শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) অধ্যাপক ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলা হয়েছে মাত্র চার সেকেন্ডের মধ্যে। আর হামলার মিনিটখানেকের মধ্যেই তাকে সাদা একটি গাড়িতে করে হাসপাতালের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়।হাতে আসা সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্নেষণ করে পাওয়া গেছে ঘটনার সময়ের আরও অনেক তথ্য।
৩ মার্চ শনিবার বিকেল ৫টা ১ মিনিট থেকে ফুটেজের শুরু। তখন শাবির হ্যান্ডবল গ্রাউন্ডের মুক্তমঞ্চে চলছে রোবোফাইট। শ’দুয়েক শিক্ষার্থী ঘিরে রেখেছে ফাইটের জায়গাটি। মুহম্মদ জাফর ইকবালসহ বাকি শিক্ষকরা মঞ্চে সোফায় বসে ছিলেন। অতিথিদের রোদ-বৃষ্টি থেকে বাঁচাতে দেওয়া হয়েছিল তিনটি বড় ছাতা। বিকেল ৫টা ১৫ মিনিট থেকে মঞ্চের ওপর বাড়তে থাকে শিক্ষার্থীদের ভিড়। ৫টা ৩৮ মিনিটে বৃষ্টির কারণে খেলায় সাময়িক বিরতি। এ সময়ই জাফর ইকবালের ওপর হামলা করে ফয়জুর। পরপর চারবার কেঁপে ওঠে মাঝখানের ছাতাটি। মাত্র চার সেকেন্ডের হামলায় আহত হন জাফর ইকবাল। সঙ্গে সঙ্গে তাকে টান দিয়ে সরিয়ে দেন সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরা। সোফার পেছনে ফয়জুরকে ধরে ফেলেন দু’জন পুলিশ সদস্যসহ কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষার্থী। মঞ্চের ওপরেই চলে গণধোলাই। এর মধ্যেই দাঁড়ানো একটি মাইক্রোবাসে চালককে দৌড়ে উঠতে দেখা যায়। মাইক্রোবাসটি পিছিয়ে জাফর ইকবালসহ কয়েকজনকে নিয়ে হামলার মিনিটখানেকের মধ্যেই ওসমানী মেডিকেল কলেজের দিকে রওনা দেয়।
হামলার আকস্মিকতায় প্রথমে সামনে দাঁড়ানো শিক্ষার্থীরা দূরে সরে যেতে চেষ্টা করেন। তবে কিছুক্ষণের মধ্যে অন্যান্য জায়গা থেকেও শিক্ষার্থীদের ঘটনাস্থলে ছুটে আসতে দেখা যায়। এ সময় হামলাকারী ফয়জুরকে মঞ্চ থেকে নিচে নামিয়ে পেটানো হয়। প্রায় একই সময় একজন আহত পুলিশ সদস্যকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে শিক্ষার্থীদের সহায়তায় নিয়ে যেতে দেখা যায়। পর পরই শিক্ষা ভবন ‘এ’ এর সামনে থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একটি মাইক্রোবাস হ্যান্ডবল গ্রাউন্ডে আসে, পরে একজন ছাত্রের কাছে ঘটনা শুনে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের দিকে চলে যায়।
ফুটেজে আরও দেখা যায়, বিকেল ৫টা ৪৪ মিনিটে চারজন শিক্ষার্থী গণধোলাই থেকে বাঁচাতে হামলাকারীকে ধরাধরি করে শিক্ষা ভবন ‘এ’ এর দিকে নিয়ে আসে, পথে একজন পুলিশ সদস্যও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এসে যোগ দেয়। নিয়ে আসার সময় কয়েকজন শিক্ষার্থী ফয়জুরকে মারতে এলে শিক্ষক ও বাকিরা তাদের নিবৃত্ত করেন। ফয়জুরকে ভেতরে নেওয়ার পর শিক্ষা ভবন ‘এ’ এর সামনে বাড়তে থাকে শিক্ষার্থীদের ভিড়। এ সময় অনেককেই কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায়।
অধ্যাপক জাফর ইকবাল যেখানে বসে ছিলেন, তার ঠিক পেছনেই দাঁড়িয়ে ছিল হামলাকারী ফয়জুর। দুই বহিরাগত ও চার পুলিশ সদস্য ছাড়া শিক্ষার্থীরাও পেছনে দাঁড়িয়ে ছিল। মঞ্চে সোফায় জাফর ইকবালের পাশে যারা বসেছিলেন তারা সবাই শিক্ষক।