রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানকে দুই টেস্টের সিরিজে ‘বাংলা ওয়াশ’ করে সবাইকে চমকে দিল টাইগাররা। মেহেদি মিরাজের উদ্ভাসিত অলরাউন্ড পারফরমেন্স, মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাসের ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ব্যাটিং আর তরুণ পেসার হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রানার আগুন ঝরানো বোলিং দেখে টাইগার ভক্তদের চোখ ছানাবড়া।
নাজমুল হোসেন শান্ত বাহিনীর এ নজরকাড়া, উদ্ভাসিত নৈপুণ্য দেখে অবাক ভক্তরা। অনেকের মনেই জেগেছে প্রশ্ন, হঠাৎ টাইগারদের এমন বদলে যাওয়া রুপ? টিম বাংলাদেশ এভাবে জ্বলে উঠলো? দল হয়ে খেলে সকল বাধা-বিপত্তি আর প্রতিকুলতা অতিক্রম করে এমন অবিস্মরণীয় সাফল্য ধরা দিল কিভাবে? হঠাৎ কি এমন হলো যে অগোছালো, অবিন্যস্ত ও আড়ষ্ট বাংলাদেশ একটা ইউনিট হয়ে খেলে টিম পারফরমেন্স দেখালো?
দীর্ঘদিন জাতীয় দলের নির্বাচক হিসেবে থাকা হাবিবুল বাশার সুমন মনে করেন, এ সাফল্য রাতারাতি আসেনি। হঠাৎ কোন যাদুর কাঠির ছোঁয়ায় এমন বদলে যায়নি টাইগারদের পারফরমেন্স। আসলে একটা দীর্ঘ মেয়াদি লক্ষ্য, পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণের সফল বাস্তবায়ন। পুরো সাফল্যটা একটা দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার ফসল।
মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর জাগোনিউজের সাথে আলাপে হাবিবুল বাশার বলেন, ‘রাওয়ালপিন্ডিতে জাতীয় দলের পারফরমেন্সকে আমি অভিনন্দন জানাই। ক্রিকেটারদের সবার প্রতি আমার ভালবাসা। শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা। তারা সবাই দারুণ খেলেছে। সামর্থ্যের সবটুকু উজাড় করে দিয়ে দলকে এতবড় সাফল্য উপহার দিয়েছে। তবে আমি মনে করি এ সাফল্য রাতারতি আসেনি। এজন্য পাড়ি দিতে হয়েছে দীর্ঘ পথ। আসলে একটা দীর্ঘ মেয়াদী লক্ষ্য-পরিকল্পনা কার্যক্রমের সফল প্রতিফলন ও বাস্তব রুপ হলো পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করা।’
জাতীয় দলের এ সাবেক অধিনায়ক ও সাবেক নির্বাচক মনে করেন, দেশের উইকেটের চরিত্র বদল এবং ফাস্ট বোলারদের ভাল করার অনুকূল পরিবেশ তৈরির কারণেই আমাদের ফাস্ট বোলাররা উন্নতি করেছে।
সুমন বলেন, গত কয়েক বছরে ঘরোয়া ক্রিকেট বিশেষ করে দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটে যথেষ্ঠ উন্নতি ঘটেছে। জাতীয় লিগ আর বিসিএলে উইকেটের মান বেড়েছে। উইকেটের চরিত্র, আচরণ বদলে ফেলায় সবচেয়ে লাভবান হয়েছে আমাদের ফাস্ট বোলাররা। ঘাসযুক্ত পেস বোলিং সহায় পিচে পেস বোলাররা কয়েক বছর বোলিং করে উন্নতি করেছে। দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটে কোনো লাইন, লেন্থে বল করলে সফল হওয়া যায়, দীর্ঘ মেয়াদী ক্রিকেটে ব্যাটারদের মনোযোগ, মনোসংযোগে চিড় ধরিয়ে আউট করতে কী কী করনীয়? বলে কারুকাজটাই বা কতটা দরকার?
আমাদের পেসাররা গত কয়েক বছর জাতীয় লিগ ও বিসিএল খেলে তা রপ্ত করে ফেলেছে। আর তাই এখন দেশের বাইরে গিয়েও তারা ভাল জায়গায় দ্রুতগতির সাথে বলের কারুকাজের মিশ্রনে প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের কাছ থেকে সর্বাধিক সমীহ আদায়ের পাশাপাশি ম্যাচ নির্ধারক হয়ে উঠেছেন। রাওয়ালপিন্ডিতে হাসান মাহমুদ, নাহিদ রানার উত্থান ও আগুন ঝরানো বোলিং তারই ফসল। আর সেটাই শেষ টেস্ট জয়ের প্রধান কারণ।