বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১ বছরেও কমিটি হয়নি ছাত্রলীগের

লেখক:
প্রকাশ: ২ years ago

বামপন্থী-ডানপন্থী-ইসলামিক আদর্শের সহ সব ছাত্র সংগঠনের সক্রিয় কর্মকাণ্ড এবং কমিটি রয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে।

কিন্তু শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর ১১ বছরেও কমিটি হয়নি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আর্শিবাদপুষ্ট সংগঠন ছাত্রলীগের। কমিটি না থাকলেও ছাত্রলীগের পরিচয়ে ক্যাম্পাস দাপিয়ে বেড়ানো সহ প্রায়ই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ-সংঘাতে লিপ্ত হচ্ছেন তারা।

পরিচয়বিহীন ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের সুযোগে ক্যাম্পাসে অবস্থান পাকাপোক্ত করছে ছাত্রদল, ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন, ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র ইউনিয়ন, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল সহ বিভিন্ন বাম ও ডানপন্থী ছাত্র সংগঠন। প্রকাশ্য কার্যক্রম না থাকলেও ভেতরে সক্রিয় ছাত্রশিবিরও। ক্যাম্পাসে ছাত্র সংগঠনগুলোর সাংগঠনিক কার্যক্রমের বিষয়টি প্রক্টর অফিসকে জানাতে হয় বলে জানিয়েছেন প্রক্টর।

বরিশালবাসীর দীর্ঘ আন্দোলনের মুখে ২০১১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি কীর্তনখোলা তীরবর্তী সদর উপজেলার কর্নকাঠী এলাকায় ৫০ একর জমির উপর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

২০১২ সালের ২৪ জানুয়ারি নগরীর জিলা স্কুলের বর্ধিত ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৪ সালে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার পর থেকে ছাত্রসংগঠনগুলো তাদের সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু করে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. খোরশেদ আলম জানান, কোন ছাত্র সংগঠন ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক কার্যক্রমের বিষয়ে প্রক্টর কার্যালয়ে লিখিতভাবে অবহিত করেনি।

তবে প্রক্টর অফিস মৌখিকভাবে খোঁজখবর নিয়েছে। ক্যাম্পাসে বর্তমানে ছাত্রদল, ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন, ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র ইউনিয়ন, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল সহ বিভিন্ন বাম ও ডানপন্থী ছাত্র সংগঠনের কাঠামো এবং অস্তিত্ব পাওয়া যায়।

ছাত্রলীগের কাঠামো না থাকলেও তাদের তৎপরতা আছে। স্বার্থের দ্বন্দ্বে তারা বিভক্ত। শিবিরের কার্যক্রম না থাকলে তাদের মতাদর্শী কেউ ক্যাম্পাসে থাকতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরুর পর আজ পর্যন্ত ছাত্রলীগ নামধারী ব্যতিত অন্য কোন ছাত্রসংগঠনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের নজির নেই। ছাত্রলীগের কমিটি না থাকলে তাদের দ্বন্দ্ব সংঘাত প্রায়শঃই।

সবশেষ গত ৫ জুলাই গভীর রাতে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে ছাত্রলীগের বিবাদমান মহিউদ্দিন আহম্মেদ সিফাত এবং অমিত হাসান রক্তিম গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয় সিফাত সহ তার তিন অনুসারি রুম্মান, শান্ত, তমাল এবং অমিত হাসানের অনুসারি সাব্বির, সাইদুর রহমান ও সামির গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়।

ওই ঘটনার জের ধরে ক্যাম্পাসে মুখোমুখি অবস্থানে দুই গ্রুপের নেতাকর্মীরা। এক পক্ষের চার শিক্ষার্থী ব্যবস্থাপনা বিভাগের ইরাজ রব্বানী, রসায়ন বিভাগের সাইমুন ইসলাম, বাংলা বিভাগের সাব্বির হোসেন ও লোক প্রশাসন বিভাগের রাব্বি খান নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেছে কর্তৃপক্ষের কাছে।

নিরাপত্তা চাওয়া চার শিক্ষার্থী তাদের আবেদনে বলেছেন, গত ২০ জুলাই থেকে বেশকিছুদিন ধরে মহিউদ্দিন আহম্মেদ সিফাত তার অনুসারিদের নিয়ে তাদের (অভিযোগকারীদের) ক্যাম্পাসে খোঁজা-খুঁজি করেছে। এতে তাদের পড়াশুনার ধারাবাহিকতা নষ্ট হচ্ছে, এমনকি ক্যাম্পাসে অবস্থান করাও তাদের জন্য ভীতিকর। তারা নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছেন।

এ বিষয়ে অমিত হাসান রক্তিম বলেন, ছুটি শেষে ক্যাম্পাস খোলার দিন প্রতিপক্ষ গ্রুপ বহিরাগতদের নিয়ে বড় হামলার প্রস্তুতি নিয়েছিল। তারা হামলার সুযোগ খুঁজছে। এ কারণে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছেন তারা চার শিক্ষার্থী।

এ বিষয়ে মহিউদ্দিন আহম্মেদ সিফাত বলেছেন, প্রতিপক্ষ গ্রুপ তাকে বিতর্কিত করাতে মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছে। তারা ক্যাম্পাসে ক্লাশ-পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। ক্যাম্পাসের শান্ত পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে পাঁয়রাতা করছে তারা।

তবে চার শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার আবেদনগুলো বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট বিএমপি’র বন্দর থানায় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানান প্রক্টর ড. মো. খোরশেদ আলম। কারো নিরাপত্তার শঙ্কা থাকলে তাকে কর্তৃপক্ষের বিশেষ ব্যবস্থায় পরীক্ষা দেয়ানো হবে।