বরিশালে নবান্ন উৎসব ও মারবেল মেলা

লেখক:
প্রকাশ: ২ years ago

শামীম আহমেদ॥ পৌষ সংক্রান্তিতে গোসাই নবান্ন উৎসবে রবিবার দিনভর ২৪৩ তম ঐতিহ্যবাহী মারবেল মেলার আসর বসেছে জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের রামানন্দেরআঁক গ্রামে। করোনার কারনে সরকারী আদেশে গণসমাবেশ নিষিদ্ধর দুই বছর পর এবছর আড়ম্বরপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে মারবেল মেলা।

রামানন্দেরআঁক গ্রামের সোনাই চাঁদ আউলিয়া মন্দির আঙ্গিনায় অনুষ্ঠিত ২৪৩ বছরের ঐতিহ্যবাহী বার্ষিক সংকীর্ত্তন ও গোসাই নবান্ন উৎসব উপলক্ষে ঐতিহ্যবাহী মারবেল মেলায় আগত খেলোয়ার ও দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভীরের কারণে পূর্বেরস্থানে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় এ বছর রামানন্দেরআঁক মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে মারবেল খেলার আয়োজন করা হয়েছে।

মেলায় আগৈলঝাড়া উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন উপজেলার বিভিন্ন বয়সের হাজার হাজার শিশু ও নারী-পুরুষ মেলার প্রধান আকর্ষণ মারবেল খেলায় অংশগ্রহণ করেন। মেলার আয়োজক কমিটির উপদেষ্টা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মলিনা রানী রায় বলেন, স্থানীয় আউলিয়াপাশ গ্রামে ছয় বছর বয়সে সোনাই চাঁদ নামের এক মেয়ের বিয়ের বছর না ঘুরতেই তার স্বামী মারা যায়। স্বামীর মৃত্যুর পর শোকাহত সদ্য বিধবা কিশোরী স্ত্রী স্বামীর বাড়িতে একটি নীম গাছের নীচে দেবাদীব মহাদেবের আরাধনা ও পূজার্চনা শুরু করেন।

তিনি আরও বলেন, পূজার্চনা থেকে সাধনা। সময়ের পরিক্রমায় ওই কিশোরী সাধনার উচ্চ মর্গে সিদ্ধ হলে সোনাই চাঁদের অলৌকিক কর্মকান্ড এলাকা ছাড়িয়ে বাইরেও প্রচার পায়। সোনাইর জীবদ্দশায় আনুমানিক ১৭৮০ খ্রিঃ তার নামে ‘সোনাই চাঁদ আউলিয়া মন্দির’ স্থাপন করা হয়। সোনাইর মৃত্যুর পরেও তার স্থাপিত মন্দির আঙ্গিনায় চলে আসছে নাম সংকীর্ত্তন ও নবান্ন উৎসব। স্থানীয়দের উদ্যোগে ২০১২ সালে ওই মন্দিরটি পুনঃমির্মাণ করা হয়।

পঞ্জিকা মতে, প্রতি বছর পৌষ সংক্রান্তির দিন হরিনাম সংকীর্ত্তন ও গোসাই নবান্ন মহাউৎসবকে সামনে রেখে ওই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। আর এই উৎসবকে ঘিরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে গ্রামীণ ঐতিহ্যের ধারক মারবেল খেলা। যা এখন মারবেল মেলা নামেই পরিচিতি পেয়েছে সর্বত্র।

সূত্রে আরও জানা গেছে, প্রতিবছরের মতো এবছরও মেলা উপলক্ষে বৈষ্ণব সেবা, হরিনাম সংকীর্ত্তন শেষে সোয়া মণ (৫০ কেজি) চালের গুড়ার সাথে সোয়া মণ গুড়, ৫০ জোড়া (একশ’ পিচ) নারকেল ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য খাদ্য উপকরণ মিলিয়ে তৈরী করা হয় গোসাই নবান্ন। ওই নবান্ন মেলায় আগত দর্শনার্থীদের প্রসাদ হিসেবে পরিবেশন করা হয়।