দিনাজপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ৯২ বছরের এক বৃদ্ধ কামবালা, যিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগে দেশব্যাপী আলোচনায় এসেছিলেন নিজের ভোটাধিকার প্রশ্নে সচেতনতা দেখিয়ে। প্রধান নির্বাচন কমিশন যাকে বলেছিলেন ‘ভোটার অব দ্য ইলেকশন’। এই বয়সে জীর্ণশীর্ণ এক শরীর নিয়ে ভোটের আগে দীর্ঘ পথ হেঁটে গিয়ে এলাকার এক জনসভায় নৌকার প্রার্থীকে খুঁজে বের করে তাকে পাঁচ টাকা দিয়েছিলেন নির্বাচনের খরচ হিসেবে। সেই থেকে দেশব্যাপী আলোচনায় তিনি।
সেই কামবালাকে মনে রেখেছেন তার এলাকার এমপি দিনাজপুর-২ আসনের চারবারের সংসদ সদস্য এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। নির্বাচনে পর তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে ছুটে গিয়েছেন প্রত্যন্ত সেই অঞ্চলে, যেখানে গাড়ি নিয়ে যেতে কষ্ট হতো। যে এলাকায় যেতে পাড়ি দিতে হতো কাদামাটি। সেখানে পাকা রাস্তা করে দিয়েছেন তিনি। কামবালার ভাঙা মাটির ঘর এখন আধপাকা বাড়ি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশ্ব মানবতার প্রতীক হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পে’র ঘরের মতো করে তিনটি ঘর করে দিয়েছেন কামবালার পরিবারের জন্য। ঘর পেয়ে কামবালার চোখে জল, মুখে রাজ্য জয়ের হাসি।
রোববার (২ জুন) দিনাজপুরের ধর্মপুর ইউনিয়নের গদাবাড়ী গ্রামে বাড়ি হস্তান্তর করতে সেখানে যান খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। এ সময় দিনাজপুর জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ, পুলিশ সুপার শাহ্ ইফতেখার আহমেদ, দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ ফারুকুজ্জামান চৌধুরী মাইকেল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সবুজার সিদ্দিক সাগর ও সাধারণ সম্পাদক বাবু রমাকান্ত রায়, ধর্মপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মজিদ মাস্টার, সাধারণ সম্পাদক রতনচন্দ্র রায়সহ আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
ঘর হস্তান্তর করতে গিয়ে শাড়ি, গামছা, ফলসহ উপহার নিয়ে যান নৌ প্রতিমন্ত্রী। এ সময় মন্ত্রীকে জড়িয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন কামবালা। মন্ত্রী গলা জড়িয়ে থাকেন। বলতে থাকেন জমিয়ে রাখা সব কথা। যেন অনেকদিন পর ছেলেকে পেয়ে মায়ের আবেগের আকুতি। পরে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ঘরের ভেতর অনেকক্ষণ বসে থেকে কথা বলেন কামবালার সঙ্গে। কিছুতেই মন্ত্রীকে তিনি ছাড়তে চাইছেন না। তার কথা যেন ফুরোতেই চাইছে না। ঘর পেয়ে তার খুশি যতটা না মন্ত্রীকে পেয়ে, তার চেয়ে বেশি খুশি তিনি।
মন্ত্রীকে নতুন বাড়ির ঘরে খাটে বসতে বলেন কামবালা। বলেন, ‘বেটা মোর ঘরত বসিলে হইচো।’ তাকে খালিদ মাহমুদ বলেন, ‘আমি তো তোর ঘরে বসবার জন্যই আইচ্চু।’
উচ্ছ্বসিত কামবালা বলেন, ‘মুই কল্পনাও করিবার পরনি যে মুই বিল্ডিংগের ঘরত থাকিবার পারিম। মোর ছাওয়ালগুলা মানুষের জমিত ধান আবাধ করি যে টাকা পায় তা দিয়ে কোন মতে মোর বাড়ির লোকের পেটত খাবার জোটে আর ঘর বাড়ি তো দূরের কথা।’
“মুই যেই পরিমাণ খুশি হইচো, তা কখনও ভাবিবাও পারনাই। মোর জীবনে সব থাকি আজকা বেশি খুশি হইচো মোর সব বেটাগুলাক ঘরবাড়ি দি। অনেক অনেক ধন্যবাদ মোর বেটা মোক যে ঘরবাড়ি দিছে’।
কামবালার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নির্বাচনে আগে এই এলাকায় একটি জনসভার ভিড় ঠেলে এই বৃদ্ধা এসেছিলেন আমার কাছে। কিছু একটা বলতে চাইছিলেন। পরে আমি তাকে স্টেজে নিয়ে আসি। নৌকা মার্কার প্রার্থী কে, সেটি তিনি জানতে চেয়েছিলেন। আমি বললাম, আমি নৌকার মার্কা প্রার্থী, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আমাকে আপনাদের সেবার জন্য পাঠিয়েছেন। তিনি শুনে আমার কাছে পাঁচ টাকার একটা নোট দিয়ে বললেন, ‘এটা রাখ, নির্বাচনে খরচ করবি।’ তখন আমি তাকে নৌকার একটা ব্যাজ খুলে পরিয়ে দিতে গেলে তিনি বলেন, ‘এটা কী?’ আমি বলি, নৌকার ব্যাজ। তিনি বলেন, ‘ওটা তোর কাছে রাখ। ওটা আমি অনেক আগেই চিনি।’ এই কথা শুনে আমার শরীর কেমন যেন ঠান্ডা হয়ে গেলো। বঙ্গবন্ধু আর শেখ হাসিনার প্রতি তার অকুণ্ঠ সমর্থন-আস্থা আর বিশ্বাস আমাকে যেমন মুগ্ধ করেছিল, তেমনি গৌরববোধও করছিলাম সেদিন।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমার রাজনৈতিক জীবনে একটি বিরল অভিজ্ঞতা গত জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে। আমি এতদিন রাজনীতি করেও যেটা শিক্ষা লাভ করিনি, আমাদের গদাবাড়ী গ্রামের ৯২ বয়সের এই বৃদ্ধা কামবালা আমাকে সেই শিক্ষা দিয়েছেন।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, জরাজীর্ণ মাটির ঘরে ছেলে মেয়ে নিয়ে থাকতেন কামবালা। মাথাগোঁজার ঠাঁই বলতে ওইটুকুই। ঘরের এক অংশে টিন থাকলেও অপর অংশ ছনের। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ের পর দ্বিতীয়বারের মত নৌ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে এসেই কামবালাকে মনে রেখে তার কাছে আসলেন তিনি। বিষয়টিকে মানুষের জন্য নেতার কমিটমেন্ট এবং জনপ্রতিনিধির প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থার প্রতীক হিসেবে দেখছেন এলাকার নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ।
কামবালার বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে বলেছিলেন, কামবালা হচ্ছে ‘ভোটার অব দ্য ইলেকশন’। খালিদ মাহমুদ মনে করেন, কামবালা যে দৃষ্টান্ত রেখেছেন, এটা শুধু ভোটের বিষয় না, শিক্ষণীয় বিষয়। একটি ভোট একটি জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করে দিতে পারে। একটি ভোট একটি দেশকে উন্নয়নের শিখরে নিয়ে যেতে পারে।
কামবালাকে ঘর হস্তান্তরের আগে ৮ নং ধর্মপুর ইউনিয়নের গদাবাড়ী গ্রামে তার নামে প্রায় এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়ক উদ্বোধন করেন নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের দেখতে ঘরে ঘরে গেলেন মন্ত্রী
রোববার নিজের এলাকায় গিয়ে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের দুঃখ-দুর্দশা দেখতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিয়েছেন এলাকার এমপি খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। দিনব্যাপী একেবারে প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে গ্রামবাসীর কাছে তাদের কথা শুনেছেন। দিয়েছেন সমাধানের আশ্বাস। তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্টদের ডেকে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেন। এ সময় শ্রী কৃষ্ণপুর আশ্রম এলাকা, যেখানে প্রায় এক শ’ বাড়ি আছে, সেখানে ঝড়ে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; মন্ত্রী তাদের বাড়িঘর পুনর্নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা এবং পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেন। তার এসব পদক্ষেপে হাসি ফুটছে ওইসব এলাকার মানুষের মাঝে।