প্রথম ৩৯ ঘণ্টায় ই-নামজারিতে ৭৭ লাখ টাকা আদায় করেছে সরকার। ক্যাশলেস ই-নামজারি ব্যবস্থা প্রবর্তনের পর রোববার বেলা ৩টা নাগাদ ৬ হাজার ২ শ’রও বেশি অটোমেটেড কিউআরকোড সমৃদ্ধ ডিসিআর সংগ্রহ করেছেন ভূমিসেবা গ্রাহকরা।
নামজারি মামলা/আবেদন মঞ্জুর হলে ডিসিআর ফি জমা দিয়ে তারা ডিসিআর সংগ্রহ করেন। এই ফি বাবদ প্রায় ৬৯ লাখ টাকা অনলাইনে মোবাইল ওয়ালেট কিংবা ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছেন ভূমিসেবা গ্রাহকরা।
একই সময়ে সাড়ে ১১ হাজারের অধিক নতুন ই-নামজারি আবেদন জমা হয়েছে। আবেদন ফি বাবদ প্রায় ৮ লাখ টাকা একইভাবে সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে। বিভিন্ন ই-নামজারি ফি বাবদ এই সময় ৭৭ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ৩০ সেপ্টেম্বরের পর ম্যানুয়াল/নগদ তথা ক্যাশে কোনও ধরনের নামজারি ফি গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
শনিবার সরকারি ছুটির দিন (১ অক্টোবর) এই সিদ্ধান্ত স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হয়, তবে ২ অক্টোবর ছিল ক্যাশলেস ই-নামজারি বাস্তবায়নের প্রথম কার্যদিবস।
ই-নামজারি ব্যবস্থা ক্যাশলেস হবার কারণে নামজারি সংশ্লিষ্ট কাজে ভূমিসেবা গ্রাহকের সময়, খরচ এবং ভ্রমণ উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। ফলে আশা করা যাচ্ছে এই সংক্রান্ত ভোগান্তিও আরও অনেকাংশে কমে আসবে।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হচ্ছে, নামজারি সেবা গ্রহণের বেশ কয়েকটি ধাপ এখন সরকারি কার্যদিবস এবং কর্মঘণ্টার ওপর নির্ভরশীল নয়। নাগরিক যেকোনও সময়, এমনকি সরকারি ছুটির দিন নিজ সুবিধাজনক সময় আবেদন এবং ফি জমা দিতে পারছেন। ‘হিউম্যান-টু-হিউম্যান কন্টাক্ট’ কমে যাওয়ার কারণে অসাধু ব্যক্তিদের অপতৎপরতার সুযোগ কমে এসেছে। এ ছাড়া অনলাইনে শুনানির আবেদন গৃহীত হয়ে যাদের শুনানিও অনলাইনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে তাদের নামজারি মামলার শুনানির সময়ও ভূমি অফিসে যেতে হয় না।
নামজারি আরও সহজ করতে দলিলমূলে নামজারি ব্যবস্থা স্থাপনেরও উদ্যোগ নিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। ব্যক্তি আবেদনে বা এলটি নোটিশ প্রাপ্তির পর সাধারণ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২৮ কার্যদিবস, প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য মহানগরীর জন্য ৯ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ১২ এবং নির্দিষ্ট কয়েকটি জেলার বিনিয়োগবান্ধব শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের জন্য ৭ কার্যদিবসের মধ্যে নামজারি সেবা পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া সাধারণ ক্ষেত্রে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধারা জমির নামজারি সেবা পাচ্ছেন।
বছরে নামজারি আবেদনের সংখ্যা ক্ষেত্রভেদে গড়ে ২২ থেকে ২৫ লাখের মধ্যে হয়ে থাকে। কোর্ট ফি ২০ এবং নোটিশ জারি ফি ৫০ টাকা একত্রে ই-নামজারি আবেদনের শুরুতে দিতে হয় বলে, এই দুটি ফি একত্রে ই-নামজারি আবেদন ফি নামে পরিচিত। এ ছাড়া নামজারি আবেদন মঞ্জুর হলে রেকর্ড সংশোধন ফি ১ হাজার টাকা এবং ও খতিয়ান সরবরাহ ফি ১০০ টাকা দিয়ে ডিসিআর সংগ্রহ করতে হয় বলে এই পরবর্তী দুটি ফি ডিসিআর ফি নামেও পরিচিত। এই চার ধরনের ফি প্রদানে নামজারির জন্য মোট প্রকৃত খরচ ১১৭০ টাকা। এসকল ফি এখন থেকে অনলাইনে মোবাইল ওয়ালেট কিংবা ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেই পরিশোধ করতে হবে। কোনোভাবেই ম্যানুয়ালি তথা নগদ টাকায় পরিশোধ করা যাবে না।
অনলাইনে জাতীয় ভূমি তথ্য ও সেবা কাঠামোতে (www.land.gov.bd) গিয়ে ই-নামজারি ট্যাবে ক্লিক করে ই-নামজারি সিস্টেম থেকে আবেদন সংশ্লিষ্ট তথ্য জানা যাবে। এ ছাড়া ভূমি বিষয়ক সকল তথ্য জানতে, সেবা পেতে কিংবা অভিযোগ জানাতে ‘নাগরিক ভূমিসেবা ২৪/৭’-এর হেল্পলাইন ১৬১২২ (বিদেশ থেকে +৮৮০ ৯৬১২৩ ১৬১২২) নম্বরে কল করতে হবে। ভূমিসেবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (www.facebook.com/land.gov.bd) কমেন্ট কিংবা মেসেজ (বার্তা) পাঠাতে হবে।