বল সীমানা অতিক্রমের আগেই বাংলাদেশের ডাগআউটে উল্লাস শুরু। ক্রিজে শান্ত ও তাসকিন শূন্যে লাফ ছুঁড়ে আনন্দে আত্মহারা। ইদানিং দলের জয়ের পর ডাগআউটে বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ডের হাসিমুখ বেশ চোখে পড়ছে। আজ তাকে যেন থামানোই যাচ্ছিল না। হাতের সামনে থাকা তোয়ালে ছুঁড়ে গোটা দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে যান।
কেন-ই বা হবেন না। তার প্রিয় শিষ্য চার মেরে যে দলকে জিতিয়েছেন।
ইংল্যান্ডের করা ১১৭ রানের জবাবে ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে আফিফ যখন আউট হন তখন দলীয় রান ১০৫। জয় থেকে ১৩ রান দূরে বাংলাদেশ। বলও আছে ১৩টি। ম্যাচে কিছুটা রোমাঞ্চ ছড়িয়েছিল। ফুল হাউজ মিরপুরে তখন থমথমে অবস্থা। অনেকটা নখ কামড়ানো মুহূর্ত। ইংল্যান্ড বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। মহাপরক্রমশালী। কিন্তু ঘরের মাঠে বাংলাদেশ বরাবরই অন্যরকম। হারার আগে হারে না। লড়াকু এ মনোভাবেই পরের ছয় বলে জয় নিশ্চিত হয়ে যায় সাকিব অ্যান্ড কোংয়ের। ১৯তম ওভারের প্রথম বলে ক্রিস জর্ডানকে চার হাঁকান শান্ত। চতুর্থ ও পঞ্চম বলে তাসকিনের ব্যাটে দুই চার। তাতেই নিশ্চিত হয়ে যায় ৪ উইকেটের জয়। এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ বাংলাদেশের।
এর আগে বাংলাদেশ ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া, নিউ জিল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছিল। এবার সেই তালিকায় যোগ হলো ইংল্যান্ডের নাম। তবে এই অর্জনকে এগিয়েই রাখতে হবে। কেননা এই ফরম্যাটে বাংলাদেশ দলে যে বইছে পরিবর্তনের হাওয়া। সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে তরুণ ক্রিকেটারদের নিয়ে দল গোছাচ্ছেন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। যেখানে সিনিয়র অনেক ক্রিকেটারই নেই। পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে তাদের থেকে সেরা ক্রিকেট বের করে আনতে ফ্রি লাইসেন্স দিয়েছেন সাকিব-হাথুরুসিংহে জুটি। ভয়-ডরহীন ক্রিকেট খেলার যে ব্র্যান্ড চালু করেছেন তারা সেই প্রতিচ্ছবি ফুঠে উঠেছে চট্টগ্রাম ও মিরপুরের ২২ গজে।
চট্টগ্রামে সিরিজ জয়ে বাংলাদেশের শুরুটা দারুণ ছিল। জয়ের ধারাবাহিকতা বাংলাদেশ ধরে রাখল ঢাকাতেও। তবে এবার জয় কষ্টার্জিত। আর জয়ের নায়ক দলে ফেরা মেহেদী হাসান মিরাজ। শামীম পাটোয়ারীর পরিবর্তে সাকিবের দলে সুযোগ হয় মিরাজের। অফস্পিনার বল হাতে কারিশমা দেখিয়ে ৪ ওভারে ১২ রানের খরচে তুলে নেন ৪ উইকেট। সঙ্গে বাকিদের জ্বলে উঠায় প্রথম ইনিংসেই ম্যাচটা নাগালে চলে আসে। তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ, মোস্তাফিজুর রহমান ও সাকিব আল হাসান প্রত্যেকে পেয়েছেন ১টি করে উইকেট।
চট্টগ্রামের মতো উইকেট মিরপুরে ছিল না। মিরপুরের সহজাত উইকেট যেমন, ধীর গতির, লো বাউন্স এবং টার্নিং। তাতেই কুপোকাত ইংলিশ লায়ন্সরা। সাকিব পাঁচ স্পিনার ব্যবহার করে ১৪ ওভার করিয়েছেন। বাকি ৬ ওভার করেন তাসকিন, মোস্তাফিজ ও হাসান। স্পিনের সঙ্গে পেসারদের এই বৈচিত্র্যপূর্ণ কম্বিনেশনের কারণে ইংলিশদের ব্যাটিং থিতু হতে পারেননি। পারেনি কেউ বড় ইনিংস খেলতে। ওপেনার ফিল সল্ট ২৫, বেন ডাকেটের ২৮ বাদে রান পেতে ভুগেছেন বাকিরা। বাটলার মাত্র ৪ রানে ফেরেন। মালানের ব্যাট থেকে আসে ৫ রান।
লক্ষ্য নাগালে থাকলেও বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের এদিন পরীক্ষায় ফেলে ইংলিশ বোলাররা। লিটন ও রনি ভালো করতে পারেননি। দুজনের ব্যাট থেকে আসে ৯ রানের দুটি ইনিংস। তিনে নেমে শান্ত ছিলেন অবিচল। রান ফোয়ারায় থাকা এ ব্যাটসম্যানের দৃঢ়তা ছিল চোখে পড়ার মতো। কোনো বোলার তার মনোসংযোগে চিড় ধরাতে পারেননি।
মিরাজ ও হৃদয় ভালো শুরুর পর দলের স্কোর বাড়ালেও তারা ম্যাচ শেষ করে আসতে পারেননি। হৃদয় উইকেট বিলিয়ে দেওয়ার আগে ১৮ বলে ১৭ এবং মিরাজ আর্চারের বলে আউট হওয়ার আগে ১৬ বলে ২০ রান করেন। সাকিব খুলতে পারেননি রানের খাতা। ৩ বলে মঈন আলীর বলে আউট হন। আফিফ পরীক্ষায় পারেননি ভালো করতে। আর্চারের উইকেটের ওপরের বল স্কয়ার কাট করতে গিয়ে বোল্ড হন। আর্চারের ১৪৮ কিমির বলে স্টাম্পের বেলস প্রায় সীমানার কাছাকাছি গিয়ে পৌঁছে।
সেখানেই ইংলিশদের লড়াই শেষ। শান্তর ৪৬ ও তাসকিনের ৮ রানে বাংলাদেশ টানা দ্বিতীয় জয় তুলে নেয়। যে জয়ে আনন্দ উৎসবে মেতেছে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের আনন্দ একটু বেশি হবে তাই কি নয়।