বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৪৪ জন শিল্পোদ্যোক্তাকে ২০২১ সালের জন্য বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (শিল্প) তথা সিআইপি (শিল্প) হিসেবে সম্মাননা দিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়।
‘সিআইপি (শিল্প) নীতিমালা ২০১৪’ অনুযায়ী বাংলাদেশের বেসরকারি খাতে শিল্প স্থাপন, পণ্য উৎপাদন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং জাতীয় আয় বৃদ্ধিসহ দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এ সম্মাননা দেওয়া হয়। প্রতিবছর এ সম্মাননা দেওয়ার কথা থাকলেও করোনা মহামারিসহ বিভিন্ন কারণে সিআইপি (শিল্প) ২০১৭ সম্মাননা দেওয়ার তিন বছর পর এবার সিআইপি (শিল্প) ২০২১ সম্মাননা দেওয়া হলো।
সোমবার (২২ মে) হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, ঢাকায় এ সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুর হোসেন, এফবিসিসিআই’র প্রেসিডেন্ট মো. জসিম উদ্দিন। সভাপতিত্ব করেন শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বর্তমান সরকার দেশে শিল্প ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে সক্ষম হয়েছে। কৃষিনির্ভর অর্থনীতি থেকে দেশ ক্রমশ শিল্প ও সেবাখাতমুখী অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। বর্তমান সরকারের সঠিক দিকনির্দেশনায় ও নীতিনির্দেশনায় বাংলাদেশে ইতোমধ্যে নীরব শিল্প বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে। শিল্প খাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে সরকার ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলেছে। শিল্প-কারখানায় আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির প্রয়োগ বাড়ানো হয়েছে। জাতীয় অর্থনীতিতে শিল্প খাতের অবদান কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, বিগত এক দশকে শিল্প মন্ত্রণালয় গৃহিত নানামুখী পদক্ষেপের ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প কারখানাগুলোর কর্মক্ষমতা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে। জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ইতোমধ্যে ৩৭ শতাংশ অতিক্রম করেছে। এই ধারা অব্যাহত রেখে জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ৪০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বে শিল্প মন্ত্রণালয় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সম্প্রতি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ঢেউ বাংলাদেশে এসে লেগেছে। এর ফলে দেশে জ্ঞানভিত্তিক ও পরিবেশবান্ধব সবুজ শিল্পায়নের নতুন ধারা সূচিত হয়েছে। এ ধারা গতিশীল করতে শিল্প মন্ত্রণালয় বেসরকারি খাতকে সম্ভব সব ধরনের নীতি সহায়তা দিচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত রেখে বাংলাদেশ ২০৪১ সালের অনেক আগেই উন্নত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের শিল্প উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতাও বাড়ছে। বিশ্ব-বাণিজ্যে আমরা প্রতিদিনই নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছি। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে কাজ করতে হবে। শিল্প মন্ত্রণালয় অতীতেও বেসরকারি শিল্প খাতের বিকাশে ফ্যাসিলিটেটরের ভূমিকা পালন করেছে। শিল্পায়নের স্বার্থে ভবিষ্যতেও আমরা এ দায়িত্ব পালন করে যাব। শিল্প খাতের অগ্রযাত্রায় বেসরকারি উদ্যোক্তাদের প্রতি আমাদের সরকারের সর্বোচ্চ সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা অব্যাহত থাকবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ এক বাংলাদেশ। তার দর্শন ছিল ‘বাংলার মানুষের মুক্তি’। সেই মুক্তি অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক মুক্তি। সেই স্বপ্ন আজ বাস্তবায়ন করছেন তারই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা। করোনা মহামারিতে সমগ্র বিশ্ব বিপর্যস্ত হলেও প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ করোনা পরিস্থিতি সাফল্যের সাথে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যার সৃজনশীল নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার বাংলাদেশ এখন সমগ্র বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল এবং মধ্যম আয়ের দেশ। মধ্যম আয়ের এই বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের কাতারে পৌঁছাতে হলে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে কাজে লাগাতে হবে এবং দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে অব্যহত রাখতে হবে।
সিআইপি (শিল্প) হিসেবে নির্বাচিত ব্যক্তিদের শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে একটি পরিচয়পত্র (সিআইপি কার্ড) দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে তারা আগামী এক বছরের জন্য জাতীয় ও সিটি করপোরেশনের অনুষ্ঠানে নাগরিক সংবর্ধনায় দাওয়াত, ব্যবসাসংক্রান্ত কাজে ভ্রমণের সময় বিমান, রেলপথ, সড়ক ও জলপথে সরকারি যানবাহনে আসন সংরক্ষণে অগ্রাধিকার পাবেন। বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের সুবিধা পাবেন। স্ত্রী, সন্তান ও নিজের চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালে বিশেষ সুবিধা পাবেন। এছাড়া, সরকারের শিল্পবিষয়ক নীতিনির্ধারণী কমিটিতে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা যাবে।
২০২১ সালের জন্য এনসিআইডি কোটায় ৬ জন এবং অন্যান্য ক্যাটাগরিতে ৩৮ জনকে সিআইপি (শিল্প) সম্মাননা দেওয়া হয়।
এনসিআইডি ক্যাটাগরি: জাতীয় শিল্প উন্নয়ন পরিষদ বা এনসিআইডি ক্যাটাগরিতে সিআইপি হয়েছেন এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি কামরান তানভিরুর রহমান, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিল অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন, ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআই) সভাপতি রুপালী হক চৌধুরী, বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি একেএম সেলিম ওসমান এবং বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী।
বৃহৎ শিল্প (উৎপাদন): এ ক্যাটাগরিতে সিআইপি হয়েছেন স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা অংশীদার এরিক এস চৌধুরী, বিএসআরএম স্টিলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান আলী হুসাইন আকবর আলী, প্রাণ ডেইরি লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. ইলিয়াস মৃধা, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোবারক আলী, জাবের অ্যান্ড জুবায়ের ফেব্রিক্স লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জাবের, এসিআই লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. আরিফ দৌলা, পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মোস্তাফিজুর রহমান, আবদুল মোনেম লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএসএম মাঈনউদ্দিন মোনেম, ফারিহা নিট টেক্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মামুন ভূঁইয়া, স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী, হ্যামস গার্মেন্টেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. সফিকুর রহমান, বাদশা টেক্সটাইলসের উদ্যোক্তা পরিচালক কামাল উদ্দিন আহাম্মদ, মীর সিরামিক লিমিটেডের পরিচালক মাহরীন নাসির, ডিউরেবল প্লাস্টিক লিমিটেডের পরিচালক উজমা চৌধুরী, রানার অটোমোবাইলস্ লিমিটেডের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান, উইনার স্টেইনলেস স্টিল মিলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. সোহেল রানা, তাসনিয়া ফেব্রিক্সের উদ্যোক্তা পরিচালক আহমেদ আরিফ বিল্লাহ, সোহাগপুর টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সিকদার, এনভয় টেক্সটাইলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান কুতুবউদ্দিন আহমেদ এবং কনফিডেন্স পাওয়ার হোল্ডিংস লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান ইমরান করিম।
বৃহৎ শিল্প (সেবা): এ বিভাগে সিআইপি হয়েছেন এসটিএস হোল্ডিংস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার মনির উদ্দীন, এসবি টেল এন্টারপ্রাইজেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকারিয়া শাহিদ, দ্য সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. আতিকুর রহমান, কনকর্ড রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান এস এম কামাল উদ্দিন এবং ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের চেয়ারম্যান মনজুরুল ইসলাম।
মাঝারি শিল্প (উৎপাদন): এ বিভাগে সিআইপি হয়েছেন বিশ্বাস পোলট্রি অ্যান্ড ফিশ ফিডস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুর রহমান, ইনসেপ্টা ভ্যাকসিন লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান আক্তার জাহান হাসমিন মুক্তাদির, অকো-টেক্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুস সোবহান, জিন্নাত নিটওয়্যারস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার, রোমানিয়া ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবির বাবলু, প্রমি এগ্রো ফুডস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. এনামুল হাসান খান, মাসকো পিকাসো লিমিটেডের পরিচালক ফাহিমা আক্তার, টর্ক ফ্যাশনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মূহাম্মদ কামাল উদ্দিন, জিন্নাত এ্যাপারেলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াহেদ এবং মেসার্স সিটাডেল এ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মাহিদুল ইসলাম।
ক্ষুদ্র শিল্প (উৎপাদন): এ বিভাগে সিআইপি হয়েছেন রংপুর ফাউন্ড্রি লিমিটেডের পরিচালক চৌধুরী কামরুজ্জামান এবং এরফান এগ্রো ফুড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মাহবুব আলম।
এছাড়া, মাইক্রো শিল্প ক্যাটাগরিতে নির্বাচিত হয়েছেন মাসকো ডেইরি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী এমএ সবুর।