যৌতুকের দাবিতে গৃহবধুকে নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় স্বামী সোমবার মো:মিজানুর রহমানকে জেল হাজতে প্রেরন করেছে আদালত । উচ্চ আদালতের নির্দেশে বরিশাল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে আসামী মিজানুর রহমান হাজির হয়ে জামিন প্রার্থনা করলে আদালতের বিচারক ইয়ারব হোসেন তাকে জেল হাজতে প্রেরনের নির্দেশ প্রদান করেন । পাশাপাশি উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ভিকটিম শিরিন আক্তারকে নগদ এক লক্ষ টাকার একাউন্ট পে চেক প্রদান করলে বিচারক চিকিৎসা খরচ বাবদ ভিকটিমের হাতে অগ্রনী ব্যাংকের চেকটি তুলে দেন।
কিন্তু ঐ দিন শিরিন আক্তর তার হিসাবে চেকটি জমা দিলে আসামী মিজানের একাউন্টে ১০ হাজার টাকা থাকায় চেকটি ফেরৎ দেয় অগ্রনী ব্যাংক কাশিপুর বাজার শাখা । বিষয়টি আদালতকে জানানো হলে আসামী পক্ষের আইনজীবীগন দুই দিন পরে এক লক্ষ টাকা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহন করেন।এ বিষয়ে পল্লী বিদ্যুতের ব্রাক্ষবাড়িয়ার জিএম মো:আক্তার হোসেন বলেন শিবপুর সাব- স্টেশনের লাইনম্যান মো:মিজানুর রহমান ১ দিনের ছুটি নিয়ে তার দেশের বাড়ি বরিশালে গেছেন কিন্ত নারী নির্যাতন মামলায় জেল হাজতে যাওয়ার বিষয়ে আমি অবগত নই । মিজানুরের স্থায়ী ঠিকানায় কারন দর্শানোর চিঠি পাঠানো হয়েছে ।
চাকুরি বিধি অনুযায়ী তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হবে ।আদালত সূত্রে জানাগেছে, বাকেরগঞ্জ উপজেলার দেউলী গ্রামের মো. মীর আয়নাল হক ওরফে আয়নাল হোসেনের মেয়ে শিরিন আক্তারের সাথে মিজানুর রহমানের ২০১৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি বিবাহ হয়। মেয়ের স্বামী মিজানুর রহমান ব্রাক্ষবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার শিবপুর সাব- স্টেশনে পল্লী বিদ্যুতের লাইনম্যান গ্রেড-২ হিসেবে চাকুরিরত থাকলেও বেশিরভাগ সময় বাকেরগঞ্জে থাকে। কিছুদিন পূর্বে শিরিন আক্তারের গর্ভে ৭ মাসের সন্তান আসলেও তা স্বামী মিজানুর রহমানের নির্যাতন আর অবহেলায় নষ্ট হয়ে যায়।
বাদী এজাহারে আরও উল্লেখ করেছেন, নির্যাতিতার স্বামী মো. মিজানুর রহমান মামলার দুই নম্বর আসামি শশুড় মো. মুনসুর আলী হাওলাদার (৫৫), তিন নম্বর আসামি শাশুড়ী মোসাঃ সেতারা বেগম (৪৭) চার নম্বর আসামি ননদ ব্রাক বাকেরগঞ্জ শাখার কর্মী শামসুন্নাহার বিথী ওরফে বিথী বেগম (২২) এবং পাঁচ নম্বর আসামি ননদ বিথী বেগমের স্বামী এনজিও কর্মী নাসির হাওলাদার (৩০) এই ৫ জন আসামি পরষ্পর যোগসাজেশে গত ৬ মাস ধরে ৩ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে তাঁর মেয়ে শিরিনের ওপর শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন করে আসছে। সবশেষ গত ২৫ আগস্ট সবাই মিলে শিরিনকে বেধম মারধর করে। যা পরের দিন সকালে বাদী জানতে পেরে মুমুর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।
নির্যাতিতার চিকিৎসার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর বাদী বাকেরগঞ্জ থানায় ২০০০ সালের সংশোধিত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১ (খ) ৩০ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং জি আর ১৫০/২০২২ বাকেরগঞ্জ । প্রায় ১ মাস ভিকটিম শিরিন আক্তার বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পরে সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র গ্রহন করেন।
বাকেরগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করার পর থেকে আসামীরা পালিয়ে বেড়ালে গত ১৬ সেপ্টেম্বর বরিশাল নগরীর চাঁদমারী এলাকায় পালিয়ে থাকা অবস্থায় ৪ নং আসামী ব্রাকের এইচ এন পি পি প্রোগ্রামের ফিল্ড অফিসার শামসুন্নাহার বিথী ওরফে বিথী বেগমকে গ্রেফতার করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বাকেরগঞ্জ থানার এসআই মাহাবুব। এরপর ১১ সেপ্টেম্বর ১ নং আসামী মিজানুর রহমান উচ্চ আদালতে ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন চাইলে বিচারপতি মো: রেজাউল হাসান ও মো:আতাবুল্লাহ’র দ্বৈত বেঞ্চ ভিকটিমকে নগদ এক লক্ষ টাকা প্রদান করে বরিশাল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন ।
এবং মামলার আসামী মো. মুনসুর আলী হাওলাদার (৫৫), মোসাঃ সেতারা বেগম (৪৭) নাসির হাওলাদার (৩০) কে গত ২১ সেপ্টেম্বর বিচারপতি মো: জাহাঙ্গীর হোসেন ও মো:বজলুর রহমানের দ্বৈত বেঞ্চের চার সপ্তাহের আগাম জামিন চাইলে আইনানুয়ায়ী নিম্ম আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইতে বলে । নিম্ম আদালত মামলাটি ২০০০ সালের সংশোধিত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১ (খ) ৩০ ধারায় জামিন অযোগ্য ধারা হওয়ায় আসামী মো. মুনসুর আলী হাওলাদার (৫৫), নাসির হাওলাদার (৩০) কে জেল হাজতে প্রেরনের নির্দেশ প্রদান করেন পাশাপাশি নারী হওয়ায় আসামী মোসাঃ সেতারা বেগম (৪৭) কে জামিন প্রদান করেন। একই কারনে ৪ নং আসামি ব্রাক বাকেরগঞ্জ শাখার কর্মী শামসুন্নাহার বিথী ওরফে বিথী বেগম (২২) কে গ্রেফতারের ৩ দিন পরে আদালত জামিন প্রদান করেন ।এরপর আসামী মিজানুর রহমান উচ্চ আদালতের নির্দেশে এক লক্ষ টাকা প্রদান না করে ভিকটিমকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে গত ১০ অক্টোবর আদালতে জামিন প্রার্থনা করেন । মামলার কাগজপত্র যাছাই করে বরিশাল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক ইয়ারব হোসেন ভিকটিমের উপস্থিতিতে আসামী পক্ষকে ২৪ অক্টোবর নতুন করে জামিনের জন্য আবেদন করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন।
আসামী মিজানুর রহমানের পক্ষে এ্যাড.তালুকদার মো: ইউনুচ ,বার কাউন্সিলের সদস্য এ্যাড. আনিচ উদ্দিন সহিদ ও এড.কাজি মুনিরুল হাসান উচ্চ আদালতের নির্দেশনা দেখিয়ে জামিনের প্রার্থনা করেন । এসময় বাদী পক্ষের আইনজীবী সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর এ্যাড.হুমায়ুন কবির খান ও অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর এ্যাড. মজিবর রহমান জামিনের বিরোধিতা করে বলেন আসামী যেহেতু উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ভিকটিমকে বিনা হিসাবে নগদ এক লক্ষ টাকা না দিয়ে ৬ সপ্তাহ শেষে আদালতে জামিন প্রার্থনা করেছেন তাই উচ্চ আদালতের নির্দেশনার মেয়াদ শেষ ।
অতএব ২০০০ সালের সংশোধিত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১ (খ) ৩০ ধারায় দায়ের হওয়া মামলাটি জামিন অযোগ্য মামলার ২ ও ৫ নং আসামী বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছে আর মো: মিজানুর রহমান এক নম্বর আসামী হওয়ায় আইন অনুযায়ী আসামী জামিন পাওয়ার যোগ্যতা রাখে না । মামলার নথি এবং ভিকটিম শিরিন বেগম প্রায় এক মাসের মত বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফিমেল সার্জারী ওয়ার্ডে চিকিসাধীন থাকার ছাড়পত্র যাছাই এবং উভয় পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তি তর্ক শেষে বরিশাল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক ইয়ারব হোসেন আসামী মো: মিজানুর রহমানকে জেল হাজতে প্রেরনের নির্দেশ প্রদান করেন ।