জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা নিয়ে বিএনপি জনগণকে বিভ্রান্ত করছে বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ কেন্দ্রিয় কার্য নির্বাহী কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক। ৮ ফেব্রুয়ারী বরিশালে প্রধানমন্ত্রীর সফর উপলক্ষ্যে নগরীতে অবস্থান করছেন অ্যাডভোকেট নানক।
মঙ্গলবার সকালে বরিশাল নগরীর বটতলা ক্ষীরোদ মুখার্জী লেনের বাসায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাতকারে সাবেক এলজিইডি প্রতিমন্ত্রী নানক বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রনোদিত বলে মিথ্যাচার করছে বিএনপি। এই দলটির নেতারা বেমালুম ভুলে যাচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা হয়েছিল এক এগারোর সরকারের সময়। সেই মামলার ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে বর্তমান সরকার।
একজন আইনজীবী হিসেবে নানক বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এই দুর্নীতি মামলায় বিচারালয় যে ধৈর্য্য ও সহিঞ্চুতার পরিচয় দিয়েছে, একজন সাধারণ নাগরিকের ক্ষেত্রে এতটা ধৈর্য্য এবং সহিঞ্চুতা আদালত দেখায় না। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারী বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে একটি মামলার রায় হবে এবং এটি হবে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়। সেই মামলার রায় নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দুশ্চিন্তাগ্রস্থ কিংবা আতংকগ্রস্থও নয় বলে মন্তব্য করেন নানক।
অ্যাডভোকেট নানক বলেন, আদালত রায় ঘোষণার আগেই বিএনপি নামক দলটির দায়িত্বশীল নেতারা ওই মামলার রায় দিয়ে ফেলেছেন। এই দলটির নেতারা বুঝে গেছেন, সাক্ষী-প্রমাণের ভিত্তিতে এই মামলায় দন্ডিত হওয়া ছাড়া বেগম খালেদা জিয়ার আর কোন উপায় নেই। বিএনপি’র গঠনতন্ত্রের ৭ (ক) ধারায় বলা আছে কোন দন্ডিত ব্যক্তি বিএনপি’র সদস্য হতে পারবে না। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারির রায় ঘোষণাকে সামনে রেখে বিএনপি নেতারা হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। এই হুমকি-ধমকি তারা আওয়ামী লীগকে দিচ্ছেন না। কারণ আওয়ামী লীগ তো আদালত নয়।
তিনি বলেন, তারা হুমকি দিচ্ছেন, রায় যদি তাদের পক্ষে না যায়, অর্থাৎ রায় বিপক্ষে গেলে তারা কঠোর কর্মসূচী দেবে এবং যে কোন পরিস্থিতিরি জন্য সরকার দায়ী থাকবে। এই হুমকি সমগ্র বিচার ব্যবস্থার প্রতি হুমকি। বিএনপি ৩ বার দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল, দলটির প্রধান ৩ বার দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এমন একটি দলের দায়িত্বশীল নেতার (বেগম জিয়া) কাছ থেকে এমন বক্তব্য কোন সভ্য মানুষ যারা আইনের শাসনে বিশ্বাস করে তারা আশা করেন না। ওইদিন রায় ঘোষনাকে কেন্দ্র করে বিএনপি কি করবে সেটা তাদের ব্যাপার। রায়ে নেতিবাচক কিছু হলে তারা আন্দোলন করবে। এটি তাদের স্বাভাবিক চরিত্র। বিএনপি সম্পর্কে দেশের মানুষ সজাগ রয়েছে। ওইদিন বিএনপি আন্দোলন করলে সেটা নিয়ে আওয়ামী লীগ দুশ্চিন্তাগ্রস্থ নয়। ৮ ফেব্রুয়ারির রায় নিয়ে বিএনপি বিশৃংখলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে কিংবা আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটালে সেটি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিহত করবে। জনগণের জানমাল এবং সরকারের সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর।
এই রায়ের প্রেক্ষিতে বিচারালয়কে চ্যালেঞ্জ করে দুস্কৃতিকারীরা যাতে জনগনের জানমালের কোন ক্ষতি সাধন করতে না পারে সেজন্য সরকারকে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক।
রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দেশে কোন অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে আওয়ামী লীগ কি করবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময় এই অপশক্তির বিরুদ্ধে সতর্ক সৈনিকের দায়িত্ব পালন করছে। আওয়ামী লীগ ওই দিন সতর্কতার সাথে পরিস্থিতির দিকে নজর রাখবে।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের প্রাচীনতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগ স্বপ্নে পাওয়া কোন মহাষৌধ নয়। এই দলটির লাখ লাখ নেতাকর্মী আছে, তৃনমূল পর্যায় পর্যন্ত এই দলটির ভিত্তি মজবুত রয়েছে। কেউ যদি গণতান্ত্রিক ধারা ব্যহত করতে চায়, কেউ যদি পুলিশের উপর হামলা করে, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায়, সরকারী সম্পদের ক্ষতি সাধন করতে চায়, তাহলে সেই অপশক্তিকে সেই দুস্কৃতকারীদের পাকড়াও করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সোপর্দ করা রাজনৈতিক এবং নাগরিক দায়িত্ব।