সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বজুড়ে খাদ্যমন্দা, মুদ্রাস্ফীতি ও বিদ্যুতের ঘাটতি প্রতিটি মানুষের জীবন অসহনীয় করে তুলেছে। এ অস্বাভাবিক পরিস্থিতি আর কতদিন চলবে, তা কেউ বলতে পারে না। বিশ্ব পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে।
রোববার (৪ জুন) জাতীয় সংসদে উত্থাপিত শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। আফসারুল আমীন এমপির মৃত্যুতে সংসদে শোক প্রস্তাব তোলা হয়। পরে তা সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, স্যাংশন ও পাল্টা স্যাংশন, বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি ও জ্বালানি তেলের অভাবে এখন শুধু বাংলাদেশ নয়, উন্নত দেশগুলোও হিমশিম খাচ্ছে। ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে কিন্তু জ্বালানি সঙ্কট হচ্ছে। সেখানে লোডশেডিং বা বিদ্যুৎ ব্যবহার সীমিত করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, খাদ্যপণ্য থেকে শুরু করে প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়েছে। উন্নত দেশেও বহু মানুষ চাকরি হারাচ্ছে। এমন একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি চলছে বিশ্বব্যাপী। আমি জানি না, আর কখনো এরকম পরিস্থিতি হয়েছিল কি না। হয়ত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে তো দুর্ভিক্ষ ও মন্বন্তর দেখা দিয়েছিল।
সংসদ নেতা বলেন, করোনাভাইরাস মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সমগ্র বিশ্বে যে খাদ্যমন্দা, মুদ্রাস্ফীতি, পরিচালন ও পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি এবং বিদ্যুতের ঘাটতি তৈরি করেছে, তা প্রতিটি মানুষের জীবন অসহনীয় করে তুলেছে। বাংলাদেশে আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। কিন্তু, জ্বালানি তেল, কয়লা বা গ্যাসের অভাব এখন বিশ্বব্যাপী। এখন তো কেনাটাই অনেকটা মুশকিল। কেনা অসম্ভবও হয়ে পড়েছে। তারপরও আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। এরইমধ্যে কাতার ও ওমানের সঙ্গে আমাদের চুক্তি সই হয়ে গেছে। আমরা জলবিদ্যুৎ আমদানির ব্যবস্থা নিয়েছি। কয়লা কিনতে এরই মধ্যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যেন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আমরা আবার চালু করতে পারি।
সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সবাইকে অনুরোধ করব, বিদ্যুৎ ব্যবহারে একটু সাশ্রয়ী হতে হবে। সব জিনিস ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। আমাদের খাদ্য উৎপাদনও বাড়াতে হবে। আমাদের চেষ্টা করে যেতে হবে। বিশ্বের এ অস্বাভাবিক পরিস্থিতি আর কতদিন চলবে তা কেউ বলতে পারে না।
আফসারুল আমীনকে স্মরণ করে তিনি বলেন, আফসারুল আমীন ছাত্রজীবন থেকে ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। প্রতিটি সংগ্রামে ভূমিকা রেখেছেন। নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। দলের প্রতি তার নিষ্ঠা ও সততা ছিল অতুলনীয়। তিনি মন্ত্রী হিসেবেও অত্যন্ত সাফল্য দেখিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সব সময়ই দুর্গতদের সেবা করে, উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯১ সালে ঘূর্ণিঝড় হয়েছে, মানুষ মারা গেছে। তৎকালীন বিএনপি সরকার জানেই না যে, ঘূর্ণিঝড় হয়েছে। সবার আগে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ছুটে যায়। আমি নিজেও ছুটে যাই। সেই কুতুবদিয়া, মহেশখালী, বাঁশখালীতে লাশ ভাসতে দেখি। তখন আফসারুল আমীনসহ চট্টগ্রামের সব নেতা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।