প্রশাসন যদি সমস্যার সমাধান না করতে পারে তাহলে ১৩ তারিখের পর থেকে বরিশাল বিভাগীয় দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলীয় রুটের সকল সমিতি সমূহের গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে বলে হুশিয়ারী দেন বাস মালিক সমিতির নেতারা। দীর্ঘদিন যাবৎ বরিশাল থেকে সরাসরি ৬ রুটে বাস চলাচল বন্ধ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে বরিশাল-পটুয়াখালী-বরগুনা মালিক ও শ্রমিক সমন্বয় পরিষদ। বুধবার বিকেলে রূপতলীস্থ সংগঠনের নিজ কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ঝালকাঠি জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি ও ঝালকাঠি শ্রমিক ইউনিয়ন কর্তৃক বরিশালের রূপাতলী থেকে পশ্চিমাঞ্চলের ৬টি রুট এবং নলছিটি অঞ্চলের গাড়িসহ বরিশাল-বরগুনা ভায়া চান্দুখালী রুটের গাড়ি চলাচলে বাঁধা প্রদানের প্রতিবাদে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
এসময় লিখিত বক্তব্যে বরিশালের রূপাতলী মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক কাওছার হোসেন শিপন বলেন, এসময় তিনি বলেন আগামী ১৩ মার্চের মধ্যে যদি প্রশাসন সমস্যার সমাধান না করে তাহলে ১৩ তারিখের পর থেকে বরিশাল বিভাগীয় দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলীয় রুটের সকল সমিতি সমূহের গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, ঝালকাঠি জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতিতে নতুনভাবে কোন গাড়ির প্রয়োজন না থাকা সত্বেও সমিতির নেতারা অর্থ ও স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে ও দলীয় ক্ষমতার দাপটে ঝালকাঠি সমিতিতে নতুন মালিক সদস্য তৈরী করে ২৫টি বাস ক্রয় করানো হয়।
ঝালকাঠির বর্তমান পৌর মেয়র লিয়াকত হোসেন তালুকদারের দুই ছেলে মনিরুল ইসলাম তালুকদার ও আমিনুল ইসলাম তালুকদারের নামে ২টি করে বাস এবং ঝালকাঠি চেম্বার এন্ড কমার্সের সভাপতি মাহবুব হোসেন, ঝালকাঠি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সুলতান হোসেন খান, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মিঠু, ঝালকাঠির আইনজীবি আ: মান্নান রসূল, পৌর কাউন্সিলর হুমায়ন কবির খান, রেজাউল করিম জাকির, হাফিজ আল মামুন, ঝালকাঠি চেম্বার্স এন্ড কমার্সের সাবেক সভাপতি সালেক আহম্মেদ ও ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খান সাইফুল্লাহ পনিরের নামে ১টি করে মোট ১১টি বাস ক্রয় হয়েছে। এছাড়া আরো অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে সদস্য গ্রহণ করে মোট ২৫টি বাস ক্রয় করানো হয়। তাদের বাস ক্রয়ের দরকার না থাকা সত্বেও এই বাসগুলো ক্রয় করে বিপাকে পড়েছে ঝালকাঠি মালিক সমিতি।
তারা আমাদের উপর চাপ প্রয়োগ করে পটুয়াখালী ও কুয়াকাটাতে তাদের বাস চালাতে চাচ্ছে। সে দাবী আমরা মেনে না নেওয়ায় গুরুত্বপূর্ন ৬টি রুটে সরাসরি বাস চলাচলই বন্ধ করে দিয়েছে ঝালকাঠি মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়ন। বিভাগীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনেকবার বৈঠকের চেষ্ঠা হয়েছে তবে তাদের একঘেয়ামীর কারণে কোন সমাধান হয়নি। যে কারণে ভুক্তভোগী হচ্ছে সাধারণ যাত্রীরা। মঙ্গলবারও বিভাগীয় প্রশাসনের সাথে সমঝোতা বৈঠকের কথা ছিল। তবে সেই বৈঠক শেষ পর্যন্ত হয়নি। সংবাদ সম্মেলনে বরিশাল বিভাগীয় সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। প্রসঙ্গত: সর্বপ্রথম ২০১৭ সালের ১৮ থেকে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বরিশাল থেকে ১০ রুটে সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় ঝালকাঠি বাস মিনিবাস মালিক সমিতি। প্রশাসনের আশ্বাসে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেয়া হয় ২ জানুয়ারী বৈঠকে সমাধান করার কথা বলে।
কিন্তু ২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারী ফের ধর্মঘট শুরু হয়। মূলত ২ জানুয়ারী বিকেলে বিভাগীয় কমিশনারের আহ্বানে ডাকা সৃষ্ট দ্বন্দের সমঝোতা বৈঠকে রূপাতলী বাস মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত না হওয়ায় এ ধর্মঘটের ডাক দেয় ঝালকাঠী বাস মালিক সমিতি। এর পর প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুরোধে টানা ১৯ দিন পরে ২২ জানুয়ারী ৫ ঘন্টা চলাচলের শেষে সকাল ১০টা থেকে ফের নেতৃবৃন্দদের দ্বিধাদ্বন্দে বরিশাল থেকে পশ্চিমাঞ্চলের ৬টি রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বরিশাল সফরকে ঘিরে ২৪ জানুয়ারী থেকে প্রশাসনের আশ্বাসে আবারো বাস চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর দীর্ঘদিন পার হয়ে গেলেও বিষয়টি নিয়ে কোন সমাধান না হওয়ায় ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে আবারো বরিশাল থেকে সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। সেই থেকেই আজ পর্যন্ত ধর্মঘট চলছে।