ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে ১২ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

বেসরকারি ৩২টি বিশ্ববিদ্যালয়কে শোকজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এদের মধ্যে ১২টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণে কোনো ধরনের উদ্যোগ না নেয়ায় সেগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হবে।

রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন  বলেন, ‘৫১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১৯টি স্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম শুরু করেছে। বাকি ৩২টির মধ্যে ১২টি ন্যূনতম কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ওইসব প্রতিষ্ঠানে আমরা ছাত্রছাত্রী ভর্তি বন্ধ করে দেব। তবে এমন কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তাদের কাছ থেকে ব্যাখা চাওয়া হবে যে, কেন তারা (কর্তৃপক্ষ) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ও আইনের বিধান কেন প্রতিপালন করেনি।’

সচিব বলেন, আমরা এমন সিদ্ধান্তের জন্য ভর্তি হওয়া ছাত্রছাত্রীদের কোনো ক্ষতি বা সমস্যায় ফেলতে চাই না। তারা তাদের শিক্ষাজীবন অব্যাহত রাখবে। ভর্তি হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়েই তারা লেখাপড়া করতে পারবে।’

সচিব আরও বলেন, ‘শুধু উল্লিখিত ১২টিই নয়, স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়া, বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন না নেয়া বা আইন লঙ্ঘন করা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাছেও ব্যাখা চাওয়া হবে। তারা যদি সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারে, তাহলে আইন অনুযায়ী এবং ইতিপূর্বে মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি থেকে পাঠানো পত্রে নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

সচিবের বক্তব্যের রেশ ধরে ইউজিসি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, স্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম পরিচালনা-সংক্রান্ত অপরাধে ৩২টি বিশ্ববিদ্যালয় জড়িত। কিন্তু আয়-ব্যয়ের নিয়মিত নিরীক্ষা না করা, প্রতিবেদন না দেয়া- এমন নানা আরও কিছু বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়া তথাকথিত বড় বিশ্ববিদ্যালয়ও আছে। ওইসব বিশ্ববিদ্যালয়কেও শোকজ করা হবে। সেই হিসেবে শোকজপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা আরও বাড়বে।

জানা গেছে, গত বছর জানুয়ারিতে আলটিমেটাম দেয়া ৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ৭টি স্থায়ী ক্যাম্পাসে গেছে। বাকিগুলোর কোনোটি জমি কিনেছে আবার কোনোটি আংশিক কার্যক্রম শুরু করেছে স্থায়ী ক্যাম্পাসে। আবার এমন বিশ্ববিদ্যালয় আছে যেগুলো স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার কথা বললেও ভাড়াবাড়িতেই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

রাজধানীর শুক্রবাদ এলাকায় মার্কেট দখল করে এবং ডজনখানেক ভাড়াবাড়িতে কার্যক্রম চালানো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা বলেন, বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয়টির ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। তারা স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার দাবি করলেও বেশিরভাগ কার্যক্রম ভাড়াবাড়িতেই চলছে। শুধু তাই নয়, স্থায়ী ক্যাম্পাসে প্রোগ্রাম চালানোর কথা বলে অনুমতি নিয়ে তা ভাড়াবাড়িতে চালাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

শুধু এটিই নয়, আরও বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয় একই ধরনের অপকর্ম করে যাচ্ছে। ওইসব বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের ক্ষেপিয়ে রাস্তায় নামিয়ে নিজেদের বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ভয়ও দেখাচ্ছে। তাই মন্ত্রণালয়-ইউজিসি ওইসব অসৎ ব্যক্তির খারাপ উদ্দেশ্য মাথায় রেখেই এগুচ্ছে। এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হবে যে- তারা অসৎ কাজ করতে পারবে না। ছাত্রছাত্রীর অভাবে একসময় বন্ধ হয়ে যাবে। তবে এ পরিস্থিতি তৈরির আগে তাদের ‘ভালো’ হওয়ার সুযোগ দেয়া হবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন মো. বলেন, প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যলয়ের হালনাগাদ অবস্থা আমাদের কাছে আছে। আমরা তা পর্যালোচনা করছি। কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়া আমাদের উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু সবাইকে আইনের অধীনে আসতে হবে। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। এটা নিশ্চিতের পর কেউ ব্যবসা করলে করতে পারেন। কিন্তু বেপরোয়াভাবে কাউকে চলার সুযোগ দেয়া হবে না। আমাদের উদ্দেশ্য তারা (বিশ্ববিদ্যালয়) আইনের অধীনে চলবে। তাই তাদেরকে আমরা এ ব্যাপারে আগে তাগিদ দেব। পরে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, ২০১০ সাল থেকে এসব বিশ্ববিদ্যালয়কে এখন পর্যন্ত ছয়বার আলটিমেটাম দেয়া হয়েছে। এর আগে ২০১২, ২০১৪, ২০১৫ এবং ২০১৬ সালেও আলটিমেটাম দেয়া হয়। প্রতিষ্ঠার পর ন্যূনতম সাত বছর পূর্ণ হওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দেয়া আলটিমেটাম ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়।