মায়ের অনুপ্রেরণায় বিসিএস ক্যাডার হলেন বাকেরগঞ্জের মিরাজ হোসেন!

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago
বিসিএস ক্যাডার মিরাজ হোসেন

সোহেল আহমেদ।

মানুষের আশা আকাঙ্কার শেষ নেই। প্রতিনিয়ত এক একটি স্বপ্ন আশা মানুষের জীবনমানকে পরিবর্তন করে তোলে। সেই পরিবর্তনের লক্ষ নিয়েই শরু করেছিলেন একটি বেসরকারি প্রতিস্ঠানে চাকরি। অশাধারণ কর্মদক্ষতায় নিজেকে জনপ্রিয় কর্মবীর হিসেবে পরিচিতি লাভ করলেন। বেসরকারি প্রতিস্ঠানে সততা নিয়ে কাজ করলেও মায়ের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে দুঃসাহসীক অগ্রযাত্রার মিসনে মিরাজ। এক সময়ে তিনি হলেন বিসিএস ক্যাডার! গল্প নয় সত্যি, কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে শুধু মাত্র মায়ের অনুপ্রেরণায় বিসিএস ক্যাডার হলেন বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার মো মিরাজ হোসেন।

প্রবল ইচ্ছা শক্তি ও কর্মময় জীবনের উপরে ওঠার সিরি হিসেবে মায়ের অনুপ্রেরণা থেকেই নিজের প্রতি মিরাজ হোসেনের আত্ববিশ্বাস। আর এই আত্ববিশ্বাসেই তিনি এখন বিভাগের নলছিটি উপজেলার ভারপ্রাপ্ত প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা। কর্মজীবনেরর ফাঁকে সুযোগ পেলে নিজ গ্রামের অবহেলিত শিশুদের মানউন্নয়ন করে নিজেকে সমাজ সেবায় নিয়োজিত করতে চান মিরাজ।

অত্যান্ত বিচক্ষনতার সাথে নলছিটির প্রানীসম্পদ বিভাগে ইতিমধ্যে সততার গুনে উপজেলার সাধারণ মানুষের জনপ্রিয় এক ব্যক্তিত্বেরর নাম মিরাজ হোসেন।

এর আগে তিনি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হেইকেম বাংলাদেশ লি:, নোভার্টিস বাংলাদেশ লি:, মাজিম এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিস,সিপি বাংলাদেশ লি:, টংওয়ে, প্রভিটা,বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থায় কাজ করে নিজেকে একজন সুদক্ষ কর্মকর্তা হিসেবে সবার কাছে পরিচিতি পেয়েছিলেন। সম্প্রতি সিটিজেন জার্নালিজমের এক অনুসন্ধানে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানাযায়, বাকেরগঞ্জ উপজেলার কাজলাকাঠি গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা আনসার আলি মোল্লার ছেলে মিরাজ হোসেন। চার ভাই বোনের সবার ছোট্ট মিরাজ বরাবরই একটু স্বপ্নময় মনের অধিকারী ছিলেন। ইচ্ছা ছিলো বিদেশের কোনো নামি দামি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করা। নানা প্রতিকুলতায় তা আর হয়ে ওঠেনি। তবে ভবিষ্যতে সুযোগ হলে চেস্টা করবেন। স্বাভাবিক ভাবে হতাশায় আক্রান্ত মিরাজ হোসেনের মা। ছেলের বিসিএস ক্যাডার হওয়াই যেনো তার একমাত্র চাওয়া। আর এ জন্য তিনি ( মিরাজ হোসেনের মা) একটা সময়ে ছেলের ব্যর্থতায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনিও অবশ্য রেডক্রিসেন্ট সোসাইটিতে কর্মরত ছিলেন।

নানা প্রতিকুলতায় বেড়ে ওঠা মিরাজ হোসেন ২০০২ সালে নিজ গ্রামের কাজলাকাঠি হাফেজ তালুকদার মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর বরিশাল অম্রিত লাল দে কলেজ থেকে এইচ এস সি পাশ করে ময়মনসিংহে অবস্থিত দক্ষিন এশিয়ার কৃষি শিক্ষার সর্ব বৃহৎ প্রতিষ্টান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১১ সালে পাশ করে বেসরকারি কোম্পানি দিয়ে চাকরি জীবনের সূচনা করেন।

ওই চাকরির পাশা পাশি মায়ের অনুপ্রেরণা বুকে নিয়ে ৩৩ তম বিসিএস পরীক্ষায় আগ্রহি হলেন। কাজের অবসরে অক্লান্ত পরিশ্রম করা মিরাজ পড়াশুনা যথেস্ট মনোযোগী হলেন। কিন্তু ভাগ্য এখানে মিরাজের অনুকুলে কাজ করল না। একই ব্যজের বন্ধুরা যখন পরীক্ষার চুড়ান্ত পর্বে ক্যাডার লাভ করলেন, তখন মিরাজ ওয়েটিং লিস্টের তালিকায়। তারপরেও আত্ববিশ্বাসের উপর ভর করে ব্যর্থতাকে প্রবল শক্তিতে পরিনত করলেন। ৩৫ তম ব্যজে গিয়ে মিরাজ প্রানীসম্পদ কর্মকর্তা। মায়ের স্বপ্নের সহযাত্রী মিরাজ হোসেন উপজেলা প্রানীসম্পদ দপ্তরে ভেটেনারি সার্জনও ভারপ্রাপ্ত প্রানীসম্পদ কর্মকর্তা। মা বাবার অনুপ্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়ে বিসিএস ক্যাডার লাভ করা এ সরকারি কর্মকর্তা তার ভবিষ্যৎ জীবনের কথা চিন্তা করছেন।

নিজের মনোবলকে পুঁজি করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চান। নিজেকে সমাজ সেবায় নিয়োজিত করতে চান। চাকরি জীবনের অবসর সময়ে কাজ করতে চান সমাজের অবহেলিত গরীব শিশুদের নিয়ে। এজন্য তার নিজ গ্রামে একটি স্কুল প্রতিস্ঠা করা প্রথম স্বপ্ন। যে খানে এসব শিশুরা বিনাপয়সায় লেখা পড়ার সুযোগ পাবে।

শিশুদের নিয়ে কাজ করা সম্পর্কে জানতে চাইলে তরুন উদীয়মান এই কর্মকর্তা প্রতিবেদককে বলেন,আমাদের বাকেরগঞ্জের প্রত্যন্ত একটি এলাকা। এখানে দেখেছি অনেকেরই তাদের সন্তানদের পড়াশুনা করানোর মত পর্যাপ্ত অর্থ নেই। আবার অর্থ থাকলেও অনেক বাবা মায়েরা তাদের সন্তানের লেখাপড়ার প্রতি অসচেতন। তাই শৈসব থেকে প্রতক্ষ্য করে এখন একটি ইচ্ছাপোষন করেছি। যদি সৃস্ট কর্তা সহায়ক হন তবে আমার এলাকার গরীব মানুষ ও তাদের সন্তানদের জন্য নিজেকে কাজে লাগাতে চাই। আমার মায়ের মত যদি একজন মায়ের সন্তানদের মুখের হাসি দেখতে পারি সেটাই হল বাস্তব জীবনের শফলতা।

লেখক: সোহেল আহমেদ।