মাঠে নামার আগেই বাংলাদেশের সেমিফাইনালের সমীকরণ সহজ করে দিয়েছিল লেবানন। মালদ্বীপকে তারা ১-০ গোলে হারানোয় ভুটানের বিপক্ষে বাংলাদেশ কেবল ১ পয়েন্ট পেলেই হয়ে যেত। কিন্তু সেমিফাইনাল নিশ্চিতের ম্যাচে বাংলাদেশ ভয়ংকর রূপে দেখা দিল। ১৪ মিনিটের ঝড়ে উড়ে গেল ভুটান। আগে গোল হজম করেও ভুটানকে ৩-১ ব্যবধানে হারিয়ে ১৪ বছর পর সাফ চ্যাম্পিয়শিপের সেমিফাইনালে উঠল বাংলাদেশ। যা নিকট অতীতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাফল্য বলেই বিবেচিত হচ্ছে।
২০০৯ সালের পর দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের এই সর্বোচ্চ আসরে আর সেমিফাইনাল খেলা হয়নি বাংলাদেশের। টানা পাঁচ আসরে প্রথম পর্ব বা গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে হতাশাকে সঙ্গী করেছে বাংলাদেশ। সঙ্গে নিজেদের সামর্থ্যের পাশে বড় প্রশ্নবোধক চিহ্নও এঁকে দিয়েছিলেন ফুটবলাররা। তবে এবারের সাফ ফুটবলে হাভিয়ের কাবরেরার শিষ্যরা যে মানের খেলা উপহার দিচ্ছেন তাতে বড় আশা নিয়ে আবারো ফুটবল প্রেমে পড়তে শুরু করছেন ভক্তরা।
একপাশে মোরসালিন। আরেক পাশে রাকিব। আক্রমণভাগে দুই প্রান্ত থেকে দুই দ্রুতগতির ফরোয়ার্ড বাংলাদেশের খেলার খোলনলচে পাল্টে দিয়েছে। দারুণ বল নিয়ন্ত্রণ, পাসিংয়ে বোঝাপড়া ও ঠাণ্ডা মাথার ফিনিশিংয়ে দুজনের রসায়ন জমে উঠেছে বেশ।
প্রথমার্ধের ১২ মিনিটে ভুটানের আকস্মিক গোছালো আক্রমণে গোল হজম করে বাংলাদেশ। বক্সের অনেকটা বাইরে থেকে তেন্দা দর্জির দুর্দান্ত এক শটে এগিয়ে যায় ভুটান। কয়েক মিনিট পর নিমার প্রায় ৩০ গজ থেকে নেওয়া শট বাংলাদেশের গোলপোস্টে লেগে বেরিয়ে যায়। ওই কয়েক মিনিটে বিবর্ণ হয়ে উঠে দলের মিডফিল্ড।
তবে মাঠ গুছিয়ে নিতে সময় নেননি জামালরা। গোল হজমের ১০ মিনিট পর বাংলাদেশকে সমতা এনে দেন মোরসালিন। ২২ মিনিটে তরুণ মিডফিল্ডার জটলা থেকে বল পেয়ে বক্সের বাইরে থেকে বাঁ পায়ের দুর্দান্ত শটে ১-১ করেন। ওই গোলের রেশ কাটতে না কাটতেই আত্মঘাতী গোলে বাংলাদেশ এগিয়ে যায়। মোরসালিনের ক্রস থেকে পাওয়া বল রাকিব দিতে চেয়েছিলে জামালকে। বল ভুটানের এক খেলোয়াড়ের গায়ে লেগে চলে যায় জালে।
৩৬ মিনিটে দিনের ম্যাচের সেরা গোলটি করে রাকিব। ডি বক্সের বাইরে থেকে বল নিয়ে একক প্রচেষ্টায় ঢুকে যান রাকিব। পায়ে ছিল ক্ষিপ্রতা। নিশানাও ছিল দারুণ। গোলপোস্টের একদম কাছে গিয়ে কোনাকুনি শটে রাকিব তৃতীয় গোল করে ভুটানকে হতাশায় ডোবান। ২২ থেকে ৩৬ মিনিট; ১৪ মিনিটের এই ঝড়েই ধরাশয়ী ভুটান।
৩-১ গোলের ব্যবধানে বাংলাদেশ প্রথমার্ধ শেষ করে এবং পরের ৪৫ মিনিটে সেমিফাইনালিস্টরা এই ব্যবধানে এগিয়ে থেকে শেষ হাসিটা হাসে। দ্বিতীয়ার্ধে গোল করার তেমন সুযোগ তৈরি করতে পারেনি বাংলাদেশ। গোল করার জন্য তেমন আক্রমণও তৈরি করতে পারেননি। খেলাটা অনেকটাই স্লো করে আনেন মোরসালিন, জামাল, সোহেল রানারা। কোচ কাবরেরা পাঁচ পরিবর্তন করে সাইড বেঞ্চের খেলোয়াড়দেরও ঝালিয়ে নিয়েছেন। অন্যদিকে গোলমুখে একাধিক সুযোগ তৈরি করেও ভুটান পারেনি বাংলাদেশের রক্ষণ ভাঙতে। তাতে খালি হাতেই প্রতিযোগিতা থেকে বিদায় নিয়েছে ভুটান।
এই ম্যাচের আগে ভুটানের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রাপ্তির হাসিই বেশি। সাফে ছয়বারের দেখায় ভুটানের কাছে কখনও হারেনি দল। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত ১৩ বার মুখোমুখির পরিসংখ্যানে বাংলাদেশের জয় ১০টি, ড্র দুটি, হার মাত্র একটি। সাফল্যের পাতায় যোগ হলো নতুন অধ্যায়।
রাত পোহালেই ঈদের আনন্দ। সাফের সেমিফাইনালে উঠে ফুটবলাররা নিশ্চিতভাবেই সেই আনন্দ দ্বিগুণ করলেন। সেমিফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ প্রথমবারের মতো প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া কুয়েত।