পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার নববিবাহিতা ইয়ামনি স্বামীর জন্য কাঁদছেন। ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের হাতে ছিনতাই হওয়া এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে রয়েছেন তার স্বামী আলী হোসেন। মেহেদির রঙ মুছে যাওয়ার আগেই স্বামী হারানোর শঙ্কায় তার এ কান্না। জলদস্যুদের হাতে আটক আলী হোসেন কাউখালী উপজেলার ইমাম হোসেন মল্লিকের ছেলে।
আলী হোসেন জাহাজের ওয়েলার হিসেবে চাকরি করেন। ৮-৯ মাস আগে আলী হোসেনের সঙ্গে বিয়ে হয় ইয়ামনির। আলী হোসেনের পরিবার দীর্ঘ দিন ধরে বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার বাইশারী গ্রামে বসবাস করে।
জলদস্যুদের হাতে আলী হোসেন অপহৃত হওয়ার পর তার বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, পরিবারের সবাই উৎকণ্ঠার মধ্যে আছেন।
বাবা ইমাম হোসেন মল্লিক জানান, ছেলের সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয়েছে মঙ্গলবার (১২ মার্চ) সন্ধ্যায়। এর আগে বিকাল ৩টার দিকে ফোন দিয়ে আলী হোসেন জানায়, তাদের জাহাজ জলদস্যুদের কবলে পড়েছে। সর্বশেষ সন্ধ্যায় ফোন দিয়ে জানায়, তাদের সোমালিয়ার দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যোগাযোগের সব কিছু মানে মোবাইলসহ জাহাজ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে জলদস্যুরা। ফলে মুক্তি পাওয়া কিংবা বেঁচে না ফেরা পর্যন্ত পরিবারের কারও সঙ্গে আর কথা হবে না।
বাইশারীর কুমাড়ের পাড় বিশারীকান্দি সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করার পর নারায়ণগঞ্জের মেরিন একাডেমিতে চার বছরের কোর্স সম্পন্ন করেন আলী হোসেন। এরপর তিনি চাকরি নেন জাহাজে। যে জাহাজটি ছিনতাই হয়েছে, ওই কোম্পানিতে ছিল আলীর প্রথম চাকরি। এর আগেও দুই বার জাহাজে চেপে বিদেশে যান আলী হোসেন। এটা ছিল তার তৃতীয় বারের সমুদ্রযাত্রা।
দুই ভাইয়ের মধ্যে পরিবারের ছোট ছেলে আলী হোসেনের আরেক ভাই জুলফিকার চাকরি করেন পল্লীবিদ্যুতে। দুই ভাই, বাবা, মা, ভাবি আর স্ত্রীকে নিয়ে আলী হোসেনের সংসার।
আলী হোসেনের বাবা জানান, মঙ্গলবার (১২ মার্চ) সন্ধ্যায় শেষবারের মতো কথা হওয়ার পর বহু চেষ্টা করেও আলীর মোবাইলে আর কল প্রবেশ করেনি। ফলে ছেলের সঙ্গে কথাও বলতে পারেননি তিনি। আলী হোসেন যে জাহাজে চাকরি করেন, সেই কোম্পানির পক্ষ থেকে ফোন দিয়ে সান্ত্বনা দেয়া হয়েছে।
জলদস্যুদের হাতে অপহৃত হওয়ার পর থেকে আলী কেমন আছে বা কী অবস্থায় আছে, তাই নিয়ে ভয় আর শঙ্কায় কাটছে প্রতিটা মুহূর্ত। তারা সরকারের কাছে দাবি জানান, যে কোনো উপায়ে অপহৃত হওয়া জাহাজের ২৩ নাবিককে উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে আনতে।