কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি ভোকেশনাল ৯ম শ্রেণির বোর্ড ফাইনাল পরীক্ষায় একসঙ্গে অংশ নিয়েছেন মা ও মেয়ে। সখীপুরের সূর্য তরুণ শিক্ষাঙ্গন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে গতকাল মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) গণিত পরীক্ষায় অংশ নেন তারা। বিরোধীদলের অবরোধ কর্মসূচির কারণে গত ১ নভেম্বর সারা দেশে পরীক্ষা শুরু হতে পারেনি। ১ নভেম্বরের বাংলা পরীক্ষা আগামী শনিবার অনুষ্ঠিত হবে।
পরীক্ষায় অংশ নেওয়া মায়ের নাম শেফালী আক্তার। তার মেয়ের নাম সাবরিনা। শেফালী আক্তার উপজেলার বড়চওনা বিন্নাখাইরা গ্রামের মৃত আব্দুস সবুর মিয়ার স্ত্রী। শেফালীর ছোট ছেলে সামিউল ইসলাম তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে।
শেফালী আক্তার বলেন, ‘পড়াশোনার প্রতি আমার আগ্রহ থাকলেও অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় আমার বিয়ে হয়। ২০২১ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামী মারা যাওয়ার পর মেয়েকে বিদ্যালয়ে ও প্রাইভেট পড়াতে আমাকেই সঙ্গে যেতে হতো। পরে চিন্তা করি মেয়ের সঙ্গে আমিও পড়াশোনা করবো। পরে ৯ম শ্রেণিতে মেয়ের সঙ্গে আমিও ভর্তি হই। প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মেহেদী হাসান আমাকে পড়ার জন্য উৎসাহ দেন। একই কেন্দ্রে ও একই কক্ষে মেয়ের পেছনের বেঞ্চে বসে পরীক্ষা দিচ্ছি। মেয়ের চেয়েও আমার পরীক্ষা ভালো হয়েছে।’
পড়ালেখা করে অনেক দূরে এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে শেফালী আক্তার আরও বলেন, ‘সর্বোচ্চ ডিগ্রি নেওয়ার ইচ্ছা আছে। যাতে সমাজে আর দশ জনের মতো নিজেকে একজন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে পারি। আমি বাল্য বিয়ের কারণে সময়মতো পড়তে পারেনি। আমার মেয়েকে মাস্টারস ডিগ্রি পাস করিয়ে বিয়ে দেব।’
মায়ের পড়ালেখার প্রতি এমন আগ্রহের বিষয়ে মেয়ে সাবরিনা আক্তার বলেন, ‘ভাবতে খুব ভালো লাগছে, আমরা মা-মেয়ে একই সঙ্গে এসএসসি ভোকেশনাল ৯ম শ্রেণির ফাইনাল পরীক্ষা দিচ্ছি। এমন সুযোগ আর কয়জনার ভাগ্যে আসে। মা শুধু আমার মা-ই নন, তিনি ভালো একজন বান্ধবী।’
উপজেলার ভুয়াইদ টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট অ্যান্ড বিএম কলেজের অধ্যক্ষ মেহেদী হাসান বলেন, ‘ইচ্ছাশক্তি থাকলে লেখাপড়ায় বয়স কোনো বাধা নয়। শেফালী আক্তারের এমন উদ্যোগ অনেককে অনুপ্রাণিত করবে। দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে সমাজে। আমরা মা-মেয়ের সাফল্য কামনা করছি।’