হাওরাঞ্চলে আগামী ৪ থেকে ৭ মে ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক মো. সামছুদ্দিন আহমেদ।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এ তথ্য জানান তিনি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এতে সভাপতিত্ব করেন।
সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘গত বছর এপ্রিল মাসে আকস্মিক আগাম বন্যায় হাওরে ফসলের বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছিল। সেজন্য এবার আমরা বিষয়টি অত্যন্ত নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। আমাদের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, দেশে বিভিন্ন স্থানে কালবৈশাখী ঝড় হয়েছে, এর সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে শিলাবৃষ্টিও হয়েছে। আমাদের মূল দৃষ্টি হাওরের দিকে, যেখানে এখনও ফসল কাটা সম্পন্ন হয়নি।’
আগামী ১ থেকে ৭ মে পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাসের একটি ম্যাপ আবহাওয়া অধিদফতর তৈরি করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই ম্যাপ অনুযায়ী ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, সিলেট, সুনামগঞ্জসহ হাওরাঞ্চলে ৪, ৫, ৬, ৭ মে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। আবহাওয়া অধিদফতরের ম্যান্ডেট হলো ভারী বৃষ্টিপাতকে পূর্বাভাসে জানানো। এটি আমাদের পূর্বাভাস, আমরা জানালাম।’
‘এ থেকে আমাদের একটি আশঙ্কা হলো, ভারী বর্ষণের কারণে সেখানে আকস্মিক বন্যা হতে পারে। বন্যার বিষয়টি বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র দেখে থাকে। আমরা বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র ও দেশের জনসাধারণ ও সব সংস্থার জন্য এই পূর্বাভাসটি জানালাম।’
পরিচালক বলেন, ‘আবহাওয়া অধিদফতরের ওয়েবসাইটে নিয়মিত আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখতে পাবেন। আমি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে ফোনে বিষয়গুলো জানিয়ে দেই।’
ভারী বৃষ্টি ও পাহাড় ধসের বিষয়ে সরকারের প্রস্তুতি অত্যন্ত ভালো দাবি করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী বলেন, ‘গত দুই মাস থেকে আমাদের প্রস্তুতি চলছে। তারপরও আবহাওয়া অধিদফতরের সতর্কবার্তা শোনার পর আমরা আজকে এখানে সবাই সমবেত হয়েছি। আমাদের আগাম প্রস্তুতি প্রায় শেষ। যদি কোথাও দুর্যোগ হয় তখন সেখানে কী করণীয়, দুর্গতদের আশ্রয় কেন্দ্রে তুলে আনা, খাবারে ব্যবস্থা করা, এরপর তাদের পুনর্বাসন করার জন্য প্রস্তুতি নেয়া।’
আগাম প্রস্তুতির কারণে হাওরে ইতোমধ্যে ৮৮ শতাংশ ধান কাটা শেষ হয়েছে বলেও জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘নতুন দুর্যোগ হয়ে দেখা দিয়েছে, শিলা বৃষ্টি। এবার উত্তরবঙ্গে ৫ থেকে ১০ কেজি ওজনের শিলাও পড়েছে। এবার শিলা বৃষ্টিতেও ৫ থেকে ৭ জন লোক মারা গেছে। নতুন নতুন দুর্যোগের সম্মুখীন হচ্ছি, এ জন্য আমাদের আগাম প্রস্তুতিও আছে। আগে ১৫ থেকে ১৬টি জেলায় দুর্যোগ হত। এখন ৩৭টি জেলা নিয়ে আমাদের মাথা ঘামাতে হয়।’
গত বছর পাহাড় ধসে পার্বত্য এলাকায় ১৬৬ জন লোকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয় জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘গত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে এ বছর পাহাড় ধস মোকাবেলায় পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে এপ্রিল মাসের ২২ থেকে ২৬ তারিখে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে পার্বত্য ৩ জেলা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার-এই ৫ জেলার ৩৫টি উপজেলায় র্যালি, কর্মশালা ও জেলা-উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা করা হয়েছে।’
‘পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ ঢালে বসবাসকারীদের দ্রুত সরিয়ে নিতে জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়েছে। গত দু’দিনে শুধু রাঙামাটিতেই ১১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। তাই এখনই জেলা প্রশাসনকে সতর্ক হতে হবে।’
পাহাড়ে আশ্রয় নেয়া ৫০ হাজার রোহিঙ্গা পরিবারের ২ লাখ লোক পাহাড় ধসের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে জানিয়ে ত্রাণমন্ত্রী বলেন, ‘ইতোমধ্যে ২৫ হাজার পরিবারকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেয়া হয়েছে। আশা করি রোজার আগে তাদের সবাইকে সরিয়ে নিতে সক্ষম হব।’
সভায় স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব জাফর আহমেদ খান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ্, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল, চিকিৎসা শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ফয়েজ আহম্মেদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রইছ-উল আলম মণ্ডল, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব জিল্লার রহমান, কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব কবির বিন আনোয়ার, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালক রিয়াজ আহমেদ, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহম্মেদ খানসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।