দল থেকে ভাগাতে রাজপথের বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মীদের রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, `আন্দোলনরত নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নিয়ে অত্যাচার জার্মানির কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের অত্যাচারের কাহিনীকেও হার মানায়। দল পরিবর্তনের জন্য কারান্তরীণ গণতন্ত্রকামী রাজনীতিবিদদের চরম অসম্মানজনকভাবে জুলুম করা হচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে।’
বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) বিকেলে এক ভার্চুয়াল সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
রিমান্ডে নির্যাতন করে বিএনপি নেতাকর্মীদের মিথ্যা সাক্ষ্য আদায়ের চেষ্টা চলছে অভিযোগ করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বিএনপির নেতাকর্মীদের নিপীড়ন-নির্যাতন, হেনস্তা ও হেয় করেও এদের তটস্থ করতে না পেরে উৎপীড়নের পথ অবলম্বন করেছে সরকার। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ব্যবহার করে রাজনৈতিক দলের নীতি-নৈতিকতার অধঃপতনের দিকে ঠেলে এক সুগভীর নীল-নকশা চালিয়ে যাচ্ছে… হয় আমাদের কথা শোনো, আর তা না হলে তোমাদের অস্তিত্ব বিপন্ন করে দেবো, এমন অত্যাচার করা হবে- তোমরা যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন পঙ্গু হয়ে অথবা তোমরা জীবন্ত লাশ হয়ে থাকবে। এরকম অত্যাচার করা হচ্ছে বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ওপরে।’
দেশের মানুষকে প্রতারিত করে আর ক্ষমতায় থাকা যাবে না মন্তব্য করে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘এসব করে কোনো লাভ হবে না। এই উৎপীড়নের পথ, নিপীড়নের পথ, নির্যাতনের পথ অবলম্বন করে অথবা লোভ-প্রলোভন দেখিয়ে অবৈধ ক্ষমতা প্রলম্বিত করবেন… সম্প্রসারিত করবেন- এই সুযোগ এবার আর হবে না। সব সুযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।’
দেশের পোশাকশিল্প ধ্বংসের চক্রান্ত হচ্ছে দাবি করে রিজভী বলেন, ‘ক্রেতাদের মতামত উপেক্ষা করে সরকার সমর্থক সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর শোষণ নীতির পক্ষে সরকারের অবস্থান, শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি দমনে হত্যা-নিষ্পেষণ, অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত এবং প্রতিবেশী দেশের স্বার্থে এই সর্ববৃহৎ শিল্প ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নেওয়া হয়েছে। শ্রম অধিকার সুরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র নতুন শ্রমনীতি ঘোষণার পর বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রায় অবধারিত বলে আশংকা করছেন মালিকরা। গতকাল পোশাক খাতে আতঙ্কের বিষয়টি মালিকদের সংগঠন বিজেএমইএ সভাপতির কথাতেই স্পষ্ট হয়েছে। এরই মধ্যে এ খাত ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ ব্যবসা হারিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা বলেছেন- যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিলে আমরাও দেবো। এমন পরিস্থিতির মধ্যে লাখ লাখ গরীবের রুটি রুজির একমাত্র কর্মক্ষেত্র পোশাকশিল্পের ধ্বংস ডেকে আনছে গণবিচ্ছিন্ন সরকার। কারণ দেশের মোট পোশাক রপ্তানির ৮২ শতাংশ হয় ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলোতে। এসব দেশে রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হলে এ শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। জনগণ বিশ্বাস করে পোশাক খাতের ব্যবসা এখন অন্য দেশের হাতে তুলে দিয়ে অবৈধ ক্ষমতায় থাকার গ্যারান্টি চান প্রধানমন্ত্রী। সুতরাং আগামীর একতরফা নির্বাচন শুধু শেখ হাসিনার ক্ষমতার নবায়ন নয়, বাংলাদেশকে ধ্বংস করার লাইসেন্স।’
রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষকে সরকারের লোকজন বোকা ভাবেন, বিদেশিদেরকেও তারা বোকা ভাবতে শুরু করেছেন। তারা ভেবেছেন এভাবে সবার চোখে ধুলো দেওয়া যাবে। বাংলাদেশের সব মানুষ জানে, এমনকি যারা আওয়ামী লীগ করে তারাও জানে যে এই সরকার দেশের মানুষের সঙ্গে সর্বোচ্চ প্রতারণা করছে। বাংলাদেশের সব মানুষকে তাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য রাজপথে নামতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার বলেছি একতরফা নির্বাচন দেশের রাজনৈতিক সংকটকে আরও ঘনীভূত করবে, বিপর্যস্ত করবে। দেশকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেবে। এই পাতানো নির্বাচন কেবল বয়কট নয়, গণপ্রতিরোধের মাধ্যমে এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে একটা সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে।’
এসময় গত ২৪ ঘণ্টায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা মামলা ও তাদের গ্রেফতারের তথ্য তুলে ধরেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ৪১৫ জনের অধিক নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। এসময় ১৯ মামলায় ২ হাজার ৪৫ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।’