‘ব্যাংকিং কমিশন’ গঠনের সিদ্ধান্ত

লেখক:
প্রকাশ: ২ মাস আগে

ব্যাংকখাতে টেকসই সংস্কারের জন্য একটি ব্যাংক কমিশন গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এছাড়া আর্থিকখাতের সার্বিক পরিস্থিতি এবং সংস্কার বিষয়ে একটি রূপকল্প তৈরি করে অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন হওয়ার ১০০ দিনের মধ্যে তা প্রকাশ করা হবে।

রোববার (১৮ আগস্ট) দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে ‘ব্যাংকিং কমিশন’ গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংকিং খাতের বর্তমান অবস্থা নিয়ে বৈঠকে বিশদ আলোচনা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে এ খাতের সংস্কারের বিষয়টি চলে এসেছে। ব্যাংকিং খাতে টেকসই সংস্কার করার জন্য একটি ব্যাংকিং কমিশন গঠন করে দ্রুত কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।

বেশ কয়েক বছর ধরেই ব্যাংক খাতের বিশ্লেষকরা বলছিলেন, দেশের ব্যাংকগুলোতে দীর্ঘদিন জমে থাকা সমস্যা জটিল আকার ধারণ করেছে। আর্থিক খাতের বিদ্যমান অস্থিতিশীল অবস্থা স্বল্প মেয়াদে সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে গ্রাহকদের আস্থা ফিরে আসে। একই সঙ্গে স্থায়ীভাবে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে ব্যাংক খাতের সংস্কার করা প্রয়োজন।

আর ব্যাংক খাতের এ সংস্কারের জন্য অর্থনীতিবিদরা দীর্ঘদিন ধরেই ব্যাংকিং কমিশন গঠনের পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন। তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের আমলে দীর্ঘ ১৫ বছরে এ বিষয়ে কেউ মনোযোগী হয়নি। আলোচ্য এ সময়ে ব্যাংক খাত সংস্কারের পরিবর্তে উল্টো ‘ব্যাংক লুটের’ মহড়া দেখা গেছে। এর ফলে দেশের ব্যাংক খাত আজ মানুষের আস্থাহীনতায় পরিণত হয়েছে। এতে দেশের পুরো অর্থনীতি খাদের কিনারায় দাঁড়িয়েছে।

অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, ব্যাংক খাতে চলমান অস্থিরতা একদিনে তৈরি হয়নি। অনেকদিন ধরেই এই সমস্যা জিইয়ে রাখা হয়েছিল। ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের সমস্যা এবং ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোতে বড় সমস্যাগুলো অনেক বছর ধরেই আছে। এটির সমাধানে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে এখন পরিস্থিতি আরো জটিল আকার ধারণ করেছে।

এদিকে, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের বৈঠকে দেশের বিদ্যমান মূল্যস্ফীতির বিষয়টিও উঠে এসেছে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চাহিদা ও যোগানের যথাযথ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশের বিদ্যমান মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে হবে। এজন্য মুদ্রানীতিকে সংকোচনমূলক অবস্থায় ধরে রাখতে হবে এবং একইসঙ্গে সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে হবে। এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হয়েছে। তবে মূল্যস্ফীতির সুফল পেতে সবাইকে একটু ধৈর্য ধরতে হবে।

এছাড়াও বৈঠকে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে তারল্য বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ব্যান্ড ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে। খুব দ্রুতই আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে তারল্য ফিরে আসবে এবং বিনিময়ের পরিমাণও দ্রুত বৃদ্ধি পাবে বলেও বৈঠকে আশা প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া আর্থিক খাতের সার্বিক পরিস্থিতি এবং সংস্কার বিষয়ে একটি রূপকল্প তৈরি করা হবে যা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হওয়ার ১০০ দিনের মধ্যে প্রকাশ করা হবে।