তিন দিনের ব্যবধানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই চাকুরে আটকের ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। দুই দিন ধরে মন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) মোতালেব হোসেন ও উচ্চমান সহকারী নাসির উদ্দীনের গ্রেফতার নিয়ে গোয়েন্দাদের রহস্যজনক আচরণ আরও ভাবিয়ে তুলছে সংশ্লিষ্টদের। রীতিমতো আতঙ্কে ভুগছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী।
এদিকে গত রাত ৯টা পর্যন্ত আটক লেকহেড গ্রামার স্কুলের মালিক খালেক হোসেন মতিনসহ মন্ত্রণালয়ের দুই চাকুরে মোতালেব ও নাসির উদ্দীনকে আসামি করে রাজধানীর বনানী ও গুলশান থানায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) মামলার প্রস্তুতি নেয় বলে জানা যায়। এর আগে দুপুরে রাজধানীর একটি স্কুলে সরস্বতী পূজামণ্ডপ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছিলেন, তাদের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই আটক করা হয়েছে। অন্যদিকে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, আটককৃতরা ঘুষ-দুর্নীতিতে জড়িত এমন তথ্য তাকে কেউ দেয়নি।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে লালমাটিয়ার লেকহেড গ্রামার স্কুলটি বন্ধ করে দেওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে ভালো প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য মোটা অঙ্কের ঘুষ লেনদেন হয়। পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে স্কুলটি খুলে দেয়। ওই লেনদেনে আটককৃতদের পাশাপাশি আরও কয়েকজনের যোগসাজশ রয়েছে। পর্যায়ক্রম তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। তবে আটক শিক্ষামন্ত্রীর পিও মোতালেব হোসেন এবং উচ্চমান সহকারী নাসির উদ্দীনের সম্পদ নিয়েও অনুসন্ধান করছে গোয়েন্দারা। ইতিমধ্যে একজন দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা হয়ে মোতালেবের রাজধানীর বসিলায় তিন কাঠা জমির ওপর সাততলা বাড়ি নির্মাণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে রবিবার সকাল সাড়ে ৮টায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গ্রহণ ও বিতরণ শাখার উচ্চমান সহকারী মো. নাসির উদ্দীনকে এক লাখ ৩০ হাজার টাকাসহ গুলশান এলাকা থেকে আটক করা হয় বলে দাবি করা হয়েছে ডিবির পক্ষ থেকে। এরপর থেকে আটক তিনজনকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা। তারা বলছেন, নাসির উদ্দীনের সঙ্গে যোগাযোগের সূত্র ধরে মোতালেব হোসেনকে আটক করা হয়। এদিকে গতকাল সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, আটক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুজনের বিরুদ্ধে চাকরিবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধরেছে, নিশ্চয়ই কোনো অভিযোগ আছে। সে অভিযোগ কোর্টে প্রমাণ ও শাস্তি হবে। সেই বিধান অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নাহিদ জানান, পুলিশের হাতে আটক মোতালেব নিজের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হলেও এখন আর তাকে কোনো সহযোগিতা দেবেন না। তিনি বলেন, আমরা কখনো অন্যায়কারী ও দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত কাউকে প্রশ্রয় দেব না। এ ব্যাপারে আমাদের অবস্থান খুবই কঠোর। আবারও ঘুষ-দুর্নীতির বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কারও জন্যই দুর্নীতি, অনিয়ম, ঘুষ বা আইনবিরোধী কাজ করার সুযোগ নেই। তারপরও হয়তো হয়। তবে ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়মের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান জিরো টলারেন্স।