কিশোরীটির নাম শুভ আক্তার। মাদারীপুর সদর উপজেলার হুগলী হাই স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ৩ দশমিক ২২ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে সে। পরীক্ষা শেষে আত্মীয়ের বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় ডান পা হারায় শুভ। পা হারিয়ে এখন সে বাকরুদ্ধ ও হতাশ।
আনন্দ আর দুরন্তপনায় ভরা ছিল শুভর জীবন। অভাবের সংসার হলেও পরিবারের সঙ্গে ভালোই কেটেছে তার দিন। কিন্তু একটি দুর্ঘটনা তাঁর জীবন থেকে সবকিছু কেড়ে নিল। এই অবস্থায় তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে দুঃচিন্তায় পড়েছেন শুভর বাবা শাজাহান খোয়াজ। তিনি বলেন, ‘মেয়েটি আমার খুব হাসিখুশি ছিল। সবার মন জয় করে রাখত। অভাব কখনই বুঝতে দেয়নি। কারও সঙ্গে তার তুলনা চলে না। মেয়েটির এই বয়সে দৌড়া-দৌড়ি করা, দুষ্টুমির ছলে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় মেতে থাকার কথা। কিন্তু একটি দুর্ঘটনা তার জীবনকে এলোমেলো করে দিল। ভবিষ্যতে মেয়েটি আমার কী করবে, তা নিয়ে ভীষণ চিন্তায় আছি। মেয়েটিকে নিয়ে এক মাস ধরে হাসপাতালে কাটছে।’
ভবিষ্যতে কীভাবে পড়াশোনা করবে, কলেজে ভর্তি হবে? বই কেনা ও কলেজে যাতায়াতের টাকা কোথায় পাবে এ নিয়ে এখন দিশেহারা শুভর পরিবার। বৃহস্পতিবার হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শুভ তার এসএসসি পরীক্ষার ফল জানতে পারে। এতে তার দুচোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে যায়। কান্নাজড়িত কণ্ঠে শুভ বলে, ‘এসএসসি পাস করেছি। স্বপ্ন ছিল কলেজে পড়ব। কলেজে হাঁটব, দৌড়াব, বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরব, আড্ডা দেব। কিন্তু কী থেকে কী যে হয়ে গেল। জীবনে বেঁচে থেকে আর কী হবে? আমি কারও বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। এর থেকে দুর্ঘটনায় মরে গেলে ভালো হতো।’
গত ৬ এপ্রিল ঢাকায় আত্মীয় বাড়ি থেকে গ্রামের বাড়ি ফিরছিল শুভ আক্তার। মাদারীপুর সদর উপজেলার হুগলী থেকে রিকশা করে আদিত্যপুর গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছিল সে। পথে উপজেলার হুগলী গ্রামের মোল্যাবাড়ির সামনে আসলে জমি চাষের ট্রাক্টর শুভকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তাঁর ডান পা শরীর থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় শুভকে রক্তাক্ত অবস্থায় প্রথমে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে এবং পরে ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়। বর্তমানে সে এই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন।