 
                                            
                                                                                            
                                        
বকেয়া পরিশোধ না করায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ৭৯ টি মামলা করেন তার প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ও বর্তমান কর্মীরা। গত বছরের মার্চে ৭৯ কর্মী ঢাকার শ্রম আদালতে এ মামলাগুলো করেন। মামলার এক বছর পার হলেও এখনো শুরু হয়নি বিচারিক কার্যক্রম।
বাদী পক্ষের আইনজীবী জাফরুল হাসান শরীফ বলেন, বকেয়া পরিশোধ না করায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ৭৯টি মামলা করেন তার কর্মীরা। এর মধ্যে ১৪টি মামলা উচ্চ আদালতের আদেশে স্থগিত।
মামলার দুই বাদী হামজালা ইব্রাহীম ও শরীফুল ইসলাম বলেন,পাওনা টাকার জন্য ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। বিবাদীরা আমাদের পাওনা টাকা দিবেনা বলে হুমকি দিচ্ছে। জানি না টাকা পাবো কিনা।
অন্যদিকে প্রায় দেড় কোটি টাকা মজুরি পাওনার অভিযোগে সিটিসেলের পরিচালক ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খানসহ আটজনের বিরুদ্ধে পৃথক পাঁচটি মামলা করেন ওই কোম্পানির পাঁচ কর্মকর্তা। গত বছরের ৭ আগস্ট ঢাকার শ্রম আদালতে মামলাগুলো করেন সিটিসেলের কর্মকর্তা টিপু সুলতান, কাজী রুহুল কুদ্দুস, হাসান মাহমুদ, মোসাদ্দেক মিলন ও এ কে এম এহসানউল আজাদ। মামলার পর এখনও শুরু হয়নি বিচার।
বাদী পক্ষের আইনজীবী তানজীম আল ইসলাম বলেন, সিটিসেলের বিরুদ্ধে মামলাটি চলমান। এখনও মামলার বিচার শুরু হয়নি।
শুধু গ্রামীণ টেলিকমের কিংবা সিটিসেলের মামলাই নয়। শ্রম আইনে দায়ের করা ১৭ হাজার ৩০৪টি মামলা বর্তমানে দেশের বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন। যদিও আইন অনুসারে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে এ মামলার বিচারকাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা। তবে বিভিন্ন আইনি জটিলতায় এসব মামলা ৬০ মাসেও নিষ্পত্তি হচ্ছে না।
এ বিষয়ে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার অধীর চন্দ্র বালা বলেন, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালসহ সারা দেশের আটটি আদালতে মোট ১৭ হাজার ৩০৪টি মামলা বিচারাধীন।
এর মধ্যে ঢাকার প্রথম শ্রম আদালতে তিন হাজার ৭৮৭টি, ঢাকার দ্বিতীয় শ্রম আদালতে পাঁচ হাজার ৮৬৪, ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে তিন হাজার ৭৪৪, চট্টগ্রাম প্রথম শ্রম আদালতে এক হাজার ২৬০, চট্টগ্রাম দ্বিতীয় শ্রম আদালতে ৭৩৮, খুলনা বিভাগীয় শ্রম আদালতে ৪৩৩, রাজশাহী বিভাগীয় শ্রম আদালতে ৫০৯টি মামলা বিচারাধীন। এসব মামলার মধ্যে ১১ হাজার ৭০২টি মামলা ছয় মাসের অধিক সময় ধরে চলমান। এছাড়া উচ্চ আদালতের আদেশে ২২৬টি মামলার কার্যক্রম স্থগিত।
শ্রম আইনে মামলার দীর্ঘসূত্রতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে লেবার কোর্টে একাধিক মামলা পরিচালনকারী আইনজীবী এ এস এম আনিছুজ্জামান (তুহিন) বলেন,আইনুযায়ী শ্রম আইনে মামলাসমূহ ৬০ দিনে নিষ্পত্তির নিয়ম। কিন্তু অধিকাংশ মামলা ৬০ মাসেও নিষ্পত্তি হয় না।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, শ্রম আইন অনুযায়ী আদালতে দুজন সদস্য থাকেন। তাদের অনুপস্থিতির জন্য অনেক সময় মামলা বিলম্ব হয়। আবার অনেক সময় মালিক পক্ষের অনুরোধে আইনজীবীরা বিলম্ব করেন।
তিনি আরও বলেন, দ্রুত নিষ্পত্তি না হওয়ায় মামলাজট বাড়ছে এবং মামলা করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন চাকরিচ্যুত শ্রমিকরা।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশে শ্রমিকের জন্য আদালত রয়েছে সাতটি। শ্রমিকের তুলনায় আদালতের সংখ্যা খুবই কম হওয়ায় মামলা নিষ্পত্তিতে সময় লাগছে। মামলাজট কমাতে দেশে আরও শ্রম আদালত প্রয়োজন। তাহলে এ আইনের সুফল পাওয়া যাবে।