ক গোয়েন্দারা তো বিমানবন্দরেই আটকে দিতে পারেন।

বিক্ষোভকারী অন্য এক ব্যবসায়ী নাজিমউদ্দিন বলেন, মোবাইলগুলো অবৈধ হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক। তবে প্রতি ঈদের আগে শুল্ক গোয়েন্দারা এখানে নানা ছুতোয় ব্যবসায়ীদের হয়রানি করেন। এ জন্যই তারা ক্ষুব্ধ হয়েছেন।

অভিযানের নেতৃত্বে থাকা শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কাজী জিয়াউদ্দিন বলেন, নিয়ম মেনেই তারা মার্কেটে অভিযান চালিয়েছেন। জব্দ করা মোবাইল ফোনের সপক্ষে বৈধ কাগজ থাকলে তা পরীক্ষা করে অবশ্যই সেগুলো ফেরত দেওয়া হবে।