ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি বলেছেন, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা মানুষের অধিকার। দেশের প্রধান শাসক জনগণ দ্বারা নির্বাচিত হবেন। মানুষ সরকার তৈরি করবে। অবাধে ভোট দিয়ে নিজের পছন্দ মতো নেতৃত্ব বেছে নেবে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভোটের অধিকার আজকের পৃথিবীতে সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত।
মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ডি. লিট ডিগ্রি সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
উপমহাদেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা খুব মজবুত হতে পারেনি জানিয়ে প্রণব মুখার্জি বলেন, ভারতবর্ষ-বাংলাদেশ এরকম দুই-একটি দেশ ছাড়া কোনো দেশেই গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা খুব মজবুত হতে পারেনি। দীর্ঘদিন সামরিক শাসন চলেছে। কোনো আর্থ-সামজিক পরিপ্রেক্ষিতে সৈন্যরা ব্যারাক থেকে বেরিয়ে এসে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছিলেন। এটি কেন এবং এর কারণ কারণ কী?
ভারত ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পথে রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আজ এ মাটিতে দাঁড়িয়ে উপলব্ধি করছি গণতন্ত্রের মধ্য দিয়ে দেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যায়। বিশ্বব্যাংকের আই বি আর ডি প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে অন্যতম এগিয়ে যাওয়া দেশের স্বীকৃতি দিয়েছে। তাদের জাতীয় আয় ৭ শতাংশের বেশি বেড়েছে। যেখানে ২০০৮ সালে থেকে সারা পৃথিবীতে অর্থনৈতিক মন্দা। অন্য দেশের গতি শ্লথ হলেও বাংলাদেশ সামজিক সূচকে, অপুষ্টি দূরকরণে, উচ্চশিক্ষার সম্প্রসারণে এগিয়ে যেতে পেরেছে।
স্বাধীনতার আগে এবং পরে এ উপমহাদেশে বিপুল সংখ্যক রাজনৈতিক নেতৃত্বকে নিশ্চিহ্ন করার প্রচেষ্টা হয়েছে উল্লেখ করে প্রণব মুখার্জি বলেন, এ বিশাল ভূখণ্ডে বর্তমানে ব্রহ্মদেশের (মিয়ানমার) স্টেট কাউন্সিলর অংসান সু চির বাবা জেনারেল অংসান সহকর্মীদের সঙ্গে ব্রাশ ফায়ারে নিহত হন। ১৯৬০ সালে শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী সুলেমান বন্দর নায়েক নিহত হলেন। ১৯৪৮ সালে মহাত্মা গান্ধী নিহত হলেন। আর ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হলেন।, ৩ নভেম্বর জেলে ৪ নেতা নিহত হলেন। পাকিস্তানে জিয়াউল হক নিহত হলেন। জুলফিকার আলী ভুট্টোকে ফাঁসি দেয়া হলো।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার বিষয়টি তুলে ধরে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি বলেন, একটি নতুন দেশ সবে স্বাধীনতা পেয়েছে। অসংখ্য সমস্যা। দেশ গড়ার সমস্যা। দেশকে এগিয়ে নেয়ার সমস্যা। দারিদ্র্য ও বেকারত্ব দূর করার সমস্যা। সেই সমস্যার সঙ্গে সঙ্গে একটি জাতিকে প্রায় তার জন্মলগ্নের মুহূর্তে একটি জাতির রাজনৈতিক নেতৃত্বকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হলো। পৃথিবীর কোনো দেশে এ নজির খুব বেশি নেই।
এ সময় তিনি এ ভূখণ্ডে রাজনৈতিক নেতৃত্বের ওপর হিংসাত্মক আক্রমণের কারণ কী এবং তা খুঁজে বের করতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি অধ্যাপকদের অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, গবেষণার মাধ্যমে সত্যটি জানতে পারলে আসল রাস্তায় চলা সহজ হবে। যত বাধাই আসুক তা প্রতিরোধ করা যাবে।
এর আগে মঙ্গলবার দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে পৌঁছান। এ সময় তাকে স্বাগত জানান চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী ও উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীন আখতার। অভ্যর্থনা শেষে ভারতের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সেখান থেকে পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদুর রব হল মাঠে বিশেষ সমাবর্তনের মঞ্চে প্রবেশ করেন।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রণব মুখার্জিকে ডি. লিট ডিগ্রি সম্মাননা প্রদান করা হয়। দুপুরে ১৬ পদের দেশীয় খাবারে উপাচার্যের বাসভবনে মধ্যাহ্নভোজ সারেন তিনি। বিকেল সাড়ে ৩টায় তিনি মাস্টারদা সূর্যসেনের জন্মস্থান রাউজানে যান।