চিংড়ি ঘেরের জমি ইজারার নামে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার রোপাই খাল নামের একটি প্রবহমান খালে অবৈধভাবে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষের অভিযোগ উঠেছে। পেকুয়ার মগনামা ইউনিয়নের কোনপাড়া ও বাইন্যা ঘোনা গ্রামের মধ্যবর্তী ‘রোপাই খাল’-এর বিস্তীর্ণ এলাকা নিয়ে এভাবে অবৈধ বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছে স্থানীয় সংঘবদ্ধ প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। এতে খালটির দুই তীরের বাসিন্দাদের চাষাবাদে বিঘ্ন ঘটছে।
সরকারি এ খালটি উদ্ধারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে এলাকাবাসী জেলা, উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে বেশ কয়েকবার লিখিত আবেদন করলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমনকি পেকুয়া উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় কয়েকবার বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে। গত বছরের ১১ নভেম্বর এবং গত ৮ জানুয়ারি আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় অবৈধ দখল উচ্ছেদ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে কমিটির অন্যতম সদস্য এবং কক্সবাজার জেলা পরিষদের নির্বাচিত সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘গত বিএনপির আমলে ভুল তথ্য দিয়ে বিএনপিদলীয় লোকজন সরকারি খালের জমি চিংড়ি ঘেরের নাম দিয়ে পর্যন্ত অবৈধভাবে ইজারা নিয়ে খাল বন্ধ করে রেখেছেন। এ ব্যাপারে জনগণের অধিকার বাস্তবায়নের জন্য এক্ষুনি ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’
এ প্রসঙ্গে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মাহবুবউল আলম সংবাদকর্মীদের জানান, নদী-খাল-বিল ইজারা দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। এটা সম্পূর্ণ অবৈধ। বিষয়টি আমার জানা ছিল না। শিগগির সরেজমিনে গিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এলাকার লোকজন জানায়, রোপাই খালের মাঝখানে বাঁশের তৈরি বেড়ার বাঁধ দিয়ে বিভিন্ন স্থানে মাছ চাষ করা হচ্ছে। এ অংশের দক্ষিণে আড়াআড়ি করে বাঁশের চালি ঘন করে তার উপর জাল ও পলিথিন দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে। উত্তর দিকেও একইভাবে আটকানো হয়েছে। এরপর দখলদাররা সেখানে নানা জাতের মাছের চাষ করছেন।’
এলাকাবাসীর অভিযোগ, খাল দখলের নেতৃত্বে রয়েছেন পেকুয়া উপজেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ও মগনামা ইউনিয়নের বাইন্যা ঘোনা গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে মো. মিজানুর রহমান। গত মাস দুয়েক আগে থেকে এ খালটি দখল করে মাছ চাষ করছেন তিনি। সেইসঙ্গে স্থানীয় রুকুরুদিয়া গ্রামের হাজী নুরুল আবছারের ছেলে নুরুল আজিম, বাইন্যা ঘোনা গ্রামের মৃত কালুর ছেলে আবদুর রহিম এবং আরো একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তিও খালটি দখলে নিয়ে মাছ চাষ করছেন।
এলাকাবাসী আরো জানায়, খালের দুই পাশের তিনটি গ্রামে অন্তত দুই হাজার একর কৃষি জমিতে লবণের চাষাবাদ হয়। তাছাড়া মৌসুমী ধানের চাষও হয় কিছু জমিতে। এখন সেই খাল দখল করায় কৃষিকাজে প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া দখলদারদের কারণে গ্রাম তিনটির কোনো বাসিন্দা খালের পানি ব্যবহার করতে পারেন না। খালে জাল দিয়ে মাছ ধরে যেসব ব্যক্তি জীবিকা নির্বাহ করতেন, তারা এখন উপার্জনহীন হয়ে পড়েছেন। খালে গ্রামের কোনো লোক মাছ ধরলে ওই প্রভাবশালীরা জরিমানা ও মারধর করার হুমকি দেন বলে জানান এলাকাবাসী।
স্থানীয় বাইন্যাঘোনা গ্রামের বাসিন্দা মনির হায়দার চৌধুরী জানান, রোপাই খালে জাল দিয়ে স্থানীয়রা যুগ যুগ ধরে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করত। সেই মাছ বিক্রি করে খালের পার্শ্ববর্তী গ্রামের লোকজন সংসার চালাতেন। আর এখন প্রভাবশালীরা খাল দখল করে নেওয়ায় দরিদ্র পরিবারের লোকজন মাছ ধরতে পারছেন না। রোপাই খাল প্রভাবশালীদের দখলে চলে যাওয়ায় এখন গ্রামের দরিদ্র লোকজনের বেঁচে থাকাটাই দায় হয়ে পড়েছে বলে জানান গ্রামবাসী নুরুল হোসাইন।
গ্রামবাসী আরো জানান, তারা খালের কূলে বসবাস করেও কৃষিকাজে খালের পানি ব্যবহার করতে পারছে না। তারা স্থানীয় মেম্বার-চেয়ারম্যানকে এ বিষয়ে জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না।
তবে রোপাই খাল দখলের ব্যাপারে বাইন্যা ঘোনা গ্রামের মৃত মজু মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ আলী এবং তার ছেলে ও উপজেলা ছাত্রদল নেতা মিজানুর রহমান বলেন, ‘ওই খালের ইজারা আমাদের নামে ছিল। যেহেতু খাল ইজারা নিয়েছি; সেহেতু খালে বাঁধ দিয়ে হোক যে কোনো উপায়ে তো মৎস্য চাষ করবো।’ প্রবহমান খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষের নিয়ম না থাকলেও তিনি কীভাবে করছেন জানতে চাইলে ওই দখলদার কোনো ধরনের সদুত্তর দিতে পারেননি।