আহতদের চিকিৎসা ও ভবিষ্যতের দায়িত্ব নিয়েছে সরকার: প্রধানমন্ত্রী

লেখক:
প্রকাশ: ৪ মাস আগে

কোটা সংস্কার আন্দোলনকালে সহিংসতায় আহতদের চিকিৎসায় যা যা প্রয়োজন সরকার সব করছে, জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, চিকিৎসা শেষে তাদের আয়-রুজির ব্যবস্থা যাতে হয়, সেটাও আমরা করব।

Google news

 

তিনি বলেন, ‘আমি মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখি। দল-মত নির্বিশেষে সকলের জন্য আমি কাজ করি। আমি যা করি, সব মানুষের জন্য করি। কে আমাকে সমর্থন করে, কে করে না, আমি সেটা চিন্তা করি না। কারণ, আমি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী করেছে তাদের সেবা করতে। সেভাবেই আমি সেবা করি।’

আহতদের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নিতে শুক্রবার (জুলাই ২৬) বিকেলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগ পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

 

বর্বরতার বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশবাসীর কাছে এইটুকু বলব যে, যারা অপরাধী, তাদের খুঁজে বের করে দিতে হবে। সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এই বর্বরতার বিরুদ্ধে, এই ধরনের জঘন্য ঘটনার বিরুদ্ধে।’

তিনি বলেন, ‘আমি আবারও দেশবাসীকে বলব, যারা এই ধরনের জঘন্য কাজ করে, কোথায় কে আছে, খুঁজে বের করুন। তাদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে, যেন আর কখনো এ দেশের মানুষের জীবন নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে। এটা আমি কখনো চাইনি। এভাবে মানুষ আপনজন হারাবে, এইভাবে মৃত্যুর মিছিল হবে, এটা কখনো চাইনি। আজকে বাংলাদেশে সেটাই করলো।’

 

সহিংসতায় যারা মারা গেছেন, তাদের আত্মার মাগফিরাত এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অত্যন্ত বেদনাদায়ক অবস্থা, আজকে এতগুলো মানুষ আহত-নিহত।’

তিনি বলেন, ‘আমি তো আমার সব হারিয়েছি। বাবা-মা- ভাই সব হারিয়েছি। আমি তো জানি, হারানোর বেদনা কী? আমার চেয়ে বোধ হয় আর কেউ বেশি জানে না।’

 

বিএনপি-জামায়াতের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই জামায়াত-শিবির, বিএনপি, ছাত্রদল— তারাই কোটা আন্দোলনের সুযোগটা নিয়ে দেশব্যাপী এই ধ্বংসাত্মক কাজ করে যাচ্ছে। এদের মধ্যে কোনো মনুষ্যত্ব নেই, দেশের প্রতি কোন মায়া-মমতা নেই, দেশের প্রতি কোনো দায়িত্ববোধ নেই। মানুষকে এরা মানুষ হিসেবেই গণ্য করে না।’

তিনি বলেন, ‘আমার প্রশ্ন, এতে অর্জনটা কী হলো? কতগুলো মানুষের জীবন চলে গেলো। কতগুলো পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হলো।’

 

শেখ হাসিনা  বলেন, ‘সেই ১৯৭১ সালের কথা মনে পড়ে, ২০১৩-তে ৩ হাজার ৮০০ মানুষকে পোড়ানো, মেরে ফেলা। আবার ২০১৪ তে সেই একই।  ২০২৩-এর ২৮ অক্টোবর পুলিশকে যেভাবে মেরেছে, এবারও সেই পুলিশকে মারা না শুধু, মেরে লাশ ঝুলিয়ে রাখা। আওয়ামী লীগের কর্মী গাজীপুরের, তাকে মেরে ঝুলিয়ে রাখা। এ কী বর্বরতা, কী জঘন্য। কোনো মনুষ্যত্ব নেই।’

তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সবাইকে আহ্বান করব, এই যে বর্বরতা, এই যে সন্ত্রাস- এবং মানুষকে হত্যা, এটা তো সম্পূর্ণ জঙ্গি কাজ। মানুষের হাত কাটা, পা কাটা, রগ কাটা, চট্টগ্রামে আমাদের ছাত্রলীগের ছেলেদের ৬ তলা থেকে ফেলে দেওয়া, তাদের রগ কেটে দেওয়া। পড়ে যাওয়ার পরেও তাদের ওপর হামলা। এটা কোন ধরনের বর্বরতা!’

 

শান্তিপূর্ণ পরিবেশ এবং দেশের সমৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি চাচ্ছিলাম, দেশে শান্তি থাকবে, দেশের মানুষের উন্নতি হবে, দেশের মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে। আমি সব দিকে ব্যবস্থা করেছি। মানুষের সেবা করার যা যা সবই নষ্ট করবে, সবই ধ্বংস করে দেবে, সবই পোড়াবে!’

তিনি বলেন, ‘কত বার আমাকে মারার চেষ্টা করেছে। তারপরও আমি সবকিছু ভুলে; সেই শোক, ব্যথা, বাবা-মা-ভাই সব হারানোর বেদনা, নিজের ওপর এত বড় আঘাত, সবকিছু মোকাবিলা করে আমি দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছি, মানুষ যেন ভালো থাকে। কিন্তু, সেইখানে এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করা এবং তারপর মানুষগুলোর ওপর হামলা করা। মানুষের সেবা করার প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করা। এর চেয়ে কষ্টের আর কিছু হয় না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই যে একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা। হাসপাতালে আক্রমণ; কোভিড হাসপাতাল ছিল, সেটা পুড়িয়ে দিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, চিকিৎসাকেন্দ্র, যেখানে মানুষের সেবা, সেখানে আঘাত হানা, এর চেয়ে জঘন্য কাজ আর কিছু হয় না।’

সরকার শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নিয়েছে, জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা তো সব দাবি মেনেই নিয়েছি। তারপর আবার কেন, সেটাই আমার প্রশ্ন। এটা কি জঙ্গিবাদকে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য?’

দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশবাসীকে বলব, আপনারা দোয়া করেন। যেন এই জঙ্গিবাদ এবং জুলুমের হাত থেকে মানুষ মুক্তি পায়, মানুষের জীবনে শান্তি আসে।’

এর আগে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদের খোঁজ-খবর নেন। তাদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা প্রমুখ।