স্রেফ বৃষ্টি কী বাঁচাতে পারে আফগানিস্তানকে? আষাঢ়ের দ্বিতীয় দিনে শেষ বিকেলের কালো মেঘ দেখে আফগানিস্তান ড্রেসিংরুমের দলীয় সংগীত হতে পারে, ‘গিভ আস সাম রেইন।’ ফ্লাডলাইটের আলোয় দ্রুত বোলিং করা বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে হয়তো চলেছে, ‘গিভ আস সাম সান সাইন।’
দুই দলের মধ্যকার একমাত্র টেস্টের তৃতীয় দিনের খেলায় ২০ ওভার হয়নি আলোক স্বল্পতায়। নয়তো শেষ বিকেলে বাংলাদেশ অতিথিদের আরও কয়েকটি উইকেট নিয়ে নিজেদের জয়ের কাজে এগিয়ে থাকতে পারত।
প্রথম ইনিংসের ২৩৬ রানের লিডসহ দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেটে ৪২৫ রান করে বাংলাদেশ আফগানিস্তানকে ৬৬২ রানের টার্গেট ছুঁড়ে দেয়। লক্ষ্য তাড়ায় ৪৫ রান তুলতে ২ উইকেট হারিয়েছে অতিথিরা। ৬১৭ রানে পিছিয়ে থাকা আফগানিস্তানের জয়ের চিন্তা অনেকটাই আকাশকুসুম! কেননা টেস্ট ক্রিকেটে চতুর্থ ইনিংসে এতো রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড নেই কোনো দলের। আর বাংলাদেশের নিজেদের টেস্ট ইতিহাসের সর্বোচ্চ রানের জয়ের হাতছানি। ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়েকে চট্টগ্রামে ২২৬ রানে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। দারুণ ছন্দে থাকা বোলাররা অবিশিষ্ট ৮ উইকেট পেতে কম সময় ও কত রান দেন সেটাই দেখার।
মিরপুরে প্রথম দুদিনের মতো তৃতীয় দিনও দাপট দেখিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তার জোড়া সেঞ্চুরির দিনে দু্যতি ছড়িয়ে মুমিনুল তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের দ্বাদশ সেঞ্চুরি। তিন অঙ্কের দেখায় মুমিনুল আগে থেকেই বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে শীর্ষে ছিলেন। আজ নিজেকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়েছেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
স্কোরবোর্ডে ১৩৪ রান নিয়ে দিন শুরু করেছিলেন জাকির ও শান্ত। আগের দিনের জমাট ব্যাটিং দুজন টেনে আজ বড় করলেও রান আউটে ভাঙে তাদের জুটি। জাকির ৭১ রানে ড্রেসিংরুমে ফিরে আসেন রান আউট হয়ে। সেখান থেকে মুমিনুলকে নিয়ে শুরু হয় শান্তর জোড়া সেঞ্চুরির মিশন। জোড়া সেঞ্চুরির এমন কীর্তি আগে ছিল কেবল মুমিনুলের। শান্ত তাকে নিয়েই পৌঁছে যান ল্যান্ডমার্কে। তবে বড় করতে পারেননি এই ইনিংস। ১২৪ রানে তাকে থামান জহির খান। দুই ইনিংস মিলিয়ে ২৭০ রান তুলে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন এই ব্যাটসম্যান।
সঙ্গী হারানোর পর মুমিনুল ফিফটিতে পৌঁছান ৬৭ বলে। পাঁচে নেমে মুশফিক পারেননি যোগ্য সঙ্গ দিতে। জহির খানকে ছক্কা উড়ানোর পরের বল রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দেন ৮ রানে। অধিনায়ক লিটন ক্রিজে এসে দারুণ সব শটে নিজের রান তরতরিয়ে বাড়িয়ে নেন। অন্যদিকে মুমিনুল ধারাবাহিক রানে সেঞ্চুরির পথে এগিয়ে যান। নার্ভাস নাইন্টিসেও এই ব্যাটসম্যান ছিলেন অকুতোভয়। পেসার ইয়ামিন আহমেদযাইকে আপারকাটে চার মেরে ৯৮ থেকে ১০২ রানে পৌঁছান। ফিফটির পর পরের ৫৬ বলেই তিন অঙ্কের ল্যান্ডমার্ক ছুঁয়ে ফেলেন মুমিনুল। লিটনও সঙ্গীর পথ ধরে তুলে নেন ফিফটি।
২২ গজে এতোটাই মনোযোগ দেখিয়েছিলেন যে তাদের ১৪৩ রানের জুটি ভাঙতেই পারছিল না আফগানরা। লিড রানের পাহাড়ে চলে যাওয়ার পর ইনিংস ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। নতুন বল আসার আগেই ইনিংস ঘোষণা করেন লিটন। মুমিনুল ১২১ ও লিটন ৬৬ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন।
বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় আফগানিস্তানের ব্যাটিংয়ের শুরুটা একদমই ভালো হয়নি। ৭ রান তুলতেই দুই ওপেনার ড্রেসিংরুমে ফেরেন। পেসার শরিফুল ইনিংসের প্রথম বলে এলবিডব্লিউ করেন ইব্রাহিমকে। আরেক পেসার তাসকিন নেন আব্দুল মালিকের উইকেট। ডানহাতি পেসার এরপর ধারাবাহিক গতিতে বল করছিলেন। তার শর্ট বল থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে বিপদ ডেকে আসেন হাশমতউল্লাহ শহীদি। স্ট্রেচারে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যান শহীদি। শেষ বিকেল আর বিপর্যয়ে পড়েনি আফগানিস্তান। নাসির জামাল ৫ ও রহমত শাহ ১০ রানে অপরাজিত রয়েছেন।
তাদের ফেরানোর পর অবশিষ্ট ৬ উইকেট নিতে বাংলাদেশের বোলাররা কত সময় নেন সেটাই দেখার।