১৫ দিন পর মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজে ক্লাস শুরু- ছাত্রীদের মধ্যে ট্রমার প্রভাব বেশি

লেখক:
প্রকাশ: ২৪ ঘন্টা আগে

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হয়েছে। যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ১৫ দিন পর গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে শুরু হয় পাঠদান। একই সঙ্গে শুরু হয়েছে নবম শ্রেণির অর্ধবার্ষিকী ও দশম শ্রেণির প্রাক নির্বাচনি পরীক্ষাও। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়—শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের চোখ-মুখে এখনো রয়েছে কিছুটা ভয়-আতঙ্ক। ছেলে শিক্ষার্থীদের তুলনায় ঐদিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মেয়ে শিক্ষার্থীরাই বেশি ট্রমার মধ্যে রয়েছে। দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের বি-গার্লস শাখার শিক্ষার্থী নুজহাত তারানুম চৌধুরী একাডেমি ভবন-১-এর ৪০৩ নম্বর কক্ষে ক্লাস শেষে ইত্তেফাককে বলে, ‘ক্যাম্পাসে অনেক বড় দুর্ঘটনায় আমরা আমাদের অনেক ছোট ভাই-বোনদের হারিয়েছি। এটা খুবই কষ্টের। কখনো ভোলার মতো নয়। অনেকেই ঐ ঘটনায় এখনো মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। কিন্তু থেমে থাকলে তো চলবে না। আমাদের সামনের দিকে এগোতে হবে। গতকাল যারা যারা ক্লাসে এসেছে, সবাই স্বাভাবিকভাবেই মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করেছি।’

 

কলেজটির অধ্যক্ষ মো. জিয়াউল আলম বলেন, ছাত্রীদের মধ্যে ট্রমার প্রভাব ছেলেদের তুলনায় বেশি দেখা যাচ্ছে। মেয়েদের জন্য আলাদা মনোযোগ দিয়ে কাউন্সেলিং চালানো হচ্ছে। আগামী তিন মাস চলবে কাউন্সেলিং। পর্যায়ক্রমে খুলবে প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বাকি শ্রেণির ক্লাস।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের পাঠদান মনোযোগ দিয়ে শুনছে। কেউ কেউ গুরুত্বপূর্ণ কথা খাতায় লিখে রাখছে। তবে প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে প্রায় ২০ ভাগ শিক্ষার্থী ক্লাসে আসেননি। নুজহাত তারানুম চৌধুরীর ক্লাসে মোট ৪৫ জন শিক্ষার্থী। উপস্থিত ছিল ৩৯ জন। ছয় জন অনুপস্থিত। দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রেজাউল মাহি বলে, ‘আগে আমরা যেভাবে, যে পরিবেশে ক্লাস করতাম, শিক্ষকদের সহযোগিতায় আমরা শিক্ষার্থীরা সবাই মিলে সেই পরিবেশ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি।’ রেজাউল মাহির শাখায় মোট শিক্ষার্থী ৩৯ জন। গতকাল শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত ছিল ২৮ জন। বাকি ১১ জন অনুপস্থিত ছিল।

কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা বলেন, এত বড় দুর্ঘটনা ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু পরিস্থিতি মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। অনেকেই এখনো মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তবে তারা স্বাভাবিকভাবে শ্রেণি কার্যক্রমে ফেরার চেষ্টা করছেন। বিজ্ঞান বিভাগের সি-গার্লস শাখার মোট শিক্ষার্থী ৪১ জন। গতকাল উপস্থিত ছিল ২৯ জন। বাকি ১২ জন ক্লাসে আসেনি।

শিক্ষক নাজমুল হোসেন খান বলেন, শিক্ষার্থীদের সবাই স্বাভাবিকভাবেই পাঠদানে মনোযোগ দিচ্ছে। ক্লাসে ঢুকে তিনি সবার খোঁজখবর নিয়েছেন। সবাই কেমন আছে, কেউ কোনো সমস্যায় আছে কি না জানতে চেয়েছেন। কোনো শিক্ষার্থী সমস্যার কথা বলেনি। ক্যাম্পাসের মূল গেট থেকে প্রবেশ করে ডান পাশে ছয়টি ক্লাস রুমের পরে ক্যাফেটরিয়ায় গিয়ে দেখা যায়, সন্তানদের স্কুলে নিয়ে এসে কয়েক জন অভিভাবক নিজেদের মধ্যে গল্প করছেন। দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইব্রাহিম হকের মা শামীমা হক বলেন, আগে সন্তানদের ক্লাসে রেখে বাসায় যেতেন। কিন্তু গতকাল তিনি ক্লাস শেষ না হওয়া পর্যন্ত থাকবেন। ক্লাস শেষে সন্তানকে নিয়েই বাসায় যাবেন।

এর আগে গত রবিবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির কলেজ শাখার (নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি) শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসেছিল। তবে ঐ দিন কোনো পাঠদান কার্যক্রম হয়নি। শিক্ষার্থীরা দুই দিন যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের আত্মার মাগফিরাত, আহত ব্যক্তিদের দ্রুত আরোগ্য কামনায় আয়োজিত দোয়া এবং শোক অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। নিজেদের মধ্যে কুশলাদি বিনিময় শেষে বাসায় ফিরে যায়। গত ২১ জুলাই উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় যেসব শিক্ষার্থী মানসিক ট্রমায় ভুগছে, তাদের কাউন্সেলিং সেবা দেওয়া হয়েছে মাইলস্টোন ক্যাম্পাসে স্থাপিত কাউন্সেলিং সেন্টারে। উদ্দেশ্য, এসব শিক্ষার্থীকে মানসিক ট্রমা থেকে বের করে আনা। পড়ালেখায় মনোযোগী করা। যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনা কাছ থেকে দেখা শিক্ষক-অভিভাবকেরাও কাউন্সেলিং নিচ্ছেন।

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও উপদেষ্টা কর্নেল (অব.) নুরুন নবী জানান, যারা এখনো ট্রমায় আছে, তারা চাইলে অন্য কোনো শাখায় কিংবা প্রতিষ্ঠানেও স্থানান্তর হতে পারবে। দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে আপাতত কোনো শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার এরই মধ্যে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তারাই সিদ্ধান্ত নেবে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে।

গত কয়েক দিনের কার্যক্রম প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ জিয়াউল আলম বলেন, ‘আমরা প্রথম থেকেই চেষ্টা করেছি গার্ডিয়ানদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে, তাদের পাশে দাঁড়াতে। প্রতিটি হাসপাতালের সঙ্গে শিক্ষক প্রতিনিধিদল কাজ করেছে। আমরা চেষ্টা করেছি কোনো ত্রুটি না রাখার। তার পরও সীমাবদ্ধতা থাকতেই পারে। তবে গার্ডিয়ানদের জানানো, মরদেহ শনাক্ত, চিকিৎসার সমন্বয়—সব জায়গায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে।’