পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণাঞ্চল মুখি সড়ক পথে যাত্রী পরিবহন বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে বিপর্যস্ত নৌ পরিবহন সেক্টরে ঈদ উল আজহায় ঘরমুখী জনস্রোতে কিছুটা চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। ঈদের আগের ৪ দিনের মত ঈদের দিন শেষ রাত পর্যন্ত ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুর হয়ে অর্ধ শতাধিক নৌযান দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন গন্তব্যে যাত্রী পৌঁছে দিয়েছে।
বেশীরভাগই নৌযানেই ছিল ধারণক্ষমতার আড়াই থেকে তিনগুণেরও বেশী যাত্রী। বরিশালমুখী নৌযানগুলো ঈদের আগের তিন দিনই ডবল ট্রিপে কয়েক লাখ যাত্রী পরিবহন করেছে। পদ্মাসেতু চালু হবার পরে দক্ষিণাঞ্চলের নৌ পরিবহন সেক্টরে যে ধ্বস নেমেছিল, ঈদকে কেন্দ্র করে তা কিছুটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হচ্ছে বলে আশাবাদী নৌযান মালিকগন।
বিগত দু বছর করোনা সংকটে দক্ষিণাঞ্চলে ঘরমুখী যাত্রী সংকটে দেশের অন্যতম বৃহৎ বিনিয়োগের নৌ পরিবহন খাতে চরম অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়। সে পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার আগেই পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় নৌ বাণিজ্যে মারাত্মক বিপর্যয় নেমে এসেছে বলে দাবী নৌযান মালিকদের।
এবারো অন্তত দশ লাখ মানুষ আপনজনদের সাথে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াত করছেন। অন্যান্য বছর এর প্রায় ৮০ ভাগ ঘরমুখী মানুষ নৌপথে যাতায়াত করলেও পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় একটি বড় অংশই নৌপথ ছেড়ে সড়ক মুখি হয়েছে। ফলে নৌপথে ঈদকে ঘিরে যাত্রী বাড়লেও তা তুলনামূলকভাবে কম।
তবে পদ্মা সেতু চালু হবার পরে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ের পরে দক্ষিণাঞ্চলের প্রবেশমুখে ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কের বিভিন্নস্থানে যানজটে জনদূর্ভোগ প্রকট আকার ধারণ করে। ফলে বাধ্য হয়েও অনেক মানুষই নৌপথ মুখি হয়েছেন।
একাধিক নৌযান মালিক জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার রাত পর্যন্ত বেশীরভাগ নৌযানই বরিশালে যাত্রী নামিয়ে পুনরায় ঢাকায় ফিরে ডবল ট্রিপে ঘরমুখী বাড়তি যাত্রীদের পৌঁছে দিয়েছে। তাদের মতে, শনিবার সকাল পর্যন্ত অনেক গার্মেন্টসে বেতন বোনাস না হওয়ায় শ্রমিকরা টাকা হাতে পেয়ে বিকেলে ঘরে ফিরতে শুরু করেন। সব বিবেচনায় নিয়েই নৌযান মালিকগন ঈদের আগের দিন, শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকা থেকে বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি রুটে প্রতিদিনই ডবল ট্রিপে যাত্রীদের পৌঁছে দিয়েছে।
রোববার রাতের প্রথম প্রহর থেকে শেষ রাত পর্যন্ত হাজার হাজার ঘরমুখী যাত্রী বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলে বিভিন্ন নদী বন্দরে পৌঁছে। ঈদের পরেও অন্তত এক সপ্তাহ বাড়তি যাত্রী পরিবহনের সুবাদে নৌ পরিবহন খাতের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা চলছে বলেও জানিয়েছেন নৌযান মালিকগন।
তবে ঈদকে কেন্দ্র করে অন্যান্য বছর বেসরকারি নৌযানে ভাড়া বৃদ্ধির প্রবণতা এবার সম্পূর্ণই অনুপস্থিত রয়েছে। পাশাপাশি যাত্রীদের সাথে নৌযান কর্মীদের আচরণেও পরিবর্তন লক্ষণীয়। নৌযানের মালিক ও কর্মচারীরা যাত্রীদের আবার নৌপথ মুখি করতে সম্ভব সব কিছু করছে এবং করবে বলেও জানিয়েছেন একাধিক নৌযান মালিক।
পদ্মা সেতু চালু হবার পরের প্রথম ঈদেই দক্ষিণাঞ্চল মুখি জনস্রোত সামাল দিতে ভাঙ্গায় এক্সপ্রেসওয়ের পরে বরিশাল পর্যন্ত ৯৫ কিলোমিটার মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক যানজটে যাত্রীরা নাকাল হয়েছেন।
৬০ বছরের পুরনো এবং মেয়াউত্তীর্ণ অপ্রশস্ত মহাসড়কটির বিভিন্নস্থানে বাজার ও দোকানপাটের সাথে নানা অবৈধ যানবাহনের ভিড়ে দিনরাত যানজট লেগেই ছিল। ফলে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে ভাঙ্গা অতিক্রমের পরেই যানবাহনের গতি ধীর হয়ে যায়। ঢাকা থেকে মাত্র ১৬৫ কিলোমিটার দুরের বরিশালে পৌছতেই ৫ ঘন্টারও বেশী সময় লেগে গেছে। দক্ষিণাঞ্চলের অন্যান্য গন্তব্য পৌছা ছিল আরো কষ্টকর। এসব বিবেচনায় এবারের ঈদেও দক্ষিণাঞ্চলের ঘরমুখী মানুষের একটি বড় অংশই নৌপথকে বেছে নেন।