ঋণের দায়ে আত্মহত্যা করেছেন শিক্ষক গোলাম রব্বানী (৩৫)। তার বাড়িতে এখনও শোকের মাতম থামছে না। এ ঘটনায় শিক্ষক-কর্মচারীদের মাঝে বিষাদের ছায়া নেমে এসেছে।
রংপুরের বদরগঞ্জ মডেল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক গোলাম রব্বানী বৃহস্পতিবার বিষপান করেন। ওই দিন বিকালে গুরুতর অবস্থায় তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে রাত সাড়ে ৯টার দিকে তিনি মারা যান। গত শুক্রবার তার লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর হয়। রাতেই তার লাশ দাফন করা হয়েছে।
পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্র জানায়, তিনি গত কয়েক মাস আগে তার সহকারী শিক্ষক পদে চাকরির জন্য প্রায় ১০ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। এ ছাড়াও তিনি নানা কারণে বিভিন্ন অর্থ বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে বিপুল অঙ্কের টাকা ঋণ গ্রহণ করেছিলেন। ওই সব ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে তিনি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন।
দীর্ঘদিন ধরে তিনি ওই সব ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারছিলেন না। সম্প্রতি তিনি ওই টাকা পরিশোধের জন্য নানামুখী চাপে পড়েন। এতে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। বিষাদগ্রস্ত হয়ে থাকতেন। তার দুই স্ত্রীর মধ্যে একজন বর্তমান তার সঙ্গে থাকেন।
নিঃসন্তান জীবনযাপনে তিনি অসুখী ছিলেন। দাম্পত্য জীবনেও স্ত্রীর সঙ্গে ছিল তার কলহ। এ পরিস্থিতির মুখে গোলাম রব্বানী বৃহস্পতিবার সবার অগোচরে বিষপান করে আত্মহত্যা করেন।
দ্বিতীয় স্ত্রী মিনু আক্তার ঘটনার সময় বাইরে ছিলেন। ঘরে ফিরে দেখেন তার স্বামী গোলাম রব্বানী অচেতন অবস্থায় বিছানায় পড়ে আছেন। পরে গুরুতর অবস্থায় তাকে বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়।
বিষপানের ঘটনা নিশ্চিত করে বদরগঞ্জ মডেল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ময়নুল হক সরকার বলেন, ঘটনার দিন গোলাম রব্বানী বিদ্যালয়ে আসেননি। দেনার দায়ে তিনি জর্জরিত থাকার কারণে তাকে প্রায় সময় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত দেখা গেছে।
বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) আবদুল হাই রুবেল বলেন, তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
রংপুর কোতোয়ালি থানার ওসি বাবুল মিয়া জানান, শিক্ষক গোলাম রব্বানীর লাশ গত শুক্রবার ময়নাতদন্ত করে সন্ধ্যায় পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
নিহতের স্ত্রী মিনু আক্তার জানান, তার স্বামীর লাশ শুক্রবার রাত ৯টায় বদরগঞ্জের দামোদরপুর ইউনিয়নে খিয়ারী ডাঙ্গার পাড়া গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।