২০ মিটারের খনন কাজ ৩ মিটারেই শেষ

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

নওগাঁ সদর উপজেলার বিল মনসুরে খাল খনন কাজে বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন প্রকল্প (বিএমডিএ) কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নিয়ম অনুসারে কাজ না হওয়ায় এলাকাবাসীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

বিএমডিএ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে ভূ-গর্ভস্থ পানির মাধ্যমে সেচ সম্প্রসারণ ও জলাবদ্ধতা দূরীকরণ নামে তিনটি প্রকল্প তৈরি করে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। ওই বছরই প্রকল্পগুলো একনেকে অনুমোদন পায়। প্রকল্পগুলাে বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয় মোট ২ কোটি ৫৪ লাখ ৩৫ হাজার ৬৬৫ টাকা।

প্রকল্পগুলো হলো- নওগাঁ সদর এলাকায় গয়াপাড়া থেকে বিলপাকুড়িয়া পর্যন্ত ব্যয় ৭২ লাখ ৬৮ হাজার ৭৩১ টাকা, গয়াপাড়া থেকে বিল পাকুড়িয়া পর্যন্ত ব্যয় ৬৫ লাখ ৭০ হাজার ২৯৯ টাকা এবং গয়াপাড়া থেকে নলমারা পর্যন্ত ব্যয় ১ কোটি ১৫ লাখ ৯৬ হাজার ৬৩৫ টাকা। কাজের পরিমাণ মোট ৭ কিলোমিটার।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, স্থান ভেদে বিলের মাটির উপরিভাগ প্রয়োজন অনুসারে খনন করতে হবে ২০ মিটার পর্যন্ত। টেন্ডারের মধ্যেমে তিনটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান গত বছরের আগস্ট মাস থেকে খাল খনন শুরু করে। খাল খননের উদ্দেশ্য হচ্ছে বোরো মৌসুমে খাল থেকে পানি নিয়ে কৃষকদের আবাদ করা এবং বৃষ্টি হলে দ্রুত খালে পানি নেমে যাওয়া।

কিন্তু সরেজমিনে দেখা গেছে, ওই তিনটি প্রকল্পের কোনো সাইনবোর্ড নেই। খালের মাটির উপরিভাগে মাত্র দুই থেকে তিন মিটার পর্যন্ত খনন করা হয়েছে। বিল মনসুরে খাস জমি ৯শ বিঘা আয়তনের। খননের সরকারি নিয়ম থাকলেও তা অমান্য করে বিলের ৪শ বিঘা জমির চারদিকে মাটি ফেলে উঁচু করা হচ্ছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রভাবশালীদের সঙ্গে বিএমডিএ কর্মকর্তাদের যোগসাজসে বিলে পুকুর তৈরি করে লিজের নামে টাকা লুটপাট করার জোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, এই বিল থেকে এলাকার প্রায় ১৫টি গ্রামের সাধারণ মানুষ ও মৎস্যজীবীরা মাছ সংগ্রহ করে থাকেন। কিন্তু দীর্ঘ দিন থকে বিলের চারপাশে ভরাট হওয়া প্রায় ৫শ বিঘা জমি এলাকার প্রভাবশালীরা দখলে নেন। তারা খরা মৌসুমে সেখানে ধান চাষ করেন। আর বর্ষা মৌসুমে ঘেরাও করে মাছ চাষ করেন। এতে সাধারণ মানুষ মাছ সংগ্রহ করতে পারেন না। বিলটি দখলমুক্ত করার জন্য এলাকাবাসী স্থানীয় প্রশাসনকে জানালেও অজ্ঞাত কারণে প্রশাসন কোনো উদ্যোগ নেয়নি বলে অভিযোগ করেন।

পাকুড়িয়া গ্রামের মুমিনুল হক, গয়াপাড়া গ্রামের তোরিকুল ইসলাম ও জুয়েলসহ অনেকেই বলেন, প্রভাবশালীদের দখলে থাকা প্রায় ৫শ বিঘা জমি খনন করছে না। অপরদিকে সাধারণ মানুষদের দখলে থাকা ও ব্যক্তি মালিকানা জমি খনন করা হচ্ছে। এতে ২০-২৫টি গরিব পরিবার সর্বশান্ত হয়েছেন।

তবে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নওগাঁ জোন-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শরিফুল হক বলেন, প্রকল্পে কোনো অনিয়ম হচ্ছে না। সঠিক ভাবে কাজ সম্পন্ন হচ্ছে।

নওগাঁ জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান বলেন, এ প্রকল্পের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত অনিয়মের অভিযোগ পাইনি। তবে বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।