১০ বছর জেল খাটার পর নিরপরাধ বাদলকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

দশ বছর কারাবাসের পর বাদল ফরাজি নামের নিরপরাধ এক ব্যক্তিকে ভারতের কারাগার থেকে ফেরত আনার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। চার বছর চিঠি চালাচালির পর বাংলাদেশ সরকার নিশ্চিত হয়েছে বাদল নিরপরাধ এবং তিনি এ দেশেরই নাগরিক। এ জন্য বন্দী বিনিময় চুক্তির আওতায় দ্রুত তাঁকে ফেরত আনার উদ্যোগ নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এদিকে ভারত থেকেও বাদলকে ফিরিয়ে আনার জন্য বারবার তাগাদা দেওয়া হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একটি খুনের মামলার আসামির সঙ্গে নামের মিল থাকার কারণে ২০০৮ সালে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে ঢোকার সময় বাদল ফরাজিকে গ্রেপ্তার করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। পর্যটক ভিসা নিয়ে বাংলাদেশের বাগেরহাট থেকে তাজমহল দেখতে বেরিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এরপর আর ফেরেননি। পাসপোর্ট অনুযায়ী বাদলের স্থায়ী ঠিকানা বাগেরহাট এবং বর্তমান ঠিকানা খুলনায়। বাগেরহাটের আবদুল খালেক ফরাজি ও সারাফালি বেগমের ছেলে তিনি।

ফেরানোর পর কি তাঁকে বাংলাদেশের কারাগারে সাজা ভোগ করতে হবে?—এমন প্রশ্নের জবাবে আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, প্রথমে তো তাঁকে দেশের কারাগারে নিতেই হবে। এরপর দুটি উপায় আছে। রাষ্ট্রপতি চাইলে তাঁকে বিশেষ ক্ষমা করতে পারবেন অথবা তাঁর সাজা কমানো বা মওকুফ করতে পারবেন।

সরকারি নথিপত্র ঘেঁটে জানা গেছে, ২০০৮ সালের ৬ মে নয়াদিল্লির অমর কলোনির এক বৃদ্ধা খুনের মামলায় বাদল সিং নামের এক আসামিকে খুঁজছিল ভারতের পুলিশ। ওই বছরের ১৩ জুলাই বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় বিএসএফ ভুল করে বাদল ফরাজিকে গ্রেপ্তার করে। ইংরেজি বা হিন্দি জানা না থাকায় তিনি বিএসএফ সদস্যদের নিজের পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেননি।

ভারতের বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে, নিম্ন আদালতের রায়ে খুনের দায়ে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় ২০১৫ সালের ৭ আগস্ট বাদলকে দোষী সাব্যস্ত করেন দিল্লির আদালত। তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে হাইকোর্টেও একই সাজা বহাল থাকে। ঘটনা জানার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সুরক্ষা বিভাগে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থানিতে বলা হয়। এরপর আইন মন্ত্রণালয়, পুলিশের বিশেষ শাখা এবং কারা অধিদপ্তর থেকে মতামত চাওয়া হয়।

বাদলের নির্দোষ হওয়ার বিষয়টি জানার পর গত ১৯ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক জরুরি বৈঠক করে তাঁকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী গত ১৭ এপ্রিল স্বরাষ্ট্রসচিবকে এক ফ্যাক্স বার্তায় জানান, অনেক দিন ধরে বাদল ফরাজিকে বাংলাদেশে ফেরানোর বিষয়টি ঝুলে আছে। তাই এ বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। গত ২২ এপ্রিল ভারতে আনুষ্ঠানিক আবেদন পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘বন্দী বিনিময় চুক্তি অনুযায়ী বাদলকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিচ্ছি। এ জন্য নির্ধারিত ফরম পূরণ করে আবেদন পাঠানো হচ্ছে। আশা করি, দ্রুত বাদলকে ফিরিয়ে আনা হবে।’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বাদল কারাগারে থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাস করে কারাগার চত্বরের ইন্দিরা গান্ধী মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস করেছেন। স্নাতকের বাইরেও আটটি ডিপ্লোমা কোর্স করেছেন। এখন ইংরেজি ও হিন্দিতে অনর্গল কথা বলতে পারেন তিনি।

এ বিষয়ে বাদলের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁর বোন তাসলিমা বেগম বলেন, ‘ভারতের হাইকমিশন থেকে আমাদের সঙ্গে একবার যোগাযোগ করা হয়েছিল অনেক আগে। এরপর আর কেউ খোঁজ নেয়নি।’