রংপুরের বিশেষ জজ আদালতের পিপি রথীশ চন্দ্র ভৌমিক বাবুসোনাকে হত্যার পর গোপনে দেশ ছেড়ে পালানোর পরিকল্পনা ছিল স্ত্রী স্নিগ্ধা ভৌমিক ও তার প্রেমিক কামরুল ইসলামের। এজন্য তারা সবকিছু গুছিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের পর বিভিন্ন সংগঠনের আন্দোলন এবং আইনশৃংখলা বাহিনীর তৎপরতায় পালিয়ে যাবার সাহস পাননি তারা।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের কয়েকদিন আগে বাবুসোনা প্রায় আড়াই লাখ টাকা এনে বাড়িতে রাখেন। সে টাকারও কোন হদিস পায়নি আইনশৃংখলা বাহিনী। তাদের ধারণা, এই টাকাও স্নিগ্ধা তার প্রেমিক কামরুলকে দিয়েছেন।
রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রথম দিনে পুলিশকে এসব তথ্য জানিয়েছেন কামরুল ইসলাম। আর থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদে স্নিগ্ধা ভৌমিক পুলিশকেও নানা তথ্য দিয়েছেন। তবে কামরুল ও স্নিগ্ধা টাকার বিষয়েও এখনও মুখ খোলেননি।
পুলিশ জানিয়েছে, অত্যন্ত চালাক প্রকৃতির স্নিগ্ধা ও কামরুল। কোন কথা জিজ্ঞেস করলেই অসুস্থতার ভান ধরছেন। তবে পারিবারিক ও পরকিয়াসহ বেশ কিছু তথ্য দিয়েছেন তারা।
পুলিশ জানায়, তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর রথীশ চন্দ্র ভৌমিক নানা অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার অভিযোগ পান ধর্মীয় শিক্ষক কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এ কারণে তাকে প্রথমে সতর্ক করে দেন। কিন্তু এতেও কোনো কাজ না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করে দেয়া হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন কামরুল ইসলাম এবং তার প্রেমিক স্নিগ্ধা ভৌমিকও। তিনি তার স্বামী বিদ্যালয়ের সভাপতি বাবুসোনাকে কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করতে বারণ করেছিলেন। কিন্তু তা মানেননি বাবুসোনা। এনিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনাও হয় বাড়িতে।
কামরুল ইসলাম ও স্নিগ্ধার পরকিয়ার বিষয়টি নিয়ে গত ৩০ মার্চ কামরুলের লোকজন ও বাবুসোনার বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। এ বিষয়টিও কামরুল ও তার প্রেমিক স্নিগ্ধা মেনে নিতে পারেনি। এ কারণেই কি তড়িঘরি করে ২৯ মার্চ রাতে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে বাবুসোনাকে হত্যা করে মরদেহ মাটিচাপা দেয়া হয়, সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এদিকে এলাকাবাসীর অভিযোগ, রাধাবল্লভ এলাকায় বসবাসকারি কামরুল ইসলাম বিকৃত স্বভাবের মানুষ ছিলেন। ছাত্রাবস্থায়ও একাধিক নারীর সাথে তার পরকিয়ায় সম্পর্ক ছিল। ঘরে সুন্দরি স্ত্রী থাকার পরও তিনি স্নিগ্ধা ভৌমিককের সাথে পরকিয়ায় জড়িয়ে পড়েন।এ ছাড়া কামরুল অর্থলোভীও। বাবুসোনার টাকা পয়সা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য তার স্ত্রীর সাথে পরকিয়ার জড়িয়ে পড়েন। প্রেমিকা স্নিগ্ধা তাকে অনেক টাকা দিয়েছেন। এ কারণেই সহকারী শিক্ষক পদে চাকুরি করে রাধাবল্লভ এলাকায় জমি কিনে দ্বিতীয়তলা বাড়ি করতে পেরেছেন কামরুল। নামে বেনামে তার অনেক ব্যবসাও রয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আল আমিন বলেন, কামরুল ইসলাম ১০দিনের রিমান্ডের প্রথম দিনে বেশ কিছু তথ্য দিয়েছেন। আমরা সেগুলো যাচাই বাছাই করে দেখছি।
তিনি বলেন, কামরুল খুব চালাক প্রকৃতির লোক। কোন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলেই অসুস্থতার অজুহাতে তা এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেন। এছাড়া স্নিগ্ধা ভৌমিকও জিজ্ঞাসাবাদে তার স্বামী বাবুসোনার বিষয়ে এবং পরিবারের সদস্যদের সম্পর্কে নানা তথ্য দিয়েছেন।
কোতয়ালি থানার ওসি বাবুল মিয়া বলেন, ‘রথীশ চন্দ্র ভৌমিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৫জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরমধ্যে প্রধান আসামি কামরুল ইসলাম ১০ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। বাকিরা জেল হাজতে। মামলাটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর হওয়ায় আমরা যেসব তথ্য পাচ্ছি তা মিডিয়ার সামনে বলছি না। তবে এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে অনেক তথ্যই পাওয়া গেছে, সেগুলো আমরা যাচাই করে দেখছি।’
এর আগে গত ২৯ মার্চ রাতে ভাত ও দুধের সাথে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে বাবুসোনাকে অজ্ঞান করে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করেন স্ত্রী স্নিগ্ধা ভৌমিক ও তার প্রেমিক কামরুল ইসলাম। এরপর বাবুসোনার মরদেহ আলমারিতে ভরে ৩০ মার্চ সকালে ভ্যানে করে তাজহাট মোল্লাপাড়ায় কামরুলের ভাই খাদেমুল ইসলামের নির্মাণাধীন বাড়ির মেঝেতে গর্ত ঘুরে পুঁতে রাখেন। পরে ওইদিন বিকেল থেকে স্নিগ্ধা প্রচারণা চালান তার স্বামী সকালে বেরিয়ে আর ফেরেননি। নিখোঁজের ৫দিন পর গত ৩ এপ্রিল স্নিগ্ধা ভৌমিক ও তার প্রেমিক কামরুল ইসলামের স্বীকারোক্তি মোতাবেক র্যা ব বাবুসোনার গলিত মরদেহ উদ্ধার করে। এব্যাপারে বাবুসোনার ছোট ভাই সুশান্ত ভৌমিক বাদি হয়ে কোতয়ালি থানায় একটি মামলা করেন।