দীর্ঘ অপেক্ষা। গণদাবী উপেক্ষা করে রাবি সমাবর্তনের জন্য পূর্বনির্ধারিত নিবন্ধন ফি নেয়ার পরেও এক বছর গত হয়েছে। অধ্যাপক মিজান-সারোয়ার স্যারদের প্রশাসন হাজার হাজার সাবেক ছাত্র-ছাত্রীদের নিবন্ধনকৃত সমাবর্তনের ভবিষ্যৎ কি হবে এ বিষয়ে কোন বিবৃতি বা বক্তব্য না দিয়েই করেছেন নীরব প্রস্থান!
সেক্ষেত্রে নতুন উদ্যোগ গ্রহণে অধ্যাপক সোবহান ও আনন্দ স্যারের প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
অথচ অ্যাকাউন্টেবিলিটি, ট্রান্সপেরেন্সি, গুড গভার্নেন্স, রেসপনসিভনেস, কাস্টমার সেটিসফেকশন, স্টেকহোল্ডার, ইফিসিয়েন্সি এন্ড ইফেক্টটিভনেস ইত্যাদি প্রত্যয়গুলো আমরা সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষকদের কাছেই অর্জন। এক্ষেত্রে সেই সম্মানিত শিক্ষক সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের কাছ থেকে উল্লিখিত প্রত্যয়গুলোর কিছু প্রায়োগিক উদাহরণ সত্যিই প্রত্যাশিত ছিল।
যাইহোক, সামনের দিকে তাকানোই শ্রেয়। তবে আমরা সত্যিই চাইব না আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা অনেকেই সামর্থ্যরে অভাবে শিক্ষাজীবনের অতি আরাধ্য সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করতে পারছে না এমন ঘটনা ঘটুক। আমরা চাইব না ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শিক্ষিত সমাজের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে এমন অপমানজনক ও অগ্রহণযোগ্য মন্তব্য শুনতে হোক- সমাবর্তন তো সবার জন্য বাধ্যতামূলক না; যাদের সামর্থ্য আছে তারা সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করবে!
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করা সকলের কাছে অন্যতম আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্নের একটা অনুষ্ঠানের নাম ‘সমাবর্তন’। এই সমাবর্তনকে ঘিরে সবাই প্রত্যাশার জাল বুনতে থাকে, নিতে থাকে নানাবিধ প্রস্তুতি যার ব্যপ্তি শুধুমাত্র কালো গাউন বা হ্যাট পরার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।
আমার ক্ষুদ্র জীবনে এমন এমন অভিজ্ঞতা জানার সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য হয়েছে যে কেউ সমাবর্তনের সময় ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করে আছে যে তাকে কিছু সঞ্চয় করতে হবে, কেউ প্রয়োজন থাকার পরও খুব একটা ছুটি নিচ্ছে না অফিস থেকে সমাবর্তনের সময় লাগবে বিধায়, কেউ এমনকি তার পরবর্তী প্রজন্ম আনয়নের মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে অপেক্ষমান আছে সমাবর্তনের অংশ হতে চাই এজন্য।
গ্রাজুয়েটদের কিছু প্রত্যাশা
অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে অবশেষে আশার আলো দেখতে পাওয়া আগত সমাবর্তনের ‘কোয়ালিটি এনসিউর’ এর বিষয়টা যেন সর্বোচ্চ গুরুত্ব পায়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় যেমন দেশের প্রথম সারির একটি বিদ্যাপীঠ হিসাবে উচ্চারিত নাম, তেমনি সমাবর্তনের মান এর ক্ষেত্রেও সেই প্রতিচ্ছবি থাকাটা প্রত্যাশিত।
অনেক জ্ঞানী, অভিজ্ঞ এবং পিতৃতুল্য ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে গড়া প্রশাসনের কাছ থেকে সুন্দর ব্যবস্থাপনা, গোছানো, নিরাপত্তাবেষ্টিত একটি সমাবর্তন আমরা প্রত্যাশা করি। তাড়াহুড়ো করে অগোছালো দায়সারা গোছের কিছু দেয়ার চেয়ে নূন্যতম প্রয়োজনীয় সময় নিয়ে একটা স্ট্যান্ডার্ড মানের সমাবর্তন আয়োজন নিশ্চিত করা হোক।
সময়সীমা বেঁধে দিয়ে পুনঃনিবন্ধনের সুযোগ দেয়া কাম্য। আপাতপ্রাপ্ত তথ্যমতে এ বিষয়ে সবুজ সংকেত দেয়া হয়েছে। সমাবর্তনের আকর্ষণসমূহের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু সমাবর্তনের প্রধান ও অন্যান্য আলোচকবৃন্দ। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মহামান্য রাষ্ট্রপতির অনুপস্থিতি অনেকটা লবণ ছাড়া কোন মেন্যু রান্না করার মতো। আলোচক হিসাবে কোন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদকে নিয়ে আসবেন এটা আমাদের চেয়ে আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকরা ভালো বুঝবেন বলেই আমরা মনে করি।
সেই দেড় বছর আগে থেকেই বিভিন্ন প্লাটফর্মে আমাদের প্রজন্মের সমাবর্তনের আওতাধীন সদস্যদের সরব ব্যক্তব্য ছিল সমাবর্তনের অন্যতম আলোচক হিসাবে আমরা যেন তরুণ প্রজন্মের কাছে আইকন/রোল মডেল/নেতা এমন একজন ব্যক্তিকে পাই। আর বারবার ঘুরেফিরে এক্ষেত্রে যার নাম উচ্চারিত হয়েছে তিনি বাংলাদেশ দলের জনপ্রিয় ক্রিক্রেটার ‘মাশরাফি বিন মুর্তজা’। উনার মত ব্যক্তির উপস্থিতি এই সমাবর্তনকে অন্যমাত্রা দান করবে। আমরা কায়মনোবাক্যে বিশ্বাস করি যদি কর্তৃপক্ষ সদয় সম্মতি জ্ঞাপন করে উনার কাছে আমাদের এই বার্তা ও চাওয়া পৌঁছে দেন, তিনি নিরাশ করবেন না।
সমাবর্তন উপলক্ষ্যে একটি স্মরণিকা প্রকাশ খুবই মানানসই এবং এটি সকলের কাছেই খুব গুরুত্ববহ বস্তু। এই ডিজিটালাইজেশনের যুগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সদিচ্ছাই এটি বাস্তবায়নের জন্য যথেষ্ট। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে অনলাইনে নিবন্ধিত ব্যক্তিদের তথ্য ও ছবি নিয়ে সেগুলো স্মরণিকায় লিপিবদ্ধ করলেই স্মরণিকার ডাটাবেজের কাজ হয়ে যাবে।
ওয়েবসাইট বা ই-মেইলে আইডি এর মাধ্যমে সমাবর্তন আয়োজক কর্তৃপক্ষ প্রাক্তনদের কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয়ের উপর লেখা আহ্বান করতে পারে যেখান থেকে স্মরণিকা কমিটি যাচাই বাছাই করবেন। স্মরণিকার মাধ্যমে প্রাপ্ত বিভিন্ন বিজ্ঞাপন সমাবর্তন আয়োজক কমিটির আয়োজন খরচের অর্থসংস্থানের ক্ষেত্রে ভালো একটা উৎস হতে পারে।
র্যালির মতো অবিচ্ছেদ্য বিভিন্ন ইভেন্ট তো থাকবেই। পাশাপাশি দেশীয় সংস্কৃতি, রুচি ও লাইফস্টাইলকে মাথায় রেখে একটি ভালো মানের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন ভারী খাবারের শেষে ডেজার্টের ভূমিকা পালন করতে তথা তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলাতে সক্ষম।
আসলে প্রত্যাশা অনেক, তার সাথে বাস্তবতার মাপকাঠিতেও বিবেচনা করতে হবে অনেক কিছু। কিন্তু সব কিছুর উর্ধ্বে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তথা সমাবর্তন কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা ও মানসিকতা। উনারা আন্তরিক হলে উপরোক্ত প্রত্যাশাগুলো খুব সহজেই পরিকল্পনামাফিক বাস্তবায়নযোগ্য, কোনটাই আকাশচুম্বী নয়।
আমরা আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখলাম এই বিশ্বাসে যে আপনারা আমাদের নিরাশ করবেন না।