‘এখন আমাদের কে বুকে জড়িয়ে আদর করবে’

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

‘কে আমাদের দায়িত্ব নেবেন, কে আমাদের লেখাপড়ার খরচ দেবেন, আর কে আমাদের বুকে জড়িয়ে ধরে আদর করবেন!’

চোখের জল ফেলতে ফেলতে বুধবার এ কথাগুলো বলছিল ঢাকায় দুই বাসের চাপায় প্রাণ হারানো তিতুমীর কলেজের মেধাবী ছাত্র রাজীব হোসেনের ছোট ভাই হাফেজ আবদুল্লাহ (১১)।

পটুয়াখালীর বাউফলের দাসপাড়া গ্রামে বুধবার নানা-নানির কবরের পাশেই সমাহিত করা হয়েছে রাজীবকে। সেখানেই তার স্বজনদের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকদের।

আবদুল্লাহ বলছিল, ‘ছোটবেলায় বাবা-মা হারানোর স্মৃতি মনে নেই। এই ভাইই ছিলেন আমাদের দুই ভাইয়ের বাবা-মায়ের মতো। তার স্নেহ-ভালোবাসায় আমরা বড় হয়েছি। আজ ভাই চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে। এখন আমরা কী করব, কীভাবে চলব, কোথায় গিয়ে দাঁড়াব— কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।’

আরেক ভাই মেহেদী হাসান (১৪) বলছিল, ‘আমাদের এই ভাই-ই ছিলেন আশ্রয়স্থল এবং তিনিই ছিলেন আমাদের একমাত্র সম্বল। তাকে হারিয়ে আজ আমরা একেবারেই এতিম হয়ে গেছি।’

পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার সূর্যমনি ইউনিয়নের ইন্দ্রকুল গ্রামে রাজীবের পৈতৃক বাড়ি হলেও তিনি বেড়ে উঠেছেন পার্শ্ববর্তী দাসপাড়া গ্রামের নানাবাড়িতে। খেটে খাওয়া বাবা হেলাল উদ্দিনের আয়ে টানাপড়েনে চলত রাজীবের বাবা-মার সংসার। বাবা হেলাল উদ্দিন ২০১১ সালে মারা যান। আর মা নাসিমা বেগম মারা যান ১৫ বছর আগে ২০০৫ সালে। ছোট্ট রাজীবের আরও দুটি ভাইকে নিয়ে ওই পরিবারে দেখভাল করার কেউ না থাকায় নানা লাল মিয়া নাতিদের দায়িত্ব নেন এবং রাজীবদের নানাবাড়ি নিয়ে আসেন। সেখানেই রাজীবের স্কুল জীবন শেষ হয়। পরে তার খালা জাহানারা বেগম মেধাবী ছাত্র রাজীবকে ঢাকার তিতুমীর কলেজে ভর্তি করিয়ে তার পড়ালেখার দায়িত্ব নেন। আর অন্য ছোট দুই ভাইকে ঢাকার একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করেন।

জাহানারা বেগম বলেন, ‘ছোটবেলায় বাবা-মা হারানোর পর এই রাজীবই ওদের বাবা-মার দায়িত্ব পালন করেছে। এখন কে নেবে রাজীবের ছোট দুই ভাইয়ের দায়িত্ব? আমি খালা হয়ে কতদিন ওদের দায়িত্ব নিতে পারব? আমারও তো সংসার আছে, ছেলেমেয়ে আছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের সকলের দাবি, তিনি যেন এই এতিম দুই শিশুর দায়িত্ব নেন এবং মাথা গোঁজার একটু ঠাঁই করে দেন।’

রাজীবের মামা জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা শেষ চেষ্টা করেও রাজীবকে রক্ষা করতে পারিনি, এ কষ্ট কীভাবে সইব। ওর ছোট দুই ভাই আছে, ওদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা শঙ্কিত। ওরা কোথায় খাবে, কোথায় লেখাপড়া করবে, কোথায় থাকবে— এ নিয়ে আমরা এখন চিন্তিত। তাই আমাদের দাবি, সরকার যেন ওদের দায়িত্ব নেয়, যাতে ওরা মাথা গোঁজার একটু ঠাঁই পায় এবং দু’বেলা খেয়ে লেখাপাড়া চালিয়ে যেতে পারে।’

বাউফল উপজেলা চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. মজিবুর রহমান বলেন, ‘রাজীবের পাশে পুরো বাউফলবাসী রয়েছে। এ পরিবারটি খুবই গরিব, তাই এলাকার সব জনপ্রতিনিধি ও বর্তমান সরকার রাজীবের দুই ভাইয়ের পাশে থাকবে, এমনটাই প্রত্যাশা করছি। রাজীবের বাড়ি থেকে মূল সড়ক পর্যন্ত দাসপাড়ার এ সড়কটির আজ থেকে নাম হবে ‘রাজীব হোসেন সড়ক’।

পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক ড. মাছুমুর রহমান জানান, সরকার রাজীবের দুই ভাইয়ের পাশে আছে এবং থাকবে। তার ছোট দুই ভাইকে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে এবং সরকারের পাশাপাশি সমাজের ধনাঢ্য ব্যক্তিদের উচিৎ এই এতিম শিশু দুটির পাশে দাঁড়ানো। তাহলেই রাজীবের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে এবং এতিম শিশু দুটিও উপকৃত হবে।