বরিশালের বাকেরগঞ্জে শাশুড়িকে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় স্বামীর দায়ের করা মামলায় দেড় বছরের শিশু সন্তানসহ লাবন্য আক্তার (২১) নামে এক গৃহবধূকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১২ মে) দুপুরে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে শাশুড়ি নাজনীন বেগমকে হত্যার কথা স্বীকার করেন লাবন্য। পরে আদালত তাকে দেড় বছর বয়সী শিশু সন্তানসহ কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) সত্য রঞ্জন খাসকেল গৃহবধূর বরাত দিয়ে বলেন, ‘তিন বছর আগে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার কুশঙ্গাল গ্রামের মো. খলিল হাওলাদারের মেয়ে লাবন্য আক্তার ও বাকেরগঞ্জের রঙ্গশ্রী গ্রামের উজ্জলের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই তাদের দাম্পত্য জীবন কলহ লেগেই থাকে। একপর্যায়ে জীবিকার তাগিদে উজ্জল একটি চাকরি নিয়ে ঢাকায় চলে যান। ছয় মাস বা এক বছর পরে তিনি বাড়িতে আসতেন। আর গৃহবধূ লাবন্য গ্রামে শাশুড়ির সঙ্গে একই বাড়িতে বসবাস করতেন। কিছু দিন পর লাবন্য তার স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় থাকার কথা জানান তার স্বামীকে। কিন্তু উজ্জল তাকে ঢাকায় নিয়ে যেতে অস্বীকৃতি জানান। এমনকি দেড় বছরের শিশুর দুধ এবং খরচের টাকাও দিতেন না তিনি। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কলহ লেগেই থাকতো। পাশাপাশি শাশুড়ির সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় প্রায় সময় ঝগড়া হতো লাবন্যের।
ওসি তদন্ত আরও জানান, ঈদ উপলক্ষে গত ৩ মে গ্রামের বাড়িতে আসেন উজ্জল। এরপর গত ৮ মে তাদের মধ্যে একই বিষয় নিয়ে ঝগড়া হয়। এজন্য ওইদিনই শিশু সন্তানকে নিয়ে অভিমান করে বাবার বাড়িতে চলে যান গৃহবধূ। পরবর্তী ১০ মে ঢাকায় চলে যান স্বামী উজ্জল। এরপর থেকেই স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ রাখেন তিনি।
আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে গৃহবধূ আরও উল্লেখ করেছেন, স্বামী ঢাকায় যাওয়ার পরে তাকে প্রতিদিন একাধিকবার কল দিয়েছেন লাবন্য। ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার ও মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েছেন তিনি। কিন্তু কোনো কিছুতেই স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না।
এরপর ঘটনার রাতে শিশু সন্তানকে বাড়িতে রেখে লুকিয়ে স্বামীর বাড়িতে যান। সেখানে আলমারির মধ্যে গৃহবধূ লাবন্যের দুই হাজার টাকা রাখা ছিল। কিন্তু আলমারির চাবি ছিল শাশুড়ির কাছে। তার কাছে চাবি চাওয়া হলে তিনি তা দিতে অস্বীকৃতি জানান। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। সেই ঝগড়া থেকেই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
তবে গৃহবধূর জবানবন্দি অনুযায়ী— শাশুড়িই তাকে (লাবন্য) হত্যার জন্য ছুরি বের করেন। এসময় তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। তখন শাশুড়ির হাত থেকে ছুরি কেড়ে নেন গৃহবধূ। একপর্যায়ে ছুরি দিয়ে শাশুড়িকে গলা কেটে হত্যা করেন বলে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে লাবন্য। তাছাড়া এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত নয় বলেও আদালতকে জানিয়েছেন তিনি। এ কারণে লাবন্যকে নতুন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হচ্ছে না বলেও জানান বাকেরগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক সত্য রঞ্জন খাসকেল।
পুলিশ জানিয়েছে, শাশুড়ির সঙ্গে গৃহবধূর বাবার অনৈতিক সম্পর্ক ছিল বলে স্বীকার করেছে গৃহবধূ। তবে শাশুড়ির মদদে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন লাবন্য আক্তার।
পুলিশ কর্মকর্তা সত্য রঞ্জন খাসকেল বলেন, এ ঘটনায় নিহতের ছেলে উজ্জল একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে গৃহবধূ লাবন্যকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। এসময় লাবন্য আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। পরে আদালতের নির্দেশে গৃহবধূকে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গৃহবধূর সঙ্গে তার এক বছর ৬ মাস বয়সী শিশু সন্তান মুজাহিদুল ইসলামকেও কারাগারে পাঠানো হয়েছে। যেহেতু শিশুটি এখনও মায়ের বুকের দুধ পান করে।