ভিনি, ভিডি, ভিসি—এলাম, দেখলাম, জয় করলাম। সাকিব আল হাসানের ক্ষেত্রে যেন কথাটা হুবহু মিলে যাচ্ছে। গত ১৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামে ম্যাচ খেলে ঢাকায় ছুটেছিলেন পরিবারের কাছে। পরিবারকে সময়, যুক্তরাষ্ট্রে বিদায় ও ব্যক্তিগত কাজ সেরে আজ সকালেই আবার ফিরেছেন বন্দরনগরীতে।
রাতে রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে ম্যাচ। মাঠে নেমেই আগুণে ফর্মে ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক। সবশেষ ম্যাচে ৮১ রান করেছিলেন ৪৫ বলে। আজ ৪৩ বলে ক্যারিয়ার সেরা ৮৯। আগ্রাসন বাড়িয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে গেছেন নতুন উচ্চতায়। ৯ চার ও ৬ ছক্কায় সাজানো ইনিংসটি বলে দেয় বড় কিছুর আশায় এখনো ক্ষুধার্থ বাংলাদেশের সুপারস্টার।
সাকিবের সঙ্গে আজ একই মঞ্চে ঝড় তোলেন ইফতেখার আহমেদ। ৪৫ বলে তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। ৬ চার ও ৯ ছক্কায় পেয়ে যান তিন অঙ্কের ম্যাজিকাল ফিগার। দুজনের ব্যাটিং তাণ্ডবে রংপুরের বিপক্ষে বরিশালের রান ২৩৮। তাড়া করতে গিয়ে রংপুর ৯ উইকেটে ১৭১ রানের বেশি করতে পারেনি। ৬৭ রানের হারে তারা পেল তৃতীয় পরাজয়ের স্বাদ। অন্যদিকে বরিশাল পঞ্চম ম্যাচে তুলে নিল চতুর্থ জয়।
রংপুরের পরাজয়ের এপিটাফ প্রথম ইনিংসে লিখে দিয়েছিলেন সাকিব ও ইফতেখার। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে অবশ্য রংপুরের শুরুটা খারাপ ছিল না। ৪৬ রানে তারা তুলে নেয় বরিশালের ৪ উইকেট। সেখানে সাকিব ও ইফতেখার দেয়াল হয়ে দাঁড়ান। থিতু হতে দুজনই শুরুতে সময় নিয়েছিলেন। ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসেন খোলস থেকে। ব্যাট-বলের ছন্দ পাওয়ার পর তাদের আর কেউ আটকাতে পারেননি।
পঞ্চম উইকেটে তারা ১৯২ রানের জুটি গড়েন। যা প্রতিযোগিমূলক টি-টোয়েন্টিতে বিশ্বরেকর্ড। এর আগে অ্যাডাম হোস ও ড্যান মউসলি মিলে ১৭১ রান করেছিলেন। তাদের ছাপিয়ে সাকিব-ইফতেখার এখন শীর্ষে। দুজনের ব্যাটে বিপিএলের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় রানও আসে। সর্বোচ্চ দলীয় রান ২৩৯। ১২ ওভারে ফরচুন বরিশালের রান ছিল ৯৪। সেখান থেকে শেষ ৮ ওভারে ১৪৪ রান তুলে নেয় তারা।
ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হওয়া ইফতেখার সেঞ্চুরি পেয়েছেন মাত্র ৪৫ বলে। ৬ চার ও ৯ ছক্কায় সাজান ইনিংসটি। আজম খান ও উসমান খানের পর তৃতীয় পাকিস্তানী ব্যাটসম্যান হিসেবে এবারের বিপিএলে সেঞ্চুরি পেলেন ইফতেখার। ২৯ বলে ফিফটিতে পৌঁছান এ ব্যাটসম্যান। পরের পঞ্চাশ পেতে খেলেন মাত্র ১৬ বল।
সাকিবের রয়েশয়ে শুরু করেছিলেন। থিতু হওয়ার পর তাকে কেউ আটকাতে পারেননি। ৩৩ বলে ফিফটির পর পরের ৩৯ রান করেন কেবল ১০ বলে। ৮৯ রানের ইনিংসটি তার বিপিএলে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১২ বিপিএলে ৮৮ রান করেছিলেন খুলনার হয়ে সিলেটের বিপক্ষে।
দুর্দান্ত ফর্মে থাকা সাকিব তুলে নিয়েছেন তৃতীয় ফিফটি। আগের দিন ৮১ রানে অপরাজিত ছিলেন। আজ তার ব্যাট থেকে এলো ৮৯ রান। এর আগে সিলেটের বিপক্ষে করেছিলেন ৬৭। মাঝে কেবল একটি ইনিংসেই আউট হয়েছিলেন ৮ রানে।
বোলারদের ওপর দুজন এমনভাবে চড়াও হয়েছিলেন যে, ২২ গজে তারা কোথায় বল ফেলবেন খুঁজে পাচ্ছিলেন না। যেখানেই করুক সাকিব, ইফতেখারের ব্যাট পৌঁছে যায়। হয় বল গ্রাউন্ড শটে চার হয়। নয়তো হাওয়ায় ভেসে ছক্কা। চার-ছক্কার বৃষ্টিতেই এলোমেলো রেকর্ড বুক।
হাসান মাহমুদ ও নওয়াজ বাদে বোলাররা প্রতেক্যেই ছিলেন বেহিসেবী। পরপর দুই বলে মিরাজ ও মাহমুদউল্লাহকে আউট করা হাসান ৪ ওভারে ৩১ রান দেন। নওয়াজ ৪ ওভারে ব্যয় করেন ৩৫ রান। হারিস রউফ ২ উইকেট নিলেও রান দিয়েছেন ৫২। ৪ ওভার করে সবচেয়ে বাজে ছিলেন রবিউল হক। ৪ ওভারে দিয়েছেন ৫৭ রান। এছাড়া স্পিনার মেহেদী হাসান ৩ ওভারে ৪২ ও শামীম পাটোয়ারী ১ ওভারেই ২৫ রান দেন।
শামীমের করা একমাত্র ওভারের ষষ্ঠ বলে ইফতেখার ক্যাচ তুলেছিলেন শর্ট থার্ড ম্যান অঞ্চলে। তখন ৪৬ রানে ছিলেন এ সেঞ্চুরিয়ান। রনি তালুকদার লুফে নিতে পারেননি তার ক্যাচ। ক্যাচ মিসে ম্যাচটাই ছেড়ে দেন রনি।
রংপুরের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে লড়েছেন নাঈম শেখ, মোহাম্মদ নওয়াজ ও শামীম হোসেন পাটোয়ারী। বাকিরা ছিলেন আসা-যাওয়ার মিছিলে। শুরু থেকে তারা ধারাবাহিক উইকেট হারাতে থাকে। হয়নি কোনো বড় জুটি। এজন্য বরিশালের জয় আসে অতি সহজেই। নাঈম ১৮ বলে করেন ৩১ রান। নওয়াজ ২টি করে চার ও ছক্কায় ২৩ বলে ৩৩ রান করেন। শামীমের ২৪ বলে ৩ চার ও ৪ ছক্কায় করা ৪৪ রানের ইনিংসে পরাজয়ের ব্যবধান কমায় রংপুর।
বল হাতে মিরাজ ২৬ রানে ৩ উইকেট নেন। ২টি করে উইকেট পেয়েছেন ওয়াসিম জুনিয়র ও কামরুল ইসলাম।