সাবেক স্বামীর পরিকল্পনায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) যুগ্ম কমিশনার মাসুমা খাতুনকে অপহরণ ও মারধর করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
শনিবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল-মঈন এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, শুক্রবার (২৪ আগস্ট) রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র্যাব-১ ও ৩ এর যৌথ আভিযানিক দল গাজীপুরের শ্রীপুর ও রাজধানীর সবুজবাগ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার প্রধান আসামি মো. মাসুম ওরফে মাসুদ, মো. আব্দুল জলিল ওরফে পরু, মো. হাফিজ ওরফে শাহনিকে গ্রেপ্তার করা হয় । প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা অপহরণের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে স্বীকার করেছে।
তিনি আরও জানান, মাসুদ আগে ওই নারীর ব্যক্তিগত গাড়ির ড্রাইভার হিসেবে কর্মরত ছিল। ১ আগস্ট ব্যক্তিগত শৃঙ্খলাজনিত কারণে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেন। ফলে মাসুদের মধ্যে ভুক্তভোগির প্রতি ব্যক্তিগত ক্ষোভ ও আক্রোশের সৃষ্টি হয়। মাসুদ জানায়, তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পর তার প্রথম স্বামী হারুন অর রশিদ তার সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং ‘উচিত শিক্ষা’ দিতে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকার একটি বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য মাসুদকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ও উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী হারুন অর রশিদ তাকে অগ্রীম ৭০ হাজার টাকা দেয় এবং এই কাজের পরে তাকে আর ড্রাইভিং করতে হবে না ও উন্নত জীবন যাপন করার সব ব্যবস্থা করে দেবে বলে আশ্বাস দেয়।
কমান্ডার মঈন বলেন, পরবর্তীতে ১৫ আগস্ট রাজধানীর সবুজবাগ এলাকায় মাসুদ তার সহযোগীদের পরিকল্পনার কথা জানায় ও সবাইকে টাকা বণ্টন করে দেয়। তারা রাজধানীর বেইলী রোড এলাকা থেকে ভুক্তভোগীকে অপহরণের সিদ্ধান্ত নেয়। ভুক্তভোগীর বর্তমান গাড়ি চালকের সঙ্গে হাফিজের সুসম্পর্ক থাকায় ভুক্তভোগীর অবস্থান গাড়িচালকের কাছ থেকে জেনে মাসুদকে জানায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৮ আগস্ট রাতে তারা রাজধানীর বেইলী রোড এলাকায় অবস্থান নেয়। ভুক্তভোগী নারী রাত সোয়া ৮ টায় মগবাজার থেকে নিজ গাড়িযোগে বেইলী রোড এলাকায় পৌঁছলে তারা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী একটি মোটরসাইকেল ও একটি রিকশা দিয়ে ভুক্তভোগীর গাড়ির গতিরোধ করে। এসময় ড্রাইভার নামলে তাকে মারধর করে এবং মাসুদ গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। এসময় পনুসহ অন্যান্য সহযোগীরা গাড়িতে উঠে বসে তাকে অপহরণ করে হাতিরঝিলের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় এবং অপহরণের বিষয়টি ভুক্তভোগীর প্রথম স্বামীকে জানায়। তখন ভুক্তভোগীর প্রথম স্বামী তাদের হাতিরঝিলে একটি বাসার ঠিকানা বলে দেয় এবং সেখানে নিয়ে যেতে বলে। কিন্তু সেখানে গিয়ে তারা ওই বাসার মেইন গেট বন্ধ পাওয়ায় ভুক্তভোগীকে নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গাড়িতে করে ঘুরে সময়ক্ষেপণ করতে থাকে। পরবর্তীতে আনুমানিক রাত ১২টায় কাঁচপুর এলাকায় মাসুদের পরিচিত একটি গ্যারেজে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ভুক্তভোগীর কাছে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে এবং তার কাছে থাকা নগদ দেড় লাখ টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। পরবর্তীতে তাকে রাজধানীর মাদারটেক এলাকায় নিয়ে যায় এবং দুপুর পর্যন্ত অবস্থান করে। এ সময় মাসুদ ভুক্তভোগীর প্রথম স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি তাদের জুমার নামাজের পর সেখানে নিয়ে যেতে বলেন। পরবর্তীতে দুপুরে খাবার সময় হলে মাসুদ, রাজু ও সাব্বির খাবার আনতে যায় এবং পনু, সাইফুল ও শান্ত গাড়ি বাইরে পাহাড়ায় থাকে। এসময় সুযোগ বুঝে ভুক্তভোগী বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার শুরু করলে স্থানীয় লোকজন ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে সাইফুল, সাব্বির ও রাজুকে আটক করে এবং মাসুদ, পনু ও শান্ত কৌশলে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
পরে পুলিশ এসে ভুক্তভোগীকে হেফাজতে নেয় এবং সাইফুল, সাব্বির ও রাজুকে গ্রেপ্তার করে তাদের কাছ থেকে ভুক্তভোগীর ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করে।
উল্লেখ্য, ১৮ আগস্ট রাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর একজন নারী যুগ্ন কর কমিশনার রাজধানীর মগবাজার এলাকায় কতিপয় দুর্বৃত্ত কর্তৃক অপহৃত হন। পরবর্তীতে অপহরণের ১৮ ঘণ্টা পর রাজধানীর সবুজবাগ থানার মাদারটেক এলাকা থেকে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় তিনি তার সাবেক গাড়ি চালক ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে বাদি হয়ে রাজধানীর রমনা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।