বরিশাল নগরীর বাজার রোডে দুই গৃহকর্মীকে নির্যাতনের ঘটনায় নির্যাতনকারী দম্পত্তিকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের করা শিশু আইনের মামলায় গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তাদের বরিশাল অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রেরণ করা হলে আদালতের বিচারক মারুফ আহম্মেদ জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। এদিকে এর আগে গৃহকর্মী আশফিয়া (১৫) ও আয়শা (১২) কে নির্যাতনে ব্যবহৃত তিনটি শিকল ও তিনটি তালা উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার এসআই সঞ্জীব চন্দ্র শীল বাদী হয়ে শিশু আইনে বাজার রোডের ব্যবসায়ী জুয়েল আহম্মেদ ও তার স্ত্রী ইসরাত জাহান দিনার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র সহকারী কমিশনার মো: শাখাওয়াত হোসেন জানান, আটককৃতদের বাজার রোডস্থ এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে তিনটি শিকল ও তিনটি তালা উদ্ধার করা হয়েছে। শিকল ও তালা দিয়ে আশফিয়া ও আয়শাকে বেধে রাখা হত বলে পুলিশকে জানায় আশফিয়া। আশফিয়ার কেউ না থাকায় মামলার বাদী হয়েছে পুলিশ। নির্যাতনের ঘটনায় শিশু আইনের ৭০ ধারায় আটককৃতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। উল্লেখ্য, শিকল দিয়ে বেধে নির্মম ভাবে নির্যাতনের অভিযোগে সোমবার নগরীর বাজার রোড থেকে ব্যবসায়ী জুয়েল ও তার স্ত্রী দিনাকে আটক করে পুলিশ।
উল্লেখ্য বরিশাল নগরীতে দুই গৃহকর্মীকে দেড় বছর ধরে নির্যাতনের ঘটনায় সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় নগরীর বাজার রোড এলাকার নিজ বাসা থেকে গৃহকর্তা ও তার স্ত্রীকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতরা হলেন, বাজার রোডের এএন্ডজে এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটর জুয়েল আহম্মেদ ও তার স্ত্রী ইসরাত জাহান দিনা। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার এসএম রুহুল আমিন জানান, গৃহকর্তা ও তার স্ত্রীর নির্যাতনের শিকার হয়ে আসফিয়া নামের একটি মেয়ে তাদের বাসা থেকে পালিয়ে যায়।
সে পালিয়ে গিয়ে এয়ারপোর্ট থানাধীন দক্ষিণ বাঘিয়া এলাকায় চলে যায়। তারপর পুলিশ সেখান থেকে তাকে উদ্ধারের পর আসফিয়া পুলিশের কাছে নির্যাতনের কথা জানান। তার সাথে আরো এক গৃহকর্মী আয়শাকেও নির্যাতন করা হয় বলেও জানায় আসফিয়া। সেই সূত্র ধরে তাকে নিয়ে পুলিশ এই বাসায় এসে নির্যাতনের সত্যতা পায় এবং অপর গৃহকর্মীকেও উদ্ধার করা হয়। ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় ওই বাসার গৃহকর্তা জুয়েল ও তার স্ত্রী দিনাকে আটক করা হয়েছে।
পুলিশ কমিশনার জানান, দুই গৃহকর্মীকে এই বাসায় শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হত। এদের দুইজনকেই জোড় করে আটকে রেখে যে নির্যাতন করা হয়েছে তার প্রমাণ মিলেছে তাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গে।
এসএম রুহুল আমিন বলেন, গৃহকর্তী ইসরাত জাহান দিনার সাথে কথা বলেছি আমরা। তিনি উচ্চ শিক্ষিত একজন নারী। এমন শিক্ষিত লোকজনদের দ্বারা এমন আচরণ আসলেই খুব দুঃখজনক।
নির্যাতনের শিকার আসফিয়া জানায়, দেড়বছর যাবৎ তাকে আটকে রাখা হয়েছিল এই বাসায়। ঠিকমত খাবার দিলেও নির্যাতন করা হত প্রচুর। এই নির্যাতন থেকে বাঁচতে সে পালিয়ে এয়ারপোর্ট থানাধীন দক্ষিণ বাঘিয়া এলাকার বাসিন্দা রেনু বেগমের বাসায় গিয়ে পানি পান করতে চাই এবং সেখানে বসে এই ঘটনা বলি। এরপরেই পুলিশ আমাকে সেখান থেকে নিয়ে যায়।
জানা গেছে, ২৯নং ওয়ার্ড এলাকার রাজ্জাক খান সড়কের বাসিন্দা রাহাত হাওলাদার এক সংবাদকর্মীকে বিষয়টি জানানোর পর ওই সংবাদকর্মী পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করলে গৃহকর্মীকে উদ্ধার করা হয়।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র সহকারী কমিশনার মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত দুইজনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে এবং নির্যাতনের শিকার দুই গৃহকর্মীকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে আনা হয়েছে।