সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা থাকছে না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কোটা ব্যবস্থার সংস্কার দাবিতে চলমান আন্দোলনের মাঝেই বুধবার সংসদে তিনি একথা জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি কোটা ব্যবস্থা থাকলে এরকম আন্দোলন বারবার হবে। কাজেই কোটা থাকারই দরকার নাই। কোটা না থাকলে সংস্কারের প্রশ্নও উঠবে না, আন্দোলনও হবে না। আন্দোলনের ঝামেলা মেটানোর জন্য কোটা পদ্ধতিই বাতিল।’
বুধবার বিকেল ৫টার দিকে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে দশম জাতীয় সংসদের ২০তম অধিবেশন শুরু হওয়ার পর প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারদলীয় সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক কোটা ব্যবস্থা সংস্কার দাবিতে চলমান আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটি দেশ তখনই উন্নত হয় যখন একটি সমাজ শিক্ষিত হয়ে গড়ে ওঠে। তাই আমরা শিক্ষার ওপর সবসময় জোর দিয়েছি। আমাদের ছেলেমেয়েরা যাতে বহুমুখী শিক্ষা পায় সে উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। শিক্ষার জন্য যা যা করা দরকার তা আমরা করে যাচ্ছি। প্রাইমারি থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত আমরা বিনা পয়সায় বই দিচ্ছি। যাতে আমাদের ছেলেমেয়েরা শিক্ষিত হয়ে গড়ে উঠতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘দুঃখ লাগে যখন দেখলাম কোটার সংস্কার চেয়ে আন্দোলন। আন্দোলনটা কী… সমস্ত লেখাপড়া বন্ধ করে দিয়ে, রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন। সব বন্ধ করে দিয়ে বসে আছে। আর এটা সমস্ত জায়গায় ছড়িয়ে পড়লো। আজকে যেসব প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে সব আমাদেরই দেওয়া। এসব প্রযুক্তি গুজব ছড়ানোর কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। একটি ছেলে আঘাত পেয়েছে, অথচ গুজব ছড়ানো হলো যে সে মারা গেছে। রাত ১টার সময় হলের গেট ভেঙে মেয়েরা রাস্তায় নেমে এল। পরে সেই ছেলেকে বলতে হলো যে সে বেঁচে আছে।’
আন্দোলন চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা ও ভাংচুরের নিন্দা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক ঘটনা হলো ভিসির বাড়িতে আক্রমণ। সবকিছু ভেঙে চুরমার করে দেওয়া হয়েছে। বাথরুমের কমোড পর্যন্ত ভেঙেছে। ভিসির ওপর আঘাত পর্যন্ত করতে গেছে তারা, তাকে কোনোরকমে সেভ করা হয়েছে। এছাড়া ভবনে সিসি ক্যামেরা ভেঙেছে, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ যেখানে রেকর্ড হয় সেটাও ভেঙে নিয়ে গেছে। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তারা ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হওয়ার যোগ্য নয়।’
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরুর পর বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখার জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে নির্দেশ দেওয়া হয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে নির্দেশ দেই এটা পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্য। আমাদের সেতুমন্ত্রী তাদের সঙ্গে বসলো। বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখার সিদ্ধান্ত হলো। অনেকে মেনে নিল, অনেকে মানলো না। অনেক রাত পর্যন্ত তারা টিএসসিতে থেকে গেল।’
বিগত কয়েক বছর ধরেই সরকারি চাকরিতে কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেখানে মেধা তালিকা থেকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ৩৩, ৩৪ ও ৩৫তম বিসিএসের মেধা তালিকায় নিয়োগের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, যেখানে কোটায় প্রার্থী পাওয়া যায় না সেখানে মেধা তালিকা থেকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরেই এটা করা হচ্ছে। অথচ আন্দোলনকারীদের দাবির মধ্যেও এটা আছে। তারা জানেই না যে এটা আগে থেকেই করা হচ্ছে। না জেনেই আন্দোলনে নেমেছে তারা।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কাজেই কোনো কোটারই দরকার নাই। আমি মনে করি কোটা থাকলে এরকম আন্দোলন বারবার হবে। কাজেই কোটা থাকারই দরকার নাই। কোটা না থাকলে সংস্কারের প্রশ্নও উঠবে না, আন্দোলনও হবে না।’