কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার দক্ষিণ গ্রামে ১০ একর জমিতে ফুটে আছে পদ্মফুল। শতাব্দী প্রাচীন জলাশয়ে প্রাকৃতিকভাবে যুগ যুগ ধরে পদ্মফুল ফুটে আসলেও সম্প্রতি গণমাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে বিলে থাকা লাল, সাদার সঙ্গে বিরল প্রজাতির হলুদ রঙের পদ্মফুলের খবর।
শুক্রবার (৭ অক্টোবর) সরেজমিন দেখা যায়, সারি সারি নৌকা বেঁধে শিশুরা পুরো বিল ঘুরতে জনপ্রতি নিচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা। বিলটি ঘিরে কর্মসংস্থান হয়েছে দক্ষিণ গ্রামের ৫০টি পরিবারের।
প্রতিদিন দর্শনার্থীরা নৌকা ভাড়া করে পরিবার-পরিজন নিয়ে পদ্মবিল ঘুরে থাকে। তবে এবার দুর্গাপূজার ও নানা কারণে বিল থেকে পদ্মফুল তুলে নেওয়ায় দর্শনার্থীর ভিড় নেই বললে চলে। বিল ঘিরে যাদের কর্মসংস্থান হয়েছে, তারা এখন দর্শনার্থী সংকটে অবসর সময় কাটাচ্ছে। অথচ বিলের পদ্মফুল আকারে বেশ বড়। একসঙ্গে তিন রঙয়ের ফুল বাংলাদেশে এটাই প্রথম। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তা এখন হুমকির মুখে পড়েছে।
স্থানীয় আমিন মিয়া জানান, প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা পদ্মবিলে বছরের ৬ থেকে ৮ মাস পানি থাকে। কৃষকরা শুধু এক ফসল পায় বিলের জমি থেকে। তারা এ বিলকে রক্ষণাবেক্ষণের দাবি জানান।
বিলের নৌকা চালক রাশেদ সরকার বলেন, গত তিন-চার বছর ধরে প্রতিদিন বিলে প্রচুর মানুষ আসছে। তবে এ বছর শুক্রবার ও শনিবার ছাড়া মানুষ তেমন আসে না। আগে আয় হতো গড়ে ২ হাজার টাকা। এখন ২০০ টাকাও হয় না।
বিলের আরেক মাঝি তানভীর হোসেন অভিযোগ করে বলেন, কিছু দর্শনার্থী পদ্মফুল ছিঁড়ে নিয়ে যায়। কেউ কেউ বাড়িতে লাগানোর জন্য পদ্মগাছ তুলে নিয়ে যায়। মাঝিরা অনুরোধ করেও ফুল ছেঁড়া থেকে বিরত রাখতে পারে না। এ বছর তো বিলে তেমন ফুলই নেই।
কুমিল্লা নগরীর শাসনগাছা থেকে পদ্মবিলে পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছেন শাহ আলম মিয়া। তিনি বলেন, শুক্রবার স্কুল বন্ধ। তাই ছেলে, মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে এসেছেন। এই পদ্মবিল দেখে তারা আনন্দিত। তবে বিলটি সংরক্ষণে উদ্যোগ নেই। রাস্তা তেমন ভালো না।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মেহেরুন্নেচ্ছা বলেন, পদ্মফুল ভোরে ফোটে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিপূর্ণ পরিস্ফুটিত হয়। বর্ষায় ফুল ফোটা শুরু হয়। শরৎকাল পর্যন্ত ফোটে। গত বছর দক্ষিণগ্রামের তিন রঙের পদ্মফুল নিয়ে ইউনেসকোর অর্থায়নে গবেষণা শুরু হয়েছে। রাজধানীর বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বেঙ্গল প্ল্যান্টস রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এই গবেষণা পরিচালনা করছে।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, এই পদ্মবিল ইতোমধ্যে দেশে-বিদেশে সাড়া ফেলেছে। কীভাবে বিলটি সংরক্ষণ করা যায় তা নিয়ে ভাবছে জেলা প্রশাসন।