টাকা-পয়সা দিয়ে ভোট কেনা গেলেও মানুষের আস্থা পাওয়া যায় না বলে মন্তব্য করেছেন সংবিধান প্রণেতা ও গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেন।
তিনি বলেছেন, আমরা সাময়িক সুবিধার জন্য রাজনীতি করি না। আমরা চাইলেই তথাকথিত মন্ত্রী হতে পারতাম। কিন্তু আমরা সেটা করছি না। কারণ, আমরা চাই জনগণ সত্যিকার অর্থে ক্ষমতার মালিক হোক।
বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুস সালাম হলে গণফোরামের ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলটির বিভক্তি দূর করে এক হওয়ার বিষয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. কামাল হোসেন বলেন, সুষ্ঠু রাজনীতি করতে হলে জনগণকে বোঝাতে হবে তোমরা দেশের পাহারাদার, তোমরা ভোটে অংশগ্রহণ করো। লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে, তাদের বিতাড়িত করতে হবে। লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে জনগণকে একত্রিত হতে হবে।
তিনি বলেন, সুষ্ঠু রাজনীতি করার জন্য আমরা প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। সে প্রতিজ্ঞা আমরা ধরে রাখতে পেরেছি। আমরা কারও কাছে বিক্রি হইনি। এখানে যারা আছে তারা একজনও বিক্রি হয়নি। মানুষের আস্থা নিয়ে আমরা ক্ষমতায় যাই, সে আস্থা যদি আমরা ধরে রাখতে না পারি তাহলে আমরা ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবো না।
‘অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠান ধরে রাখতে পারবো কি না, আমরা তো টাকা দিয়ে নির্বাচন করি নাই, আমরা ভোট কিনে নির্বাচিত হই না। টাকা দিয়ে ভোট কিনে ক্ষমতায় আসার পর সেই টাকা ভাগবাটোয়ারা করা হয়, কিন্তু এতসব করেও একটা সময় ঠিকই পালিয়ে যেতে হয়। দেশে কেন থাকতে পারে না? কারণ, জনগণ জানে তাদের হাতে বিচার করার ক্ষমতা আছে।’
দেশ থেকে অবিশ্বাস্য রকমের টাকা পাচার করা হয়েছে জানিয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, যা এই দেশের জনগণেরই সৃষ্টি করা টাকা। আমরা সেই বঞ্চিত মানুষের পাশে আছি। জনগণের রাজনীতি হলো জনগণকে নিয়ে রাজনীতি করা।
বিদেশে টাকা পাচারকারীরা ভালো থাকলেও দেশের মানুষের কোনো উন্নতি হয়নি উল্লেখ করে এই সংবিধান প্রণেতা বলেন, আমরা সেসব মানুষের উন্নতির জন্য রাজনীতি করছি। আমাদের লক্ষ্য দেশের সম্পদ দেশেই রাখা এবং জনগণের উন্নতি সাধন করা। জনগণকে নিজ নিজ এলাকায় পাহারা দিতে হবে। এলাকার রাজনীতিবিদেরা কী কাজ করছে তার হিসাব নিতে হবে।
ড. কামাল হোসেন বলেন, ছাত্রসমাজ প্রমাণ করেছে তারা কারও কাছে বিক্রি হয় নাই। তারা জীবন দিয়ে দেশকে রক্ষা করেছে। তারা দেশ পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের মানুষ পরিশ্রম করে উৎপাদন বাড়াচ্ছে, তবু সংকট কেন? আপনারা ঐক্যবদ্ধ হলেই দুর্নীতিবাজদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে পারবো।
এসময় গণফোরামের শীর্ষ নেতা অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মী, সংগঠক ও সমর্থকদের ঐক্যবদ্ধ করে রাজনৈতিক, সাংগঠনিক ও সামাজিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। দ্রুততম সময়ে গণফোরামের জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানান তিনি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা মহসীন মন্টুর সভাপতিত্বে এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট এস. এম. আলতাফ হোসেন ও ডা. মিজানুর রহমান প্রমুখ।