রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর রাজনৈতিক কার্যালয়ের পাশের ম্যানহোল (রিজার্ভ ট্যাংক) থেকে আওয়ামী লীগ কর্মীর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। নিহত নয়নাল উদ্দিনের (৬০) বোন কুলসুম বেগম বাদী হয়ে মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় নগরীর বোয়ালিয়া থানায় এ মামলা করেন।
বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবীর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘মামলার এজাহারে কোনো আসামির নাম নেই। অজ্ঞাত আসামিরা এই খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি। জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।’
নিহত নয়নাল উদ্দিনের বাড়ি রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার শ্যামপুর থান্দারপাড়া মহল্লায়। তার মানিব্যাগে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি পাওয়া যায়। এর সূত্র ধরে তার পরিচয় জানা যায়। লাশ উদ্ধারের সময় নিহত ব্যক্তির হাতে হাতঘড়ি ছিল। প্যান্ট-শার্ট পরে ছিলেন। তার পকেটে একটি গুলের কৌটা, লাইটার, ছোট একটি কাচিসহ মানিব্যাগের ভেতর বেশ কিছু কাগজপত্র পাওয়া গেছে।
নিহত নয়নালের ভাতিজা আবদুর রহিম জানান, তার চাচার স্ত্রী-সন্তান নেই। তিনি ভবঘুরে প্রকৃতির লোক। তবে আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ কর্মী। দিনের বেশিরভাগ সময় আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়সহ দলের নেতাদের সঙ্গেই থাকতেন। সেখানেই খাওয়া-দাওয়া করতেন। বাড়ি আলাদা বলে তারা জানেন না যে তিনি কবে থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন।
মঙ্গলবার সকালে রাজশাহী নিউমার্কেটের বিপরীতে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর রাজনৈতিক কার্যালয়ের পাশের ম্যানহোল থেকে নয়নালের লাশটি উদ্ধার করা হয়। ওমর ফারুক চৌধুরী এবারও রাজশাহী-১ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হয়েছেন। নির্বাচনের ডামাডোল শুরু হওয়ার পর তিনি তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রতিদিনই দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছেন। প্রচুর লোকসমাগম হচ্ছে সেখানে। এই লাশের ব্যাপারে কথা বলতে তাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, একই সীমানা প্রাচীরের ভেতরে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর মালিকানাধীন ১০তলা থিম ওমর প্লাজা ও একতলা রাজনৈতিক কার্যালয়। থিম ওমর প্লাজার প্রথম থেকে সাততলা পর্যন্ত শপিংমল। আর সপ্তম থেকে ১০তলা পর্যন্ত অ্যাপার্টমেন্ট। এই ভবনের ১০তলার অ্যাপার্টমেন্টে এমপি ফারুক থাকেন।
এই ভবনের কয়েক ফুট পূর্বে এমপি ফারুকের রাজনৈতিক কার্যালয়। থিম ওমর প্লাজা ও রাজনৈতিক কার্যালয়ের মাঝামাঝি স্থানে পেছন দিকের সীমানা প্রাচীর সংলগ্ন ছোট একটি ম্যানহোল। সেখানে পড়েছিল নিহত ব্যক্তির লাশ। রাজনৈতিক কার্যালয় ও থিম ওমর প্লাজার চারপাশ সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। যেখানে ম্যানহোল, সেই স্থানটিও ওপরে মোটা রডের নেট দিয়ে ঘেরা রয়েছে। দেয়াল টপকে কেউ সেখানে ঢুকতে পারবে না। এ রকম সুরক্ষিত স্থানে কে নয়নালকে হত্যা করে লাশ ম্যানহোলে ফেলে রেখেছিল তা নিয়ে রহস্য দেখা দিয়েছে।
থিম ওমর প্লাজার সিকিউরিটি ইনচার্জ জুবায়ের হোসেন বাপ্পী বলেন, প্রতিদিন সকালে নিরাপত্তা প্রহরীরা চারপাশ ঘুরে দেখেন। মঙ্গলবার সকালে রোম্মান নামের একজন নিরাপত্তা প্রহরী রাজনৈতিক কার্যালয় সংলগ্ন শৌচাগারের ম্যানহোলে লাশটি পড়ে থাকতে দেখেন। লাশ থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। পরে বিষয়টি এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীকে জানানো হয়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশটি উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
থিম ওমর প্লাজার সামনের এক ব্যবসায়ী জানান, এখানকার ব্যবসায়ীরাও ওই শৌচাগারে যান। আগে কখনও শৌচাগারের আশপাশে ব্লিচিং পাউডার ছিটানো দেখেননি। তবে মঙ্গলবার ওই শৌচাগার ও ম্যানহোলের আশপাশে প্রচুর ব্লিচিং পাউডার ছিটানো দেখেছেন।
নগরীর বোয়ালিয়া থানার ওসি হুমায়ুন কবীর বলেন, কয়েকদিন আগে নয়নালের মৃত্যু হয়েছে। ম্যানহোল থেকে তোলার সময় শরীরের চামড়া উঠে গেছে কয়েক স্থানের। তাই কোন আঘাত ছিল কি না তা বোঝা যায়নি। ময়নাতদন্তের পর এটি চিকিৎসকরা বলতে পারবেন। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে। কীভাবে মৃত্যু হয়েছিল তা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলেই নিশ্চিত করে বলা যাবে।