বানভাসি মানুষের দরকার খাবার

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

পানিতে তলিয়ে থাকা অগণিত বন্যার্ত মানুষের জন্য এখন সবচেয়ে বড় প্রয়োজন খাদ্য। দুর্গতদের সিংহভাগই খাবার পাচ্ছেন না।

তারা না খেয়ে কিংবা অর্ধাহার-অনাহারে সময় পার করছেন। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন মহল ত্রাণ তত্পরতা চালালেও তা প্রকৃত দুর্গতদের কাছে পৌঁছাচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে সর্বস্ব হারানো এসব মানুষের জীবন হয়ে উঠেছে দুঃসহ এবং অবর্ণনীয়।

এদিকে দেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি না হলেও কোনো কোনো অঞ্চলে নদ-নদীর পানি কিছুটা কমেছে। এর প্রভাব পড়েছে দুর্গত এলাকায়। ফলে কোথাও কোথাও পানি সামান্য পরিমাণে নেমেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, চলতি বন্যার দ্বিতীয় দফায় এ পর্যন্ত পাউবোর এক হাজার ৯০০ কিলোমিটার বাঁধের এক-তৃতীয়াংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর জানাচ্ছে, বন্যায় ২২ জেলার ৩৩ লাখ ২৭ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, নীলফামারী, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, খাগড়াছড়ি, দিনাজপুর, জামালপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, ময়মনসিংহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাজবাড়ী, নওগাঁ, জয়পুরহাট, যশোর ও রাঙামাটি জেলার ১২২টি উপজেলা ও ৩৮টি পৌরসভা এখনো প্লাবিত রয়েছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত দেশের ৯০টি পয়েন্টের মধ্যে ৪৮টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি এবং ৪০টি পয়েন্টে হ্রাস পেয়েছে। এ ছাড়া ২৮টি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সিরাজগঞ্জে যমুনার পানি বিপদসীমার ১৪৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গতকাল পাঠানো আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—

কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি কিছুটা কমেছে। তবে তা এখনো বিপদসীমার ৬৭ সেন্টিমিটার ওপরে রয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্ট ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার কমলেও তা বিপদসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপরে আছে। ধরলার পানি বিপদসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে চরম খাদ্য সংকটে পড়েছে এ অঞ্চলের বানভাসিরা। জেলার ৯ উপজেলার ৮২০ গ্রামের ৪ লাখ মানুষ এখন পানিবন্দী জীবনযাপন করছে। তারা ঘরবাড়ি ছেড়ে গবাদি পশুসহ পাকা সড়ক, উঁচু বাঁধ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে। এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে চরম খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানি সংকট। ত্রাণের নৌকা দেখে বানভাসিরা ছুটে গেলেও বেশির ভাগের ভাগ্যেই ত্রাণ জুটছে না। সরকারি-বেসরকারিভাবে ত্রাণ তত্পরতা শুরু হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। জানা গেছে, বন্যায় পাঁচ দিনে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের বেশির ভাগই শিশু।

লালমনিরহাট : তিস্তার অববাহিকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও ধরলার তীরবর্তী অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে। গত ৭ দিনেও স্বাভাবিক হয়নি লালমনিরহাটের ট্রেন যাতায়াত ব্যবস্থা। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়ে চরম খাদ্য সংকট। ছড়িয়ে পড়েছে নানা পানিবাহিত রোগ। গতকালও জেলার ৩টি হাসপাতালে ৫৩ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে। এদিকে লালমনিরহাট রেল বিভাগের বিভিন্ন জায়গায় রেললাইনের নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে রাস্তা ধসে যাওয়ায় ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হতে আরও কত দিন সময় লাগবে- তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি রেল বিভাগের কোনো কর্তাব্যক্তিই। তবে লালমনিরহাট রেল বিভাগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এসব রুটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হতে আরও ১৫ দিন লাগতে পারে। অন্যদিকে অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এখনো বন্যার পানি থাকায় কবলিত এলাকার ৩২৫টি বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। ১৯ আগস্ট থেকে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।

দিনাজপুর : দিনাজপুরে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। পাশাপাশি শহরের কিছু অংশ এখনো পানির নিচে ডুবে আছে। তবে সব নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যায় দিনাজপুর সদর উপজেলার কাউগাঁও এলাকায় রেললাইন ছাড়াও আরও কয়েকটি স্থান ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এখনো দিনাজপুরের সঙ্গে রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে বন্যার পানি সরে যাওয়ার পর সড়ক-মহাসড়ক ও রাস্তাঘাট ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেছে। এতে অনেক সড়কেই যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

এদিকে প্লাবিত বিভিন্ন এলাকার পানি কমতে শুরু করলেও বেড়েছে খাদ্য সংকট ও রোগবালাই। প্রশাসনের ১২৫টি স্বাস্থ্য ক্যাম্পের পাশাপাশি বন্যাদুর্গতদের চিকিৎসা দিচ্ছেন সেনা ও বিজিবির সদস্যরা।

সিরাজগঞ্জ : যমুনার পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ১২ ঘণ্টায় চার সেন্টিমিটার কমে এখনো বিপদসীমার ১৪৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার ৫ উপজেলার তিন শতাধিক গ্রামের তিন লাখ মানুষ পানিবন্দী। এর মধ্যে অনেকে ওয়াপদা বাঁধে পলিথিন ও টিন দিয়ে ঝুপড়ি তুলে, অনেকে নিজ বাড়িতেই খাট-চৌকি উঁচু করে, আবার কেউ ঘরের চালে উঠে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। চরাঞ্চলের টিউবওয়েল তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। মানুষ সার্বক্ষণিক পানিতে চলাফেরা করায় তাদের হাত-পায়ে ঘা দেখা দিয়েছে। রান্না করার উপকরণ না থাকায় অনেকে অর্ধাহার-অনাহারে দিনযাপন করছে। এসব মানুষ অবিলম্বে শুকনো খাবার ও ওষুধের জন্য সরকারে কাছে দাবি জানিয়েছে। সরকারিভাবে ৩৩৫ মেট্রিক টন চাল ও নগদ সাড়ে ১২ লাখ টাকা বিতরণ করা হলেও তা অনেকের কাছে পৌঁছেনি। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। কোথাও কোথাও পানি চুইয়ে চুইয়ে ঢোকায় শহরের মানুষ আতঙ্কে রয়েছেন।

এদিকে বেলকুচিতে বন্যার পানি ও পুকুরের পানিতে পড়ে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এরা হলো রাজাপুর ইউনিয়নের নাগগাতী গ্রামের আবদুল আওয়ালের ছেলে নিরব (৬) ও দৌলতপুর ইউনিয়নের বওড়া গ্রামের জহুরুল ইসলামের ছেলে হযরত আলী (৮)।

টাঙ্গাইল : যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় টাঙ্গাইলের নাগরপুর, কালিহাতী, মির্জাপুর, বাসাইল, গোপালপুর ও ভূঞাপুরে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। ৭টি উপজেলার ৫ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছেন। বন্ধ রয়েছে অর্ধশতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় গোপালপুর-তারাকান্দি সড়কে সব প্রকার যানবাহন চলাচলও বন্ধ রয়েছে। জামালপুরের তারাকান্দি-গোপালপুর-ভূঞাপুর সড়কের পিংকনা অংশের বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় গোপালপুর ও ভূঞাপুরের অন্তত ১০টি গ্রাম নতুন করে বন্যাকবলিত হয়েছে।

জামালপুর : যমুনার পানি সামান্য হ্রাস পেলেও জামালপুরে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। পানি ১০ সেন্টিমিটার কমে গতকাল সকালে বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপদসীমার ১২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। উজানে পানি কিছুটা হ্রাস পেলেও ভাটিতে  ব্রহ্মপুত্র, ঝিনাই, জিঞ্জিরামসহ শাখা নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বকশীগঞ্জ ও জামালপুর সদরের বিস্তীর্ণ এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। এদিকে সরিষাবাড়ীর স্থল এলাকায় তারাকান্দি-ভূঞাপুর সড়কবাঁধ ২০ মিটার এলাকায় ভেঙে সরিষাবাড়ীর বিস্তীর্ণ এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে

রাজশাহী : পাঁচ দিন পার হলেও রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার ভীমনগর এলাকায় শিবনদীর বেড়িবাঁধ ভাঙন বন্ধ করতে পারেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। বাঁধ বন্ধ না হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ও কেশরহাট পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা বুধবার রাতে বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, স্থানীয় সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন, সংরক্ষিত সংসদ সদস্য আখতার জাহানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করলেও বন্যার্তরা এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার ত্রাণ ও সহযোগিতা পাননি। ফলে তারা অর্ধাহার-অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন।

গাইবান্ধা : ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, তিস্তার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে করতোয়ার পানি ৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপরে রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, পানি কমতে থাকলেও ব্রহ্মপুত্র এখনো বিপদসীমার ৯০ সেন্টিমিটার, ঘাঘট ৭৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একমাত্র তিস্তা বিপদসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে। এদিকে পানি কমতে থাকলেও বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত অবস্থায় রয়েছে। পানিতে ডুবে সাদুল্যাপুর ও সুন্দরগঞ্জে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। জেলার সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বন্যাকবলিত সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা, গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ি ও সদর উপজেলার ২ লাখ ৮৪ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছেন। জেলায় মোট ৯০টি আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।

বগুড়া : সারিয়াকান্দি, ধুনট ও সোনাতলা উপজেলার বানভাসিরা দুর্ভোগে রয়েছেন। চারদিকে পানি থাকায় রান্না, স্যানিটেশনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। শুকনা স্থান মিলছে না বানভাসিদের। খাদ্য সংকটে তারা গরু-ছাগল নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। জানা গেছে, সারিয়াকান্দির ১২ ইউনিয়নের মধ্যে ৯টি ইউনিয়নে ৬৭টি গ্রামের প্রায় ৭৩ হাজার মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। গতকাল দুপুরে বন্যাকবলিত হাটশেরপুর, কাজলা ও চালুয়াবাড়ী ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৩ হাজার পরিবারের মাঝে শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। ওয়ান ব্যাংকের আয়োজনে সংসদ সদস্য আবদুল মান্নান এসব ত্রাণ বিতরণ করেন।

নাটোর : সিংড়ায় আত্রাই নদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১১ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৪৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রতিদিনই পানি বাড়ছে। সিংড়ায় স্থাপিত পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির উপকেন্দ্রের চারদিকে বন্যার পানি বাড়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। স্থানীয়দের আশঙ্কা, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে যে কোনো মুহূর্তে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে পানি ঢুকে কারিগরি ত্রুটির কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার জানিয়েছেন, গতকাল আবহাওয়া শুকনা থাকায় নতুন করে কোনো এলাকা প্লাবিত হবে না বলে আশা করা হচ্ছে।

মুন্সীগঞ্জ : মুন্সীগঞ্জের ৩ উপজেলার নিম্নাঞ্চলে বেশকিছু এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন শ্রীনগর, লৌহজং ও টঙ্গীবাড়ি উপজেলার কয়েক হাজার পরিবার। পদ্মা তীরের বাড়িঘর জলমগ্ন ছাড়াও বহু ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। চর এলাকায় বানভাসি মানুষ দুর্ভোগে আছেন বেশি। পদ্মার পানি সকালে ভাগ্যকুল পয়েন্টে বিপদসীমার ৬ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

মাদারীপুর : মাদারীপুরের পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় পদ্মায় পানি বেড়েছে ৮ সেন্টিমিটার। পানির তোড়ে শিবচরের পদ্মা বেষ্টিত জনবিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলের কাঁঠালবাড়ি ও চরজানাজাতে ব্যাপক নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। কাঁঠালবাড়ির কাউলিপাড়া দারুল উলুম কওমি মাদ্রাসাসহ শতাধিক বাড়িঘর নদীভাঙনের মুখে রয়েছে। এদিকে পানি বাড়ায় চরাঞ্চলের মাদবরচর ও বন্দরখোলার হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় খাদ্যাভাবের মধ্যে জীবনযাপন করছেন। এখনো ত্রাণ তত্পরতা শুরু হয়নি।

নওগাঁ : জেলার ১১টি উপজেলার মধ্যে ৯টি উপজেলার মানুষ এখন বন্যাকবলিত। রানীনগর, মান্দা ও আত্রাই উপজেলার ১৫টি স্থানে আত্রাই ও ছোট যমুনার বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জেলা সদরের সঙ্গে আত্রাই উপজেলার ও নাটোর জেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। আত্রাই, ছোট যমুনা, ও পুনর্ভবা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ফরিদপুর : অনাহার-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে ফরিদপুর পৌরসভার অম্বিকাপুর রেল কলোনির দুই শতাধিক পরিবারের সহস াধিক সদস্য। ঘরের মধ্যে হাঁটু পরিমাণ পানি ঢুকে যাওয়ায় সেখানে বসবাস করা কঠিন হয়ে উঠেছে। প্রতি মুহূর্তে সাপে কাটার ভয় তাদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। অনেকেই জানান, দুই মাস ধরে পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। এখন পর্যন্ত পানি অপসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

শেরপুর : শেরপুরের পুরাতন ব্রহ্মপুত্রসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় শেরপুর-জামালপুর সংযোগ সড়কে বাস-ট্রাকসহ অন্যান্য ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছে সওজ। সদর উপজেলার চর পক্ষীমারি ইউনিয়নের পোড়ার দোকান নামক স্থানের ডাইভারশনে জামালপুর হয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল এবং উত্তরবঙ্গ প্রবেশের এ সড়কটিতে যানবাহন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করায় দুর্ভোগে পড়েছেন ওই রুটে চলাচলকারী যাত্রীরা। এসব যাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে পানির প্রবল সে াতে নৌকায় চলাচল করছেন।

গাজীপুর : বন্যাজনিত কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শুধু ২০১৫ সালের ডিগ্রি পাস ও সার্টিফিকেট কোর্সের আগামী ১৯, ২০ এবং ২১ আগস্ট অনুষ্ঠিতব্য পরীক্ষাসমূহ স্থগিত করা হয়েছে। এ নিয়ে বন্যার কারণে তৃতীয় দফা পরীক্ষা স্থগিত করা হলো।

মানিকগঞ্জ : পদ্মা-যমুনা নদীতে সে াতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় এবং সচল ফেরি স্বল্পতায় ব্যাহত হচ্ছে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটের ফেরি সার্ভিস। ফলে উভয় ঘাটে গতকাল রাত পর্যন্ত পারাপারের অপেক্ষায় ছিল ৭ শতাধিক যানবাহন। ভোগান্তি পোহাচ্ছিলেন আটকে পড়া যানবাহনের যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকরা।

বিআইডব্লিউটিসি আরিচা অঞ্চলের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. জিল্লুর রহমান জানান, নদীতে তীব্র সে াতের কারণে এই নৌরুট পাড়ি দিতে ফেরিগুলোর প্রায় দিগুণ সময় লাগছে। তাছাড়া নৌরুটে ফেরি বহরের ১৬টির মধ্যে ৪টি ফেরি পাটুরিয়া ভাসমান কারখানায় মেরামতে থাকায় ট্রিপ সংখ্যা অনেক কমে গেছে। নদীর সে াত কমে গেলে এবং সবগুলো ফেরি ট্রাফিকে যুক্ত হলে এই নৌরটের ফেরি সার্ভিস স্বাভাবিক হবে।

জানা গেছে, মানিকগঞ্জের আরিচা পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ১৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বিপদসীমার ৭৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে অভ্যন্তরীণ নদ-নদী ধলেশ্বরী, ইছামতি, কালিগঙ্গার পানি বাড়লেও এগুলো এখনো বিপদসীমার নিচে রয়েছে।