হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের আশ্বাসে চিকিৎসকদের ‘শাটডাউন’ স্থগিত

লেখক:
প্রকাশ: ৩ মাস আগে

চিকিৎসকদের ওপর হামলাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। এ আশ্বাস পেয়ে আগামীকাল সোমবার রাত ৮টা পর্যন্ত কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি স্থগিত করেছেন চিকিৎসকরা।

চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠকের পর এ তথ্য জানান ঢাকা মেডিকেলের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।

তিনি বলেন, কমপ্লিট শাটডাউন আর নেই। চিকিৎসকরা এখন থেকে কাজে যোগ দেবেন। প্রথমে জরুরি সেবায় কাজ শুরু করবেন। পরে সব জায়গায় সবাই কাজে যুক্ত হবেন।

প্রসঙ্গত, গতকাল শনিবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকদের অবহেলায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস টেকনোলজির (বিইউবিটি) শিক্ষার্থী আহসানুল হক দীপ্তর মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের তিন চিকিৎসককে মারধরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দোষীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের আল্টিমেটাম দেন চিকিৎসকরা।

একই দিন মধ্যরাতে খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ এলাকা থেকে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহতরা ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে আসেন। তখন অন্য আরেক গ্রুপ চাপাতিসহ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ভেতরে ঢুকে যায়। এ সময় হাতেনাতে চারজনকে আটক করে সেনাবাহিনীকে দেয় কর্তৃপক্ষ।

পরে অন্য আরেক রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ওয়ানস্টপ ইমার্জেন্সি সেন্টারে ভাঙচুর চালায় রোগীর স্বজনরা। এতে করে নিরাপত্তা শঙ্কায় জরুরি বিভাগের কার্যক্রম বন্ধ করে দেন চিকিৎসকরা। আলটিমেটামের ২৪ ঘণ্টা শেষ হওয়ার আগেই কর্মবিরতিতে যান তারা।

এদিকে, ঢামেক হাসপাতালের (ঢামেক) নিউরো সার্জারি বিভাগের তিন চিকিৎসকের ওপর হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা হয়।

মামলায় বেসরকারি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) শিক্ষকসহ তিন শিক্ষার্থীকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া ৪০-৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।

রোববার (১ সেপ্টেম্বর) ঢামেক হাসপাতালের অফিস সহায়ক আমির হোসেন (৫৩) বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

অন্যদিকে, আজ রোববার দুপুরে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত, দোষীদের গ্রেপ্তার ও সেনাবাহিনী মোতায়েন না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য সারা দেশের সব হাসপাতালে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা করা হয়।

হাসপাতালের প্রশাসনিক ব্লকে সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের আবাসিক সার্জন আব্দুল আহাদ এ ঘোষণা দেন।

পরে বিকেলে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা বিধানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়।

এরপরও চিকিৎসকরা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে অটল থাকলে বিপাকে পড়েন রোগী ও তাদের স্বজনরা। অনেক গুরুতর রোগীরা হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যেতে থাকেন।

এ পরিস্থিতিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ দেখে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। এ সময় তিনি চিকিৎসকদের শাটডাউন কর্মসূচি উঠিয়ে নেওয়ারও আহ্বান জানান।

এদিকে, বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রশাসনিক ব্লকে কর্মবিরতিতে থাকা ডাক্তারদের সঙ্গে সভা ডাকা হয়। ওই সভায় চার দফা দাবি জানান চিকিৎসকরা। তাদের দাবিগুলোকে যৌক্তিক বলে মন্তব্য করেন করেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। চিকিৎসকদের দাবিগুলো মেনে নেওয়ারও আশ্বাস দেওয়ার ইঙ্গিত দেন তিনি। পরে কর্তৃপক্ষের আশ্বাস পেয়ে কর্মবিরতি স্থগিত করেন চিকিৎসকরা।