রপ্তানি আয় কমতে পারে ৪.৩৬ শতাংশ

লেখক:
প্রকাশ: ৫ মাস আগে

সদ্যবিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় দাঁড়াতে পারে ৪৪ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলারে, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরের আয়ের চেয়ে ৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ কম। যদিও এটি এখনো চূড়ান্ত নয়।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য প্রক্রিয়াজাত করে ইপিবি সাধারণত রপ্তানির তথ্য সরবরাহ করে। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ডাটা প্রসেস করার পর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি দাঁড়িয়ে ছিল ৫৫ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে ০ দশমিক ৪৯ শতাংশ কম ছিল। প্রচলিত হিসাব অনুসারে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আয় হয়েছিল ৫৫ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার। পরবর্তীসময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে উল্লেখিত তথ্যে গরমিল ধরা পড়ায় তা আর প্রকাশ করা হয়নি।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংক ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) মিলে এরই মধ্যে তথ্যে কিছু সংশোধনী এনেছে। তিন সংস্থার প্রতিনিধিরা সভাও করেছেন বিষয়টি নিরসনে। সভায় অংশ নেওয়া একজন সদস্য নাম না প্রকাশ করার শর্তে প্রাথমিক সংশোধনীর এসব তথ্য দিয়েছেন জাগো নিউজকে। তবে এটি এখনো চূড়ান্ত নয় বলে জানান তিনি।

প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে বড় ধরনের ফারাক ধরা পড়ে। পরবর্তীসময়ে একই পণ্যের একাধিক ইনপুট, একই এইচএস (হারমোনাইজড সিস্টেম) কোডের দুবার হিসাব ও অন্য দ্বিত্ব গণনা বাদ দিয়ে পুনরায় হিসাব করায় গত অর্থবছরের রপ্তানি আয় কমে ১০ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়াতে পারে। ইপিবির প্রাথমিক আয় ৫৫ দশমিক ২৮ বিলিয়ন থেকে ১০ দশমিক ৮১ বিলিয়ন বাদ দেওয়ার পর রপ্তানি আয় দাঁড়াতে পারে ৪৪ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলারে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি কমে দাঁড়াতে পারে ৪ দশমিক ৩৬ শতাংশে।

 

রপ্তানি আয়ের এ হিসাব এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি। এতেও কিছুটা পরিবর্তন আসতে পারে বলে জানিয়েছেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘এটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।’

এ তথ্য কবে প্রকাশ করা হবে সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি বলে জানান রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর একজন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে আলোচনা হয়েছে এবং তথ্যের গরমিল দূর করতে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) বা আদর্শ পরিচালনা পদ্ধতি নির্ধারণ করার বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত সংশ্লিষ্টরা। তবে বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত নয়।’

 

সাধারণত, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো প্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানি তথ্য প্রকাশ করে। কিন্তু এবছর গরমিল পাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক অনুসন্ধান করে এবং বেশ কিছু কারণ খুঁজে পায়।

এক্ষেত্রে বলা হয়েছে, একই রপ্তানির তথ্য এবং একই পণ্যের এইচএস কোড একাধিকবার ইনপুট দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে পণ্যের কাটিং মেকিং এবং স্কিমিংয়ের ক্ষেত্রে শুধু তৈরির মাশুল হিসাব হওয়ার কথা, কিন্তু কাপড়সহ সব যন্ত্রাংশের হিসাব করেছে। এছাড়া এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন থেকে দেশীয় শিল্পে যে পণ্য রপ্তানি খাতে বিক্রি করা হয় তা দুবার হিসাব করার কথা অনেকে উল্লেখ করেন।

রপ্তানি আয়ের তথ্য গরমিল দূর করতে হচ্ছে ‘এসওপি’
রপ্তানি আয়ের তথ্যের গরমিল দূর করতে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) বা আদর্শ পরিচালনা পদ্ধতি চালুর কথা ভাবছে সংশ্লিষ্টরা। তবে বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

 

সোমবার (৮ জুলাই) এক সভায় বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর প্রতিনিধিরা এ বিষয়ে প্রাথমিকভাবে একমত হয়েছেন।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস-চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংক, পরিসংখ্যান ব্যুরো ও প্রতিযোগিতা কমিশনের প্রতিনিধি। প্রত্যেক প্রতিনিধি নিজ প্রতিষ্ঠানের সুপারিশ তুলে ধরেন। সভায় আলোচিত বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে বলে জানান একজন অংশগ্রহণকারী।

ইপিবির পরিচালক (নীতি) আবু মোখলেছ আলমগীর হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘সভায় আমরা বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। তথ্য প্রক্রিয়া আধুনিকীকরণ করার বিষয়ে আলোচনা করেছি যাতে বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, পরিসংখ্যান ব্যুরো ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যে যে ফারাক আছে তা যেন সমন্বয় করা যায়। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।’

 

নাম না প্রকাশ করার শর্তে সভায় উপস্থিত একজন প্রতিনিধি জাগো নিউজকে বলেন, ‘সম্প্রতি রপ্তানি আয়ের তথ্যে গরমিল ধরা পড়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানে। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আজকের সভা। তথ্যের গরমিল দূর করা এবং নির্ভুল তথ্য নিশ্চিত করার জন্য স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) বা আদর্শ পরিচালনা পদ্ধতি নির্ধারণ করার বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত হয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।’

তিনি বলেন, ‘আগামী তিন মাসের মধ্যে এ পদ্ধতিতে রপ্তানি আয়ের তথ্য প্রকাশের বিষয়ে কথা হয়েছে। ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান (বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব) ধরে রপ্তানি আয় হিসাব করা হবে। এক্ষেত্রে সব প্রতিষ্ঠানের ডলার কনভারশন রেট একই হবে।’

স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর চালু করার জন্য নতুন করে সফটওয়্যার ডেভেলপ করা হবে এবং তার মাধ্যমে ডাটা বিশ্লেষণ করে রপ্তানি তথ্য প্রকাশ করা হবে বলেও তিনি জানান।