
বাংলাদেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল বৃহস্পতিবার ঘোষণা করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ১৮-২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বুধবার বিকাল ৩টায় সংসদ ভবনে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করার পর সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে শুধু সংসদ সদস্যরাই ভোট দেবেন; ভোটগ্রহণ হবে সংসদে; তবে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন সিইসি। ভোট শেষে নির্বাচন কমিশনার প্রকাশ্যে ভোট গণনা করবেন। সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্তকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে। আর সমান ভোট পেলে প্রার্থীদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে ফল নির্ধারণ করা হবে। তফসিলের আগেই গত সোমবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
স্পিকারের সাথে সাক্ষাত শেষে সিইসি বলেন, আইন অনুযায়ী তাঁরা স্পিকারের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। নির্বাচনের জন্য কমিশন সংসদ সচিবালয় এবং সংসদের কী ধরনের সাহায্য সহযোগিতা পেতে পারে নির্ধারিত আছে। এ বিষয়ে আলোচনার জন্য তাঁরা এসেছিলেন।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন কমিশনের খসড়া তফসিল নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আলোচনা করেছেন। তারা বৃহস্পতিবার কমিশন বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবে। ইসির চাহিদা অনুযায়ী ভোটার তালিকা সংসদ সরবরাহ করেছে।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল দায়িত্ব গ্রহণ করা বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ এ বছরের ২৩ এপ্রিল শেষ হবে। সংবিধান অনুযায়ী মেয়াদ অবসানে পূর্ববর্তী নব্বই হতে ষাট দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ বিষয়ে সংবিধানের ১২৩ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদ অবসানের কারণে উক্ত পদ শূন্য হইলে মেয়াদ-সমাপ্তির তারিখের পূর্ববর্তী নব্বই হইতে ষাট দিনের মধ্যে শূন্য পদ পূরণের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে।’ রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২৩ এপ্রিল শেষ হলেও সংবিধান অনুযায়ী, ভোট হতে হবে ২৪ জানুয়ারি থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে।
স্বাধীনতার পর থেকে ১৯ মেয়াদে এ পর্যন্ত ১৬ জন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই হিসোবে আবদুল হামিদ এই পদে সপ্তদশ ব্যক্তি। বাংলাদেশের আইনে এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে রাষ্ট্র প্রধানের দায়িত্বে থাকতে পারবেন।
১৯৯১ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইনের সপ্তম ধারায় বলা হয়েছে-নির্বাচনী কর্মকর্তা নির্ধারিত দিন, সময় ও স্থানে মনোনয়নপত্র পরীক্ষা করবেন। প্রার্থী একজন হলে এবং পরীক্ষায় তার মনোনয়নপত্র বৈধ বিবেচিত হলে কমিশন তাকে নির্বাচিত ঘোষণা করবে। তবে একাধিক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ হলে নির্বাচনের জন্য তাদের নাম ঘোষণা করবে ইসি। সংসদীয় গণতন্ত্র চালুর পর ১৯৯১ সালে একাধিক প্রার্থী হওয়ায় একবারই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দেন সংসদ সদস্যরা। পরে প্রতিবারই ক্ষমতাসীন দল মনোনীত প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে আসছেন।
আইন অনুযায়ী, একাধিক প্রার্থী হলে সংসদের অধিবেশন কক্ষে নির্বাচনী কর্মকর্তা ভোটের আয়োজন করবেন। নির্ধারিত ব্যালট পেপারে পছন্দের প্রার্থীর নাম লিখে নিজের সই দিয়ে তা জমা দেবেন সংসদ সদস্যরা। ভোটের দিন গ্যালারিসহ সংসদ কক্ষে প্রার্থী, ভোটার, ভোট নেয়ায় সহায়তাকারী কর্মকর্তা ছাড়া সবার প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রিত থাকবে।